অথবা

বিবাহ-রহস্য।

শ্রীকালীপ্রসন্ন ঘোষ প্রণীত |

টাঁকাঁ__আরদাঁণিটোলা, বান্ধব-কুটীর হইতে প্রীহরকুমার বন্থু কর্তৃক প্রকাশিত

শ্পাপাাচেতাশিসিী

১৮ই চৈত্র ১৩০১। 401 702865 26866, মূল্য ১২ এক টাকা।

ঢাকা-আরমাণিটোলা,- গিরিশ্যস্ে মুন্সি য়াহেচ্বসন প্রিন্টার কর্তৃক মুক্রিত।

পূর্ববঙ্গের আভরণ প্রীতিনিকেতন পরোপকারব্রত পণ্ডিত-রত্ ভিষক্-কুল-বরেণ্য শ্রীযুক্ত বিজয়রত্ব সেন কবিরগ্রন মহাশয়ের কর-কমলে ্রন্থকারের অক্রত্রিম প্রীতি ন্েহের উপহার |

বিজ্ঞাপন

মানবমমাজের মূলস্থত্র অথবা মুখ্য বন্ধনী বিবাহ। ফলতঃ)বিবাহ লইয়াই সমাজ, _বিবাহবন্ধনেই সমাজের কৃত্রিও স্থিতি; এবং বিবাহধর্মের ক্রমোন্নতিতেই লমাজের উন্নতি। ন্ৃতর!ং কথাটা সক- লেরই আলোচ্য। বান্ধব নামক সাহিত্যপত্রে বিবাহ বিবাহ- শৃঙ্খল-বন্ধ মনুষ্যজীবনের সুখ দুঃখ এবং আশ! আশঙ্কার নান1- রূপ মমালোচনাঁয় বহুকাল হইল কএকটি প্রবন্ধ প্রকটিত হইয়াছিল এই পুস্তকের এক অংশ সেই কয়টি পুরাতন প্রবন্ধ, এবং আর এক

ংশ “বিবাহ কত প্রকার? নামক একটি নূতন প্রবন্ধ। যে গুলি পুরাতন, মেগুলিও, নূতনের সহিত সামর্রদ্য-রক্ষার অন্থুরোধে, এত গরিবর্তিত পরিবর্ধিত হইয়াছে যে, সমস্ত পুস্তকথানিরে নৃতন- লিখিত বলিলেও, তাহা অসঙ্গত হয় না। কিন্ত প্রবন্ধ নূতন বলিয়া প্রবন্ধের কথাগুলিও যে নূতন, ইহা আমি 'সাহী করিয়া বলিতে পারি না যাহার চক্ষু আছে, সেই দেখে; যাহার অতি সামান্য বুদ্ধি আছে, সে দৃষ্টবিষয়ের যথামতি বমালোচন। করিয়া থাকে। আমি সমাজের অবস্থা দেখিয়া সামান্যতঃ যাহা বুঝিয়াছি, তাহাই ভিন্ন ভিন্ন দিক. হইতে দমালোচনা৷ করিয়া পাঠককে বুঝাইতে যত্তপর হইয়াছি। যদি এই প্রবন্ধগুলি পাঠ করিয়! একটি গাঠ- কও প্রাচীন আর্ধ্যের প্রীতি ভক্তিদূলক পবিত্র ধর্ম অথাৎ পর-চিতপ্প্রীণনের জন্য আত্মোৎ্নগের ভাবকে দাম্পত্যন্জীবনের

আদর্শ বলিয়া হয়ে অন্গতব করেন, আঁমি তাহা হইলেই, আমার এই পরিশ্রম সফল মনে করিব। পুরাতন প্রবন্ধ গুলির অধিকাংশই জানানন সরম্থতীর নামে পত্রস্থ হইয়াছিল। নূতন প্রবন্ধটিও, সেই হেতু, জানাননের নামেই পুস্তকে গ্রথিত হইল। ইহার একটুকু উদ্দেশ্য আছে। মনুষ্যমাত্রই একে এক শত। দে কখনও যোগী, কখনও ভোগী,কখনও বিরক্ত মন্ন্যানী, কখনও ব! বিষয়স্থ্খাসক্ত বিলাবী। ইহা মানবজীবনের নিত্যপরী- ক্ষিত কথা জ্ঞানানন্দ বিষয়বন্ধনশূন্য অথচ প্রফুল্লচিভ প্রমোদ প্রিয় পরিব্রাজকের চক্ষে যে ভাবে সমাজ সমালোচনা করিয়াছেন, সেই ভাবটির স্বাতন্ত্রাবক্ষার নিমিত্তই তাহার নামটা] রক্ষা করিতে হইয়াছে। অপিচ, এক দময়ে বঙ্গদেশের অনেক পাঠক জ্ঞাঁনানন্দী লেখায় বিশেষ দয়া! অনুগ্রহ প্রদর্শন করিতেন। তীহাদিগের সেই দয়! অনুগ্রহের সম্মানরক্ষাও নাম ব্যবহারের দ্বিতীয় উদ্দেশ্য এই পুস্তকের ভাষাসম্বন্ধেও এখানে দুই একটি কথা বলিব। বাজালায় আনন্দ মহ্তা,_শবভাব মেজাজ, রীতি রেওয়াজ, পরিচ্ছদ লিবাজ,- অপূর্ব আজগুবি,-এবং কল্পনা ও. খেয়াল এই উভয় প্রকার শবই ইদানীং একই অর্থে প্রায় মমান ব্যবহৃত হইতেছে মজা মেজাজ প্রভৃতি শব্দ, যাবনিক হইলেও, হিন্দু মুদলমানের একই দেশে অবস্থাননিবন্ধন, এইক্ষণ দেশীয় বাঙ্গালায় ব্যবহারে আপিয়াছে। কিন্তু সে ব্যবহারে, সময়, নঙ্গী বিষয়ের পার্থক্য অনুগারে, সর্বত্রই একটুকু বিশেষ পার্থক্য সাবধানতার সহিত পরিরক্ষিত হইয়। থাকে। বাগন্াহার প্রভৃতি

উরদ, গ্রন্থের বাঙ্গালা অনুবাদে শবনির্ববাচন বিষয়ে রূপ দাব- ধানতার কোন পরিচয় না থাকিরেও, হিন্দুসমাজের প্রচলিত বাঙ্গা- লায় সর্বদাই উহার পরিচয় পাওয়া] যায়। উপামন! আরা" ধনায় বড়ই এক আজগুবি মজা আছে, এমন কথা হিন্দু লিখিতে পাঁরে না, হিন্দুর রেখনীতে ইহা আইনে না। আর্জি গুরুদেবের মেজাজ বড় গরম দেখিলাম,_ অথবা আলুলিত-কুন্তলা শকুন্তগার সে অপূর্বব লিবাজ রেওয়াজ দেখিয়া! দেলটা বড় খোস হইল, ইত্যাদি বাক্য বঙ্গবাদী হিন্দুর নিকট বড়ই বিকট বলিয়। বোধ হয়। কারণ, উপাদন! আরাধনার ধারে মজা, গুরুদেবের ধারে মেজাজ, এবং তপোবনবাপিনী খধিকম্যার বর্ণনায় লিবাজ রেওয়াজ প্রভৃতি শব্দের সমাবেশ দেশীয় শতনহত্র লোকের সংস্কার বিরুদ্ধ। কিন্ত, মজা, মেজ|জ রেওয়াজ প্রভৃতি শব্ধ যে তাই বলিয়] বাঙ্গালার আর কোথাও স্থান পাইবে না, এমন কোন কথা নাই। আমি এই বকল এবং আারও বহুবিধ কারণে, কিবা উপ- ন্যাদী, কিবা উদ্দীপনার উত্তাল-তরক্ষ-বিলা'দী, "কোন এক প্রকা- রের ভাষাকেই বকল প্রকার বিষয়ের উপযোগী বলিয়া মনে করিনা। রোকে গাট্টা কবুণিয়ত প্রভৃতি" দলিল লিখে এক প্রকার শবে, এবং প্রেম, বিরহ প্রাণের অন্তর্নিহিত ছুঃখের গীত গায় আর এক প্রকার শব্দে ;_গুরুজনের সহিত কথোপ- কথনে অথবা পুত্র কি শিয্যস্থানীয় ব্যক্িদ্িগের নস্তাষণে এক প্রকারের শব্ধ ব্যবহার করে, এবং আমোদ-প্রমোদের বৈঠকে-- মমানব়ঙ্ক প্রণরিজনের সহিত নিঃদৃক্কোচ আলাপেআর এক

সূচীপত্র বিষয় বিবাহ (প্রলাপ) বিবাহ (ব্যাকরণ-রহদ্য) ঘোমটা মুখরা ভাধ্যা অথবা গৃহিণীরোগ বিবাহ কত প্রকার

ষ্ঠ

১৭

৩৬

৮৮

প্রমোদলহরী।

সপ্ন

বিবাহ।

(প্রলাপ।)

আমার পোড়া হৃদয় বুঝুক আর না বুঝুক, এবং যার যা বলিবার হয় বলুক, আমি বিবাহ করিব না। আমার আত্মাভিমানিনী, আত্মাভিসারিধী, উন্মাদিনী বুদ্ধি আমাকে আমার আত্মার বাহিরে অন্য কাহারও সঙ্গে বিবাহের বন্ধনে বন্ধ হইতে দিবে না| বিবাহ করিব কেন?- মুখের জন্যে ?-_আমার শ্গুখ এইক্ষণ আমার আপনার অধিকারে আছে, তাই ভাল। আমি সুখের লালপায় পরের হাতে প্রাণ তুলিয়া দিতে নম্মত ইইব না। কবিকল্লিত বিদ্যাধরী কিংবা বন-দেবী যেমন

গ্রমোদলহরী |

আয়াতরুর মূলে বধিয়া, আপনার আদরে আপনি গলিয়া_আপনার ভাবে আপনি ঢলিয়া, ঢল ঢল চিত্তে বলিয়াছে,_ 'আমি প্রাণ দেব না, গ্রাণ নেব না» আপন প্রাণে ভাল বাসি, আমার অভিমান-বিলাসিনী নিত্যবিসংবাদিনী, বিভ্রান্ত বুদ্ধিও, আপনার অনুরাগে আপনি উছলিয়া, মান*ভরে ফুলিয়1, এইরূপ বলিতেছে,_ আমি প্রাণ দেব না, প্রাণ নেব না, আপন প্রাণে ভাল বাকি, আঁমি আপন দুঃখে আপনি কাদি» আপন সুখে আপনি হাতি আমার এই প্রাণ আজও যেমন আমার রহিয়াছে,উহা চিরদিন তেমনই আমার রহুক | আমি উহ] কাহারও কাছে বাধাও দিব না» বিক্রয়ও করিব না; যেমন আছে তেমনই থাকুক | বাঁধা দিতে আমার বড়ই আপত্তি। বাধা দিলে কি বাঁধ! পড়িলে, এবং কুশীদজীবীর কাল খাতায় খাতকের ফর্দে নাম লিখাইলে; বন্ধকের বস্ত ফিরিয়া আবার পাঁও কি না পাও) চিরজীবনের জন্ক সুদের দায়ে ঠেকিলে। মংদারে অনেকেই বিক্রয়ের

চা

বিবাহ। | রঙ

মামে ভয় পাইয়া, আপনার প্রাণটি কাহারও না কাহারও কাঁছে দুচারি দিন,কি ছুচারি বছরের তরে বাঁধা দিয়াছে, এবং পরিশেষে বোহাগের সুদ যোগাইতেই একেবারে দেউলিয়া বনিয়া, মনের আগুনে পুড়িয়! মরিয়াছে এমন বেহিসাবি বন্দোবস্ত, এমন ক্ষতিকর ব্যাপারেও কি বুদ্ধিমান লোকের প্রতি জন্মিতে পারে?

*. কিন্তূ, বাধা দেওয়া যদি দোষের কথা, বিক্রয়ও নিতান্ত গুণের কথা নহে। বিক্রয় সে হিসাবে বরং অধিকতর অনিষ্টজনক | পৃথিবীর বণিকৃষম্প্রায় নোনা রূপা, তাঁমা কীসা, মণি মুক্তা প্রাবাল, অথবা বনের কাঠ, খনির অঙ্গার এবং সুই ন্ৃতা লতা পাতা লইয়! যেমন দোকান খুলিয়া! বে, কিংবা মাথায় পরা লইয়া ফিরি- ওয়ালার মত বাণিজ্যে বাহির হয়, আমি কি, আমার এত নাধের এই প্রাণথটি লইয়া সেইরূপ বেচা কেনার এক দোঁকাঁন খুলিয়া বসিব। অথবা প্রাণের পর্নর। মাথায় বহিয়া, দেশে দেশে, নগরে নগরে, এবং গ্রামে গ্রীমে গৃহে গৃহে ফিরি করিতে যাইব ? প্রাণ লইয়1" বাণিজ্য ! হা ধিক্‌ ! এই স্বার্থচিন্তাময় মনুষ্য-জগতে ইহার ক্রেতা কৈ? কয়জনে ইহার গৌরব বুঝে? কয় জনে ইহার মূল্য জানে? আর, বুঝিলে এবং জানিলেও উপযুক্ত

£ গ্রমোদলহরী।

মূল্য দিয়া ক্রয় করিতে প্রস্তত হয়, এই পৃথিবীতে তেমন উদারপ্রকুতি মান্য গণ্য মহাঁজনই বা জন আছে?

ধুলির মনুষ্য ধুলিরই মূল্য বুঝে এবং দোকানদারি- তেই মুগ্ধ হইয়া থাকে, প্রাণের মূল্য বুঝে নাঃ এবং যে রীতিমত দোঁকানদারি করিতে না জানে, তাহাকে জিজ্ঞানাও করে না। নাঁধারণ মনুষ্ের নিকট একটি ্ব্ণা্ুরি কিংবা একখানি ন্বর্ণবলয় যেমন মৃূল্যবানূ, একটা বান্মীকি কি ভবভূতির প্রাণ তাহার অর্ধ মূল্যের সমান কি না, সন্দেহ।

যাহার! প্রাণের বাণিজ্যে অগ্রনর, তাহারাও বাহি- রের আবরণ এবং আনুষঙ্গিক লাঁভালাভের যেমন অনু- সন্ধান করে, বাণিজ্যের প্রক্কৃত বন্তটি বথার্গ মূল্যবিশিষ্ট কি না, তাহা তেমন করিয়! দেখিয়া লয় না। তুমি একটি সরল, সুমধুর সুম্বাছু প্রাণ লইয়া এই ভবের বিপণিতে' ঘুরিয়৷ বেড়? কিন্তু উহার বহিরাঁবরণটি যদি গরিল্টি করা চকচ'কে না হয়, কেহই তোমার প্রতি ফিরিয়া চাহিবে নাঁ। তুমি মহত্ব মনন্বিতার প্রত্রবণ স্বরূপ আর একটি ম্বভাব-সুন্দর প্রেম-পূর্ণ প্রাণ লইয়৷ ফিরি করিয়। দেখ কিন্তু তুমি যদি উহা! লইয় জাত দোকান- দরের মত গলাবাঁজি করিতে ন৷ পার, এবং ব্যবসায়ি"

বিবাহ।

দিগের নীচৃত্তি নিকুষ্ট পদ্ধতিতে লাভের কথাটা ভাল করিয়া শুনাইতে রক্ষম ক্ক না হও, তাহা হইলে কেহই তোগার মধুর কথায় মন দিবে না।

ইহা। নূতন নহে। পৃথিবীর বাণিজ্য বরাবরই এই ভাঁবে চলিয়া আনিতেছে | এখানে গুণাগুণের বিচা- রের আশা বৃথা কত প্রতিতাশালী, প্রীতিমনোহরঃ প্রধান পুরুষ লজ্জায় দুঃখে অধোব্দন হইয়া অন্ধকারে পড়িয়া রহিয়াছে, এবং তাহাদিগের দুঃখ লজ্জা, যেন মুক্তার হারে পরিণত হইয়া, মর্কটের গলায় শোভ! পাইতেছে। কত কোকিল, কাঁক-কোলাহলে পরাভৰ পাইয়া, বনের প্রান্তে বিয়া বিলাপ করিতেছে কত ভূঙ্গ, ভেকের বিকট-ধ্বনিতে হারি মানিয়া, চিত্তের পরি- তাপে গুন্‌ গুন্‌ করিয়া উড়িয়া বেড়াইতেছে এবং কত প্রকারের কত গুণবান্‌ প্রার্থী, মণিম্ডিত গর্দভের নিকট বাণিজ্যের যেই বিচিত্র যাচাইতে , পরাজিত হইয়া, আপনার জ্বালায় আপনি হ্বলিতেছে|

* সংস্কৃত দাহিত্যে সক্ষম শব্দের ব্যবহার নাই ; বাঙ্গালায় আছে। বাঙ্গালায় উহা! বিশিষ্টরূপে প্রচলিত, অথচ ব্যাকরণ অনুমারেও শুদ্ধ। ভীববাচি ঘঞ্চ প্রত্যয়াস্ত ক্ষম. বিশেষ্য অর্থ-_ সামর্ধ্য। শক্তিমত্ত। | ম্মুতরাং সক্ষম সমর্থ এই ছুই শব্ধ একার্থ- বোধক। মাস্ততা ছেতু উপান্ত অকারের বৃদ্ধি নিষেধ।

প্রমোদলহরী।

আমি এই নিমিত্ই আমার বুদ্ধির অটল গরিমায় মনে মনে প্রায় অটল নংকল্প করিয়াছি যে; না হয় সুখ নাই হইল, আমি প্রাণ লইয় বাঁণিজ্য করিব না অনেকেই, লাভের তরে ব্যাপার করিতে যাইয়া,মূলধনে বঞ্চিত হয়| আমি দুঃখে থাকি তাহাই আমার সুখ। কিন্তু তথাপি এমন বিড়ম্বনার বাণিজ্যে বিড়শ্বিত এবং লাভের মধ্যে আমার মূলধনে বঞ্চিত হইয়া মূর্খ নীম কলাইব ন1এ আঁর বাণিজ্যের ফল?-যাহাঁরা৷ জিনিষের গৌরব বুঝে, তাহারাও কি উপযুক্ত মূল্য দেয়? যদি ক্ষণকা- লের তরেও কল্পনার দিব্য কর্ণ পাইতে পার? তাহা হইলে শুন ক্রেতারা কি বলে। কেহ বলিতেছে”_- ওহে প্রাণের বণিক! এন, এন। আমার কাছে বিশ্ব- বিখ্যাত পিপিরজিৎ” ফুলের মধু আছে। তুমি আমার কাছে এদ। পারিজাতও পরজিতের কাছে পরাজয় মানে। ষোগ-শান্ত্রে উহার এক নাম মায়, আর এক নাম মমতা “প্রকৃতিবাদে”উহারই অন্য নাঁম প্রাণজিৎ। গ্রাণিমাত্রই উহার অধীন; এবং উহাই তোমার সাধের প্রাণটির উপযুক্ত মূল্য আমি তোমায় ফোটা ফোটা! করিয়া সে মধুর ফুলের মধু খাওয়াইব, তুমি প্রাতিদানে আমায় তোমার প্রাণটি দিয়া কৃতার্থ হও কেহ বলি-

বিবাহ

তেছে,_এন এন, আমার কাছে তোমার প্রাণের পসরা লইয়া এস। তুমি বথা কেন বাজারে বাজারে ঘুরিয়া ঘুরিয়! পরিশ্রান্ত হইতেছ। আমি তোমায় প্রা খের মূল্যে একটুকু আদরের আতর এবং আবদারের এক খানি সাঁজানে! ডালি উপহার দিব, আর আমার এই আঁচলে তোমায় ঢাকিয়া রাখিয়া তোমার সকল “আশ! নফল করিব তুমি আমায় তোমার প্রাণটি দিয়! চরিতার্থ হও। তৃতীয় একজনে ব্লিতেছে,-ওহে আমার নিকট আদরও নাই, আবদারও নাই, ভ্রান্তির একখানি ভবছুঃখহারি দর্পণ আছে আমি তোমায় সে ভ্রান্তির দর্পণে একখানি অপূর্দম ছবি দেখাইয়া তত্ববিদ্যার সকল রহন্য শিখাইব। তুমি গুরুদক্ষিণার বিনিময়ে আ- মায় তোমার নামান্ত প্রাণটি দিয়! জীবনে সার্থক হও| চতুর্থ একজনে বলিতেছে,-আমি তোমায় ছবি দেখাইতে না পারিলেও, ত্রিতন্ত্রীর ছু গঞনের ন্যায় মিইকথার ম্ত্ু কুজনে, মোহিত রাখিব, তুমি আমায় তোমার প্রাণটি দিয়া গাঁণে নুধানিক্ত হও। পঞ্চম একজন ইহার কিছুই না বলিয়া দর্পস্ফরিত-কষ্ঠে দর্শ সহকারে বলিতেছে যে,_আমি তোমায় আমার পদ- ঘেবা করিতে অধিকার দিব, আর যদি তুমি ভক্তিমান্‌

গ্রমোদলহরী।

বণিক্‌ হও তোমার স্বুদ্ধি থাঁকে, তাহা হইলে কখনও কখনও তোমাকে বিনা মেঘে ঝটিকার ভীষণ-শোভা বিলোল-নৃত্য এবং মদিরার সরস-বিলপিত সজীব মুভি দর্শন করাইব, তুমি তোমার প্রাণটি ভক্তির ভাবে আমার পায়ে ফেলিয়। দিয়া নিশ্চিন্ত হও |

ক্রেতারা এমনই কিছু একটাই কহিয়। থাকে। কিন্ত হায়! কেহই এমন কথ! ভুলিয়াও কয় না যে, আমি, তোমায় প্রাথের মূল্যে প্রাণ দান করিব, তোমার প্রাণে আমার প্রাণ বিনিময় করিয়া প্রাণে প্রাণ মিশা- ইয়া ফেলিব,-তোমাঁতে আমি ডূবিয়া থাকিব, এবং আমাতে তোমাকে ডুবাইয়া রাখিব, আমাকে তুমি তোমার এঁ প্রাণটি দিয়া কিনিয়া নেও যেবাণিজ্যে কাচের মূল্যে কাঞ্চন বিক্রয় হয়, যদি সেই বাণিজ্যই প্রবঞ্চনা বলিয়া তিরক্কৃত হইতে পারে, তাহ। হইলে যে বাণিজ্যে.মধু মদিরা এবং আদর আতরের দরে মনুষ্যের অনস্তবিলানী অবিনাশী প্রাণ বিক্তীত হয়, তাহাকে প্রবঞ্চনার পর প্রবঞ্না, প্রতারণার পর প্রতারণ! এবং ছলনার পর ছলন। বলিয়! স্বণা করিব না কেন?

ইহার পর স্বাধীনতা | বণিগ্রৃতির ক্রয় বিক্রয়ের কথায় স্বাধীনতাকে কি একবারে হিনাবেই আনা হইবে

বিবাহ।

না? উহার কি কিছুই মূল্য নাই? যে স্বাধীনতাকে কবিতা ন্বর্গ-মুখ বলিয়া বর্ণনা করিয়াছে,__দেবতারা স্বর্গ হইতেও গরীয়নী জ্ঞানে পূজা করিয়াছেন, সেই স্বাধীনতার কি কিছুই গৌরব নাই ? মানিলাম তুমি মহাজনের ধর্ম জান এবং মহাজনি ধর্মের মহত্ব রক্ষার নিমিত প্রাণের বদলে প্রাণ বিলাইতেও প্রস্তুত আছ। কিন্তু তাঁহা বলিয়াই কি আমি যেমন তেমন একটা প্রাণের বিনিময়ে আমার প্রাণ-গত-ন্বাধীনতা রূপ অমূল্য সম্পদ জন্মজন্মান্তরের তরে তোমার নিকট বিক্রয় করিব? আমি আজ আমারই আছি, নর্বতোভাবে, সম্পূর্ণরূপে কড়ায় ক্রান্তিতে আমার আমায় কেহ ঠোঁটে করিয়াও উড়িয়। বেড়ায় না, এবং গলায় শিকলি বাধিয়া কিংবা নানারন্ধে। তা গাথ্য়াও টানিয়া লইয়া যায় না। আমি আজ কাহারও অধীন নহি। কেহই আমাকে দাঁর বলিয়া পদ-নখে স্পর্শ করিতে পারে না,

অথবা ওঠ বলিয়! উঠায় না%& এবং বসে বলিয়া! বসাইয়া

* অকৃতদার জ্ঞানাননদ এই কথণ গুলি সম্ভবতঃ শরংসরোদিনী নামক সথের নাটক পড়িয়! শিখিয়। ধাকিবেন যথা..."

“শিরৎ | তিন ঘণ্ট। ধরে জ্বালাচ্ছিলে কেন, রাক্ষলি? পাঠশীলের গুরুমহা* শয়ের মত “ওঠ বস' করাচ্ছিলে কেন, রাক্ষমি? “সরোজ। ( সহাস্যে ) তোমাকে আবার “ওঠ বম” করাজেম কখন। গুরু মহাশয় বা হলেম কখন।”

১০ গ্রমোদলহরী |

রাখিতে সাহস পায় না। আরব্য উপন্যাসের গিরি- ্রস্থবানী বৃদ্ধ যেমন হতভাগ্য দি্ধুবাদের ক্ষন্ধে সওয়ার হইয়াছিল, আশার স্কন্ধে কেহই তেমন সওয়ার হইতে পারে না, এবং মিশররাঁজ্যের মায়াবিনী যেমন রোমের এক অদীন-ত্ব বীর-পুরুষকে বড়শীতে গাথিয়া দিগৃদিগ- স্তরে ঘুরাইয়াছিল, কেহই আমাকে নেইবপ গাখিয়া দেই ভাবে নষ্কে সঙ্গে ঘুরাইতে রমর্থ হয় না। আমার এমন যে স্বাধীনতা”_-এমন যে সাত্রাজ্যছুল্লভ নৌভাগ্য, ইহ! আমি একটা কথার ছাদে কি চাহনির ফাঁদে পড়িয়া ক্ষতিলাঁভ গরণিয়া না দেখিয়া,_অগ্রপশ্চাৎ কিছুমাত্র না ভাবিয়া, অকারণে ডালি দিতে যাইব? তুমি আত্ম দাঁনে অনুগ্রহ করিয়। আমাকে কিনিয়া লইতে বম্মত হইয়াঁছ বলিরাই কি আমি, “রাজি রগ্বতে বহাঁল তবি- য়তে,” তোমার চক্ষে দেখিব, তোমার কর্ণে ুনিব, এবং কাব্যের রবরন কটু তিক্ত কষায় প্রভৃতি কাব্যা- তিরিক্ত ভোগ্বের ছয় রন তোমার জিহ্বায় চাখিতে আরম্ভ করিব? ইহারই নাম কি সুখের নার এবং মংঘার- সমুদ্রের সারভূত সুধা?

77648952728 * বড়শীর কথাটা রূপক নহে। বীর-চূড়ামণি এণ্টনী নত্য সত্যই ক্লিওপেট্রার বড়শী ধন্িয়। জলে ভানিয়াছিলেন।

" বিবাহ | ১১

[আজি আমার চিত্তের গতি অক্ুন অনীম,_ৃষ্ির অপরিনীম রাঁজ্যে এমন কোন স্থান নাই, এমন কোন বন্ত নাই, যাহা আমার ইচ্ছা ওআকাক্ষার অনধিগম্য। আমি কখনও ু্যলোকে, কখনও চন্দ্রলোকে, কখনও সমুদ্রে কখনও পর্বতে +_কখনও বিহঙ্গের পক্ষে এঁ সুনীল নভ- স্লে,-কখনও শফরীর মত দরোবরের শীতল জলে ! আমার প্রাণ কোথাও পিঞ্জর-বদ্ধ নহে,__কিছুতেই আমাকে কীধিয়া রাখে না এবং কিছুতেই আমার কল্পনার বিচিত্র- বিলানে বাঁধা দিয়া উহাকে এক স্থানে কি একই ভাবে আবদ্ধ করে না। দেখ,আজি আমি বদন্তের বমীর। বসন্তের সমীর যেমন ধীরে ধীরে প্রবাহিত হয়,_কুক্মের ্রন্ফুটিত মাধুরী লইয়া ধীরে ধীরে খেলা করে, আমিও সেইরূপ আমার উচ্ছৃঙ্থল প্রাণ উচ্ছল কল্পনার মৃদু সমীরে ধীরে ধীরে প্রবাহিত হই,এবং এই বিশ্বূপ বিনোদ- কাননের প্রস্ফুটিত শোভা লইয়া ধীরে ধীরে খেল1 করি। আবার দেখ, আজি আমি বৈশাখের ঝড়। কৈ, কোথায় সেই শাস্তি? কোথায় নেই মৃছুল-তরঙ্গ ?' আমি এইক্ষণ নিবিড়-ককষণ নীরদ-মালায় অঙ্গ ঢাকিয়া,__দামিনীর জ্বলন্ত রূপে অঙ্গ আবরিয়া৮_কণ্ঠে দামিনীর ত্বলম্ত হার পরিয়া, গৃহ উপথ্থহ, বন উপবন, লতাবিভান লভাবন্ধনে বদ্ধ

5২ গ্রমৌদলহরী।

উদ্ধত পাঁদ্প লইয়! ভীম-গর্জনে ব্যায়াম মল্সত্রীড়া করিতেছি, এবং সম্মুখে যাহা কিছু পড়িতেছে, তাহাই ভাঙ্গিয়া চুরিয়| কিংবা, উড়াইয়া নিয়া বিষাদের উন্মাদ- হাঁব্যে হানিতেছি। এই আমি গঙ্গার জল,কল-কল নাদে বহিয়া যাইতেছি”_জানি না কোথায় যাই এই আমি নিস্তব্ধ যামিনীর নিদ্রীলস জ্যোৎস্বা,_নদীর জলে ফুলের গায়ে কিংব৷ বৃক্ষের ছায়ায় নিদ্রাবেশে চলিয়া! পড়ি,_জাঁনি না কবে জাগিব ? আমার এই স্বাতন্ত্য সুখ, এই অনির্বচনীয় আমিত্ব একত্ব কি একটা অপরিজ্ঞাত অপরিজ্ঞেয় প্রাণের লোভে বিনর্জন করিব?

আমার এই আমিত্বই আমার কুগ্তকানন,_এই একভ্বই আমার পুষ্পিত ্রমোদ-বন | আমি এখানে বিশ্ববিস্থৃত হইয়া একাকী বিরাম করি, এবং বিশ্বের নকল প্রকার বাঘ-বিনংৰা্ধ চিত হইতে দূর করিয়া দিয়া একাকী আপনাতে ডুবিয়া থাকি। এখানে বিষয়ের কর্কশ কণ্ঠধ্বনি ঈধ্যার তুষানল প্রবেশ-পথ পায় না, এবং আশা নৈরাখ্যের বিষাদ-দোলাও এখানে দোলায়িত হয় না| এখানে আমি আপনাতেই আপনি নিত্যপ্রীত, আপনাতেই আপনি নিত্যন্থিত।-মান নাই, বিরহ

বিবাহ 5৩

মাই, প্রণয়ের কৃত্রিম কি অকৃত্রিম কলহ নাই ; সকল সময়ে এবং নকল ভাবেই একাকী আমি এক। ভোখ- রত মনুষ্য আমার এই অপার্থিব অমানুষ আনন্দের পরিচয় পায় না বলিয়াই কি আমি, এত চিন্তার পর, আমার এই নিম্মক্ত জীবনে উপেক্ষা করিয়া, বংশীমুগ্ধ বন-কুরঙ্গের মত, বাগুরায় আবদ্ধ হইব ?

তবে এক কণ্টক হৃদয় হৃদয়ের মত কুবুদ্ধির অধ্যা- পক, কুমতির অগ্রনায়ক, কুচক্তী কুট-ভাষী আর নাই। আমি পূর্বেই আভাষে ইহা জানাইয়াছি যে, হৃদয়ই আমার সকল আকাজ্জার আদি কারণ, সকল আশাঁর অন্তরায়। আমি হুদয়ের স্বালায়ই সতত অধীর থাকি, কিছুই করিয়া উঠিতে পারি না। মনে আমার কত বিষ- য়েই কত লংকল্প ছিল, হৃদয়ের উ্ত্তাপে উত্তেজনায় তাহা পুষ্পপত্রলগ্ন তুষার-কণার মত ভ্রব হইয়! বরিয়া পড়িয়াছে। এইক্ষণ তাহার চিহও আর নাই। মনে কত বিষয়েই কত কঠোর কামনা ছিল, হৃদয়ের আতট-বাহি তরঙ্গাঘাতে তাহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হইয় ভাপিয়! গিয়াছে। এইক্ষণ স্থৃতিপটেও তাহার পূর্বতন রেখাপাত দৃষ্ট হয় না। হৃদয়ের কিসে উন্মূলন হইতে পারে, মনুষ্য কি কোথাও দেই ছুরধিগম্য বিদ্যার মূল তত্ব শিখিতে পাইবে না?

১৪ প্রমোদলহরী |

হৃৎপিগুটাঁকে কেমন করিয়া নখে ছি'ড়িয়া পৃথিবীর উতর, দক্ষিণ, পূর্বঃপশ্চিম, এই চারি দিকে ছড়াইয়! দেওয়া যায়, পৃথিবীর কোন ক্যান্ট২৯্ককোন কোম্টই ণ'কি তাহার উপায় দেখাইবে না? আমার চক্ষু আমার নহে, সে হৃদয়ের আজ্ঞাবহ আমি যাহা দেখিতে নিষেধ করি, মে হদ- য়ের অন্ফুট আদেশে তাহাই দেখিবার জন্য আকুল হইবে আমার কর্ণ আমার নহে, মে হৃদয়ের দাস। হৃদয় যাহা শুনিতে বলে, আমার হত শানন-নত্েওঃ তাহাই বে তৃষ্ণা পুরিয় শুনিবে, এবং হৃদয় যাহ! শুনিতে বারণ করে, আমি শত বলিলেও তৎ্মম্পর্কে সে বধির রহিবে অধিক আর কি বলিব, আমি যে প্রাণটি লইয়া এত গৌরব করি,_যাহী এত যত্রে, এত সাবধানে অন্ত- রের অন্তর মধ্যে লুকাইয়া রাখিতে চাহি, তাহাও ফলতঃ হৃদয়ের | যেখানে হৃদয়,সেই খানেই আমার প্রাণ বৃক্ষ আর ছায়া, মুহুর্তেরও ছাড়াছাড়ি নাই।

হৃদয়, শ্বভাবতঃ অতি দুর্বল হইলেও, এই বলেই বলীয়ান্‌

* জঙ্দর্ণ দেশের বিখ্যাত দার্শনিক, এবং ইউরোপীয় বহু দ্বার্শনিকের গুরু ইনি ভক্তিপথের পথিক

+ প্রত্যক্ষবাদী সম্প্রদায়ের আদিপ্রবর্তক। ইহার মতে গরার্থ! আীতি এবং পরকীয় লুখের জন্য হদয়-দানই ধর্শের চনম সম্পদ

বিবাহ ১.

হইয়া, আমাঁর অভিমানকে উপহাস করে, অভিমান-বর্ধিত বুদ্ধিকে বালকের ক্রীড়ীকন্দুক বলিয়া অবলীলাক্রমে ধিক্কার দেয়, বিবেককে বাতাহত দীপ-শিখার ন্যাঁয় চঞ্চল করিয়া তুলে, কল্পনাকে প্রীতির পবিত্র পদ্মাসনে টানিয়া লইয়া যায়? এবংআমি যখনই একটু নিভৃতে বঘিয়। চিন্তার গাস্তীর্য্যে অটল হইতে চেষ্টী করি, তখনই "মনুষ্য তোমায় ' চিনি' এই বলিয়া, সু হাদি হারিয়া, আমার ভ্রকুটিভঙ্গির ভীষণতাতেও পর-মুখ-প্রেক্ষিতা পরাধীনতার ছায়া ফলায়। আমি এই জন্যেই এক এক বাঁর ভাবি যে, যদি অভীষ্ট-দাধনায় সিদ্ধি লাভ করিতে হয়, তাহা হইলে যেরূপে কেন হউক না, আমার পাঁষাণ-কঠিনা বুদ্ধির সহিত সর্বাগ্রে হদয়েরই একটা বিবাহ ঘটাইব এবং যদি তাহাও একান্ত অশক্য হইয়া উঠে_যদি হৃদয় আর বুদ্ধি বর-কন্যার বেশ ধারণ করিয়া একে অন্যকে বিবাহ করিতে কোন মতেই সম্মত না হয়, তাহা হইলে দ্বেখিয়! শুনিয়া, পরখ করিয়া, যে আমায় প্রসন্ননয়নে সম্ভাষণ করে, তাহা- কেই নমস্তন্যৈ নমস্তন্যে বলিয়া প্রীত প্রসন্নমনে এই হদয়টা একবারে, চিরজীবনের তরে, উত্নর্গ করিয়া দিয়া ফেলিব। উম্মুলন করিতে নাই বা পারিলাম, দান করিতে . আর ঠেকায় কে? এবং হৃদয়টা। যদি একবার দিয়া ফেলিতে

১৩ প্রমোদলহরী |

পারিলাম, তাহা হইলে আমার বুদ্ধি অভিমান এবং চিত্বনিহিত সংকল্পেরই বা আর বিদ্ থাকে কোথায় তখন এক বারের স্থলে অনন্তবার গর্ব করিয়া বলিতে পারিব যে, আমি আর বিবাহ করিব না। দেখ) এক- মাত্র হদয়ই আমার শক্ত হইয়াঃ আমাকে বিবাহের বন্ধনে বান্ধিতে চাহিয়াছিল; আমি সেই হৃদয়কেও এইক্ষণ বিনা মূল্যে বিলাইয়া দিয়া আমার মনোরাজ্যে নিক্ষণ্টক, নিরুপ-' দ্রব শক্রশূন্য হইয়াছি। আমি এইক্ষণ আর ভয় করিব কার ? এবং আমাকে আর উৎপীড়নই বা করিবে কে? আমার ভয় এবং- উৎপীড়ন, স্বালা যন্ত্রণা, সমস্তই এইক্ষণ পরের ঘরে হৃদয়ের সহিত হৃদয়ের যদি বিবাদ বাধে, সেখানে বাধিবে। আমার তাহাতে কি? আমি ইহাতে বরং যাঁর পর নাই মুখী হইব, এবং যে ভ্বালায় আমি ন্বালাতন রহিতাম, অন্যে তাহার ছিগুণ দ্বালায় দগ্ধ হইয়। ছুটি হৃদয়ই পুনরায় তাহার প্রাণ, মন স্বন্থদক্ষিণার সহিত ফেরত দেওয়ার অভিলাষে কাতর- স্বরে যাক্রা করিতেছে, ইহা দেখিয়া আনন্দে তামিব।

পপি

বিবাহ।

(ব্যাকরণ-রহদ্য। )

মংস্কৃত ব্যাকরণশাস্ত্র এক অতলম্পর্শ অপার জলধি। 'উহা৷ গুধু ব্যাকরণ কিংব| ভাষাবিজ্ঞান নহে। উহার অভ্যন্তরে ম্তবতি, নীতি” বাহিতা, অংগীত,যোগ, ভোগ।-এবং ইতিহানাদি আরও কত শাস্ত্রের কত নিগ্ঢুরহন্য নিহিত রহিয়াছে, তাহা চিন্তা করিলে আমার জড়বুদ্ধি বিন্ময়ে আরও জড়ীভূত হইয়া পড়ে। অনুনন্ধান করিলে জানা যাইবে যে, আধুনিক মমাজ- তত্বেরও অনেক গভীর কথাঃ উহার গভীর জলের অন্ত- স্তলে, উপলখণ্ডের ন্যায়। লুক্কায়িত আছে এখানে দুই একটি সুত্র তুলিয়া উদাহরণ দিব। বীহাঁর! ব্যাকরণে নিতান্ত বিদ্বেষী, ভাহাদিগেরও ভীত হইবার কারণ নাই। কারণ নুত্রগলি যাঁধারণতঃ সরল নুখ-পাঠা, এবং কখনও কখনও ঠিক কবিতাঁরই মত কোমল কামাগ্রদন। যথা,

১৮ গ্রমোদলহরী।

৫৫ দশ সমানাঃ 29

অর্থাৎ দশ জনকে লইয়। সমাঁজ, সুতরাং সমাজে দশ জনই সমমান ।৯

এই এক নুত্রেই সাম্যবাদের সারোদ্ধার শেষ- নিদ্ধান্ত অতি সংক্ষেপে পরিব্যক্ত হইয়া রহিল। ইহার পর আর, ঘামাঞজিকদিগের মধ্যে এক জনে আর এক জনের উপর বড়াই করিবে কি বলিয়া ? যাহার অর্থ আছে, তাহার হয় বিদ্যা নাই। যাহার বিদ্যা আছে, তাহার হয় অর্থ নাই। তুমি জাঁতিতে বড়, কিন্তু চরিত্রে ছোট; আর এক জন জাতিতে ছোট হইয়াও চরিত্রে বড়” চরিত্রের মহত্বে তোমার গুরুস্থানীয় কাহারও রূপ আছে গুণ নাই, কাহারও গু৭ আছে রূপ নাই। কেহ ঘোনার নিংহারনে বণিয়াও প্রকৃতির নীচতায় পিশাচ-নদৃশ ; কেহ কাঙ্গালের পর্ণকুগীরে বাস করিয়াও

* দুর্গনিংহকৃত বৃত্তি ব্যাখ্যা অবশ্যই অন্য প্রকার। কিন্তু কোন্‌ বৃত্তি কোন. ব্যাধ্য। স্থত্রের সহিত বেশী মিলে, তাহা রিচার করিয়া অবধারণ করা আমাদিগের পক্ষে অসাধ্য প্রবন্ধ- লেখক শ্রীমান, কল্যাণভট্ট পরিব্রাজক। দুর্গসিংহের পথ পরি- ত্যাগ করিয়া, ভাল করিয়াছেন কি না, পাঠক ক্রমে তাহার পরিচয় পাইবেন।

বিবাহ | ১৯,

জ্ঞানের জ্যোতি এবং প্রক্লতির উচ্চতাঁয় রাঁজরাজেশ্বর |

কিন্ত, যদিও সকলেই সমাজের খাথনিতে সমান, তথাপি পেই দশ জন পামাজিকের মধ্যেও নবর্ণত| অর্থাৎ বর্ধাঙ্গীন নজাতীয়তা কেবল যোড়াঁয় যোড়ায় | যথা,

« তেযাং দ্ধ দ্বাবন্যোন্যস্য সবর্ণো।”

অর্থাৎ, ইতঃপুর্কে যে দশ জনের কথা কথিত হইয়া আসিয়াছে, তাহারা দুইটি দুইটি করিয়া, যোড়ায় যোড়ায়, একে অন্যের সবর্ণ ।৯ঈ

এই য়ে যৌড়াবান্ধ যুগল ভাঁবের উল্লেখ হইলঃ ইহাই দাম্পত্য-ধর্মের মূলনুত্র | কেন না, জগতে দম্পতি অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীভিন্ন কে আর কার সহিত-যোড়াবান্ধা যুগল বলিয়। বর্ণিত হইতে পারে ? স্বামী স্ত্রী শুধুই পরস্পরের সমান নহে কিন্তু তাহারা মান অথচ.পরস্গরের অবর্ণ। হা মিল! তুমি কোথায়? তুমি স্বামী স্ত্রীর সাম্য এবং স্ত্রীজাতির সমান অধিকার বিষয়ে যত কিছু লিখিয়া গিয়াছ, ভারতের একজন বৈয়াকরণ যে, তোমার ' সহজ বতনর পূর্বে" এত অক্সাক্ষরে তাহা সুত্রে গীথিয়! গিয়া- ছেন, ইহা তুমি ব্বপ্ণেও জানিতে পাঁও নাই

* এবার হুত্রার্থে কোন গোলযোগ নাই। কারণ সুত্রে আছে দো দো" এবং তাহার ম্পষ্ট অর্থ ছুইটি ছুইটি করিয়া

.... গ্রমোদলহরী।

দম্পতির এই নাম্যনীতির মধ্যে আরও কত গৃঢ় কথ! আছে, তাহারও আলোচনা কর। স্বামী স্ত্রী পরম্পরের সমান, পরম্পরের বর্ণ, অথচ আবার তাহাদিগের মধ্যে পরম্পরে একটুকু বিচিত্র পার্থকা আছে। যথা,

“পুর্ব্ো হম্ব$, পরো! দীর্ঘই 18

অর্থাৎ সাংসারিক নসুখ-নম্পদের মকল কথায়ই স্বামী একটুকু ত্রম্ব এবং স্ত্রী একটুকু দীর্ঘ। স্বামীর কধ্বনি যেখানে নিখাঁদে পড়িয়া থাকে, স্ত্রীর মধুর কণ্ঠের মোহন- ধ্বনি, ষেখানে ধৈবতের ভুঙ্কারে উঠিয়া, প্রেমের বীণায় নানারনে বঙ্কার দেয়। নুত্রকার এখানে স্বামীকে ছোট বলেন নাই। কারণ, তাহা হইলে সে কথা বাম্যবাদের বুকে বাধিত। তিনি ছোট না বলিয়। হম্ব বলিয়াছেন। স্ৃতরাৎ হম্বাতা নিশ্চয়ই “ম্বর-পরক্রিয়া* বিষয়ক | স্থলে এইরূপ জিজ্ঞাস্য হইতে পারে যে, স্ত্রীর কণঠন্বরে এই রস-মধুরা দীর্ঘতা কেন ? ব্যাকরণে ইহারও উত্তর আছে। স্ত্রী দ্রবময়ী,_

* কলাণতট্ট এবার ছুইটি হৃত্র মিলাইয়! এক হুৃত্র করিয়াছেন। নব্য বৈয়াকরণের মধ্যে অনেকেই এই পথ দেগাইয়াছেন। নুতরাং ইহা! প্রচলিত রীতির বিরুদ্ধ নহে।

বিবাহ। ২১

6৫ স্ত্রী নদীবগু বঙঈ্গদেশের বিদ্যারদ্ব তর্কবাগীশ প্রভৃতি পণ্ডিতবর্ যে কেন গুধু ব্যাকরণের *্* অধ্যয়ন অধ্যাপনা লই- য়াই সমস্ত জীবন অতিবাহিত করেন, এই একটি সুত্রের অর্থবিব্ৃতিতেই তাহার প্ররুত অর্থ পরিষ্ফুট হইতেছে। সুত্রটি কেমন মনোজ্ঞ, কি মধুর ! স্ত্রী নদীবৎু অর্থাৎ স্ত্রী নদীর মত, অথবা স্ত্রী আর নদী রান |" প্রাচীন প্ডিতদিগ্নের মুখে শুনিতে পাই যে,এক দেশের এক রাজার ছেলেঃ তীহাঁর বিদ্যাভিমানিনী বিনো*

* এই ব্যাকরণের এক নাম কাতম্ত্, আর এক নাম কৌমার এবং ভূতীয় নাম কলাপ। কাতন্ত্র শবের অর্থ অল্প শান্ত, অর্থাৎ অন্ন বয়সের উপযোগী আমোদের কথা কৌমার মানে কুমারের যোগ্য অর্থাৎ যুব-জন-্পৃহণীয়। কলাপ শব্দের অর্থ অধিকতর রসাল। অর্থাৎ যাহ! পড়িয়া রদ-শাঘের চৌষটিকলায় বিদ্যা জন্মে তাহার নাম কলাপ। বীহ্ারা অঃ ইতি বির্জনীয়ঃ » এই স্ৃত্রের বৃত্তি পড়িয়াছেন, তাহারাই কথার সাক্ষী। কিন্ত রনিকতার অংশটা বৃত্তিতেই কিছু বেশী।,

1 ছুর্গসিংহ হৃত্রের যেধপ জটিল ব্যাখ্যা করিয়াছেন,ভাহা সাধা- রণ বুদ্ধির হ্থগম নহে। ম্মৃতরাংই কল্যাণক্কত ব্যাখ্যা প্রামানিক।

২২ গ্রমোদলহরী।

দিনীর কাছে শব্দার্থের বিচারে অথবা ন্বর-প্রীক্রিয়ার অনুচিত দীর্ঘতায় পরাভব পাইয়া, প্রাণত্যাগ করিবার সংকল্প করিয়াছিলেন, এবং তার পর তাহার গুরুদেব কট আঘিয়া তাহাকে এইরূপ কএকটি স্থত্র শিখাইয়াই বর্ব- শাস্ত্রে বর্ধজ্ঞ করিয়া তুলেন। কাহিনীটি ইতিহাসের চক্ষে নত্য কি না, তাহা বলিতে পারি না। কিন্তু, এই শেষোক্ত নুত্রটি যেরূপ হৃদয়গ্রাহী, রস-ভাব-গভীর এবং রহম্যপূর্ণ, তাহাতে ইহা! সহজেই অনুমিত হইতেছে যেঃ সেই পদাঘাত-পীড়িত “প্রণয়-ত্রীড়িত” রাজনন্দন, ইহা পাঠ করিয়া, আর কোন শাস্ত্রে পদ-প্রতিপত্তি প্রাপ্ত হইয়া না থাকিলেও, সমাজ-বিজ্ঞানের পুরাতন তত্ত্বে অতি সহজেই পণ্ডিত হইয়াছিলেন

স্ত্রী নদীবৎ! ,অহো কি জ্ঞান-গাভী্্য ! অহেো কি সুক্ষানুসন্ধান ! কিবা দার্শনিক কিবা বৈজ্ঞানিক, দকল- কেই এই নুক্রীর্থের নিকট মাথা নোয়াইতে হইতেছে। কে এই সুত্রের প্রতিবাদ করিবে? স্ত্রী প্রারতই নদীর

* গুরুদেবের মাম স্ধবন্মাচাধ্য। তিনি ভারতবর্ষে একজন বিখ্যাত বৈয়াকরণ বলিয়া পরিচিত ছিলেন। সর্ববর্ধাচার্ধয প্রণীত দুপ্রনিদ্ধ কমাগ ব্যাকরণ পূর্ববঙ্গের গৃহে গৃহে পঠিত পাঠিত হইয়া থাকে।

বিবাহ। হত

গ্বায়। কোথাও মৃদুবাহিনী, মৃদ্ধ-মধুর-হাঁসিনী, কুলু-কুলু- কলশনাদিনী; কোথাও তরঙ্ষ-ভঙ্গি-ভয়ঙ্করা তট-ঘাতিনী কুল-নাশিনী। কোথাও পবিত্র তীস্বরূপা, প্রসন্নলিলা ভাগীরথী। কোথাও প্রমোদ-লীলাময়ী ভোগবতী ; কো- থাও ক্ষীণ-তোয়া সরন্বতী $ কোথাও করতোয়া, কর্ম নাঁশা,অথবা তপতী ' কি ইরাবতী। যদি সুখেঃ যোহাগে * কিংবা হ্বর-তরঙ্গে ভানিয়া যাইতে চাও, তাহা হইলে ্ত্রীই নদী | যদি দুঃখে একবারে ডূবিয়৷ রহিতে চাও, তাহা হইলেও স্ত্রীই নদী কিন্ত,আমি এই দুইয়ের সাদৃশ্য বর্ণন লইয়া আর বৃথা শ্রম করিতে যাইতেছি কেন?

* সক্রেতিশের সহধর্িণীরে « করতোয়া” বলা যাঁইডে পাঁয়ে। কেন না, তাহার হৃদয়ে যখনই ক্রোধের তুফান বহিত, তখনই তিনি পতির গায়ে জল ঢালিয়া দিতেম। * কর্নাশা ঠাকু- রাণীরা আর এক শ্রেণির তীঙ্কারা গায়ে জল দেন না, কিন্তু উৎ* সাহের আগুনে জল ঢালিয়া কর্ম নাশ করেন।

1 বীহাদিগের সমন্ত কথায়ই সন্তাপের নুদীর্ঘনিংশ্বাস পরিলক্ষিত হয়, এবং ফাহারা বিলাপ পরিতাপের কথা ভিন্ন আর কোন কথাই ভালবাসেন না, তাহাদিগকে তপতী বলা যায় নাকি? ইরাবতী পাধাণ-ভেদিনী। পৃথিবীর কোথাও প্রন্কত ইরাবতীর অভাব নাই।

২৪ গমোদলহরী |

বাহারা ব্যাকরণের আলোকে বিজ্ঞান পড়িয়াছেন, অথবা বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাকরণের নুত্রার্থ বুঝিতে যদ্্ পাইয়াছেন, তাহারা নকলেই একবাক্যে ইহা স্বীকার করিবেন যে,্ত্রী নদীবৎ।

সত্রার্থে যেমন ব্যাকরণের অপূর্ব বৈভব, শব্দার্থের ব্যুৎ্পত্তিতেও ব্যাকরণের তেমনই অপরূপ গৌরব একমাত্র ছুহিতা শব্দের বুযুৎপত্ভিতেই এই কথার প্রামাণ্য. পরীক্ষা করিতে পার।

ব্যাকরণে ধাহাঁর সামান্য দৃষ্টি আছে, তিনিই জানেন যে, দুহিতা এই শব্দটি দুহ ধাতু হইতে নিষ্পন্ন, এবং দুহ ধাতুর অর্থ দোহন। ইয়ুরৌপের স্ুপ্রানিদ্ধ শাব্দি- কেরা, এই দুহ ধাতুর উপর দৃষ্টি রাখিয়া,এই রূপ ব্যাখ্য করিয়াছেন যে, যখন প্রাচীন আধ্যসম্তানেরা কৃষি- কার্যের উপরই সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিতেন, তখন তীাহাদিগের প্রাত্যেকেই গোস্বামী অর্থাৎবহুনংখ্য গোরুর অধিপতি ছিলেন। গৃহস্থ সমস্ত দিন ক্ষেত্রে কৃষিকার্য্য করিতেন, কন্ত। গৃহে থাকিয়া গোদোহনে ব্যাপৃত রহি- তেন। এই নিমিত্বই গৃহস্থের নাম ক্ষেত্রপাল, এবং এই নিমিত্তই কন্যার নাম ছুহিত1। প্রিয়তম জ্ঞানানন্দও দুহ ধাডুকেই দুহিতা শব্দের মূল বলিয়া স্বীকার করেন, কিন্তু

বিবাহ |

তিনি অন্যরূপে ধাত্বর্থের ব্যবহার দেখাইয়া থাঁকেন। তাহার মতে পিতৃকুলরূপ কামধেন্ুকে দোহন করাই দুহিতার প্রধান কাধ্য ; এবং যিনি পিতৃকুলকে যে পরি- মাণে অধিক দোঁহন করিতে পারেন, তিনিই মেই পরি- মাণে উত্কু্তর দুহিতা |% ইহার কোন্‌ অর্থ অধিকতর সঙ্গত, তাহা লইয়া! এইক্ষণ বিচার কি বিতগ্ডা করা “নিশ্রয়োজন | কারণ, ইহার যে অর্থই শ্বীকার কর, তোঁ- মাকে অবশ্যই ইহ। মানা লইতে হইবে যে, ব্যাকরণ- শান্তর সর্জতোভাবেই সমাজবিজ্ঞানের ভাষ্যপ্রদীপ।

বিবাহ সশ্বন্ধেও ব্যাকরণে এইরূপ অনেক মৌলিক ব্যাখ্যা! পাওয়া যাইতে পারে। বিবাহ কি?-বিবাহ কেন ?-বিবাহের শেষ পরিণতি কিসে ? এই মকল কথা লইয়া সকলেই ইতিহাসাঁদি অন্ধশাস্ত্রের, আলোড়ন করিয়! থাকেন; এবং ইহা নিতান্ত দুঃখের বিষয় যে, কেহই ব্যাকরণের উজ্্বল আলোকে এই জটিল ,বিষয়ের মূল-

* যাহারা পতিকুলরূপ কামধেনুকেও, ছুহিতার ভাবেঃপিতৃকুলবৎ দোহন করেন, তাহাদিগকে কি বলা যায় তাহ! ভউবৈয়াকরণ ভাবিয়া দেখিয়ছেন কি? এই বাঁর আর তাহার প্রাণের বন্ধু জ্ঞানা" নন্দের দোহাই দিলে চলিবে না। কথাটা একটু কঠিন হইয়া দড়াইতেছে।

$

২৩ গ্রমোদলহরী।

তত্ব পাঠ করিতে যত্দুপর নহেন | কিন্তু, আমার এইরূপ বোধ হয় যে, ব্যাকরণের সান্নিধ্যে উপস্থিত হইলে উল্লি- খিত নমস্যাত্রয়ের সুচারু মীমাংসা করিতে মুহ্ুর্তেরও বিলম্ব হয় না।

ব্যাকরণের মতে বিবাহ কি ?-না, প্রবাহ বিবাহে জীব-প্রাবাহ, বিবাহে সংসারপ্রবাহ এবং বিবাহেই সাংসা- রিক নুখ-ছুঃখের চিরপ্রবাহ | বিবাহ না থাকিলে, এই' ্টিগরবাহ প্রত্রবণেই শুকাইয়া যাইত, জীব জীবনের এবাহ নিরুদ্ধ রহিত, এবং বিশ্বজগতের পরমাণুপুঞ্জ উচ্ছ.- সবল আবর্তে অনন্তকাল নৃত্য করিত। সুতরাং বিবাহ আর জীবন-গ্রবাহ এক কথ |৯ বিবাহ ন1 থাকিলে, এই সংসারে লতা থাকিত না, পাতা থাকিত না, ফুল থাকিত না, ফল থাকিত নাঁ, বন থাকিত না, উদ্যান থাকিত না, বনেরৃক্ষ থাকিত না,উদ্যানে অস্কুরের উদ্দাম থাকিত না, জলে মাছ থাকিত না, আকাশে পাঁখী উড়িত না, সুতরাং

* পাঠকের ইচ্ছ! হইলে, তিনি ব্যাকরণের এই সমস্ত কথার সহিত ডারউইনের যৌন-নির্বশাচন বিষয়ক নব্য বিজ্ঞান অথবা বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে রচিত নুতন দর্শনাদি শান্ের নারনি্ধান্ত মিলাইয়া দেখিতে পারেন।

বিবাহ | ২৭

বিবাহই এই সংসার ঞ্ এবং নাংনারিক সম্পদ সৌন্দ- ধ্যের আদি প্রাবাহ। বিবাহ না থাকিলে প্রেমিকের প্রেম থাকিত না, বিরহীর বিরহ থাকিত না; কবির কাব্য থাকিত না, কবিতায় কুটিল কটাক্ষের কথা থাকিত না, পৃথিবীতে পরিবার-বন্ধন এবং পারিবারিক সুখ দুঃখ, হর্য বিষাদ কিছুই থাকিত না| নুতরাং বিবাহই ণ" * সুখ-দুঃখের চিরপ্রবাহ | উহা! কাহারও ভাগ্যে নিরব- চ্ছিন্ন ছুঃখপ্রবাহ এবং অনেকের ভাগ্যে সুখ-দুঃখের মিশ্রিত প্রবাহ | কিন্তু উহ যে সর্ধাংশেই একটি তর-তর- বাহী অথবা মন্থরগামী প্রবাহ, জ্যোতস্সার তরঙ্গে তরঙ্গা- গ়িত অথবা অন্ধকারের অবঘাদে আবৃত সজীব প্রবাহ, তাহাতে অগুমাত্রও বন্দেহ নাই |

বিবাহ কেন ? অর্থাৎ বিবাহের মূল উদ্দেশ্য কি ?-

* জাপনার কয় বিবাহ এইরূপ প্রশ্ন না করিয়া আপনাঁয় কর সংসার, এইবপ প্রশ্ন করাই প্রাচীন প্রথা ছিল। ক্ষিস্ত সংসার শব যে স্থলে সেই অর্থে বাবহৃত হয় নাই, ইহা বলা বাছুল্য।

1 এই প্রবন্ধে বিবাহ শব্ের অর্থ নিশ্চয়ই এক দিকে বিজ্ঞান আর এক দিকে প্রেম বিরহের অনুরোধে একটুকু সম্প্রসারিত হইয়াছে, এবং লেখক নিশ্চয়ই মহুর ব্যবন্থ। এবং কাব্যনাটকাদির বর্ণিত অবস্থাও চিন্তা করিয়াছেন

২৮ _. গ্রমোদলহরী |

না, নির্বাহ বিন! বিবাহে মনুষ্যের জীবন-নির্বাহের কিছুই সম্ভাবনা আছে কিনা, তাহা বিচার করিয়। দেখ | যাহাঁকে সাধারণ লোকে সাধারণতঃ জীবনযাত্রা বলে, আমি শুধু তাহারই কথা ব্লিতেছি না। কিন্ত পৃথিবীর অসাধারণ লোকের! অপাধারণভাবে যাহাকে জীবনের চরমলক্ষ্য পরমগতি বলিয়া! নির্দেশ করিয়া ছেনঃ তাহাঁরও নির্ধাহ বিষয়ে বিবাহই প্রধানতম সাধন, বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে কেন না, বিনা বিবাহে মনুষ্য- ভবের পূর্ণ বিকাঁশ এবং মনুষ্যোচিত প্রীতি, ভক্তি, মহত্ব, মাধুর্য, উদারতা দৌন্দ্য্য-প্রিয়তা প্রভৃতি ভাবের পরিপূর্ণতা লাভ অনস্ভব | সুতরাং, ইহা প্রমাণিত হই" তেছে যে, বিবাঁহেই মনুষ্যের নির্বাহ,-আশার নির্বাহ) আকাজ্ষার নির্কাহ, জীবনযাত্রার নির্বাহ, জীবনের উন্নতি গতি এবং নিত্য নুতন বিবর্ত পরিবর্তের নির্বাহ "

* পূর্বতন দার্শনিকদিগের মধ্যে প্লেটো, অধ্যাত্মবাদের আচার্ধ্য- দিগের মধ্যে ন্ুইভেনবর্গ এবং আধুনিক মনম্থিমমাজের অগ্রগণ্য চালক কোম্ট মিলের লেখা আর এই শেধোক্ত পণ্ডিয়ের জীবনচরিতের সহিত বিবাহবিধিয় গৃঢ়ততব তুলনা করিয়া দেখিলেই উল্লিখিত কথার মর্শার্থ ম্প্ উপলব্ধ হুইবে।

বিবাহ ২৯

বহুবিবাহ ধীহাদিগের জীবনের একমাত্র ব্যবসায়, অর্থাৎ যাহার! দালালি ঘটকাঁলি, কিংবা ওমেদারি চাটুকারি প্রস্ৃতি কোন রূপ সম্্ান্ত বিষয়কার্য্য, অথব! সভ্যমহলে অল্লীল কথার, নব্যমহলে অস্পৃশ্য মদিরার অভব্য ছেলেমহলে অন্তঃশোষক সুদের বাণিজ্য প্রাভৃতি কিছুই ন! করিয়। বিবাহের প্রনাদাৎ্ই পঞ্ধব্যঞ্জনে পরি- ৃপ্ত হইয়া থাকেন-_-এবং ধীহারা নিজ নিজ পত্বীদিগকে পত্তনীতালুক মনে করিয়! খাতার তাহাদিগের নাম ধাম আয় ব্যয়ের তালিকা রাখেন? তাহারা হয়ত সাধারণ মতেরই পোষকত1 করিয়া বলিবেন যে, বিবাহই যে নির্বাহ এই স্বতঃদিদ্ধ চিরপ্রনিদ্ধ কথার প্রামাণিকতার জন্য এত পুঁথি পত্র এবং এত লেখক ভাবুকের নাঁম করিবার প্রয়োজন কি? এই প্রশ্নটি আঁপাতিতঃ নিতান্ত সহজ বৌধ ন। হইতে পারে। কিন্তু আমি প্রথমেই ইঙ্গিতে ইহার উত্তর করিয়াছি এবং এইক্ষণ স্পষ্টতার অনুরোধে অধিকতর স্্ করিয়া বলিতেছি যে, নির্বাহ বলিলে তাহারা যাহা বুঝেন, জ্ঞানভ্রান্ত অনাধারণেরা তাহা বুঝেন না প্রাচীন শাস্তত্রান্তেরা ভার্য্যাকে শরী- রা্দাক্চ মনে করিয়া! জীবম নির্বাহের যেরূপ অর্থ করিয়া!

& “পরীরার্দা স্বতা জায় পুণ্যাপুণ্যফুলে সম11”

৩৯ . গ্রমোদলহরী |

গিয়াছেন। আমিও স্থলে প্রেমভ্রান্তিতে নির্বাহ শব্দের মেই অর্থই গ্রহণ করিলাম। যদি তাহা না করিয়া শাল বনাত, খাট পালঙ, গাড়ী ঘোড়া, বাড়ী ঘর, অথবা দক্ষিণ হস্তের দক্ষিণালাভকেই নির্বাহ বলিয়। স্বীকার করিতাম, তাহা হইলে আমি বিবাহের পরিবর্তে বেনেতি বস্ত লইয়! বণিগ্ুত্তি অথবা! বাঙ্গালা পুস্তকরচনা প্রভৃতি অন্য কোন অক্লেশনাধ্য অর্থকর ব্যবনায়ের, জন্যও ব্যবস্থা দিতে পারিতাম।

ইহার পর আর এক প্রশ্ন রহিয়াছে, বিবাহের শেষ পরিণতি'কিনে ? ব্যাকরণের উত্তর”_নংবাঁহে। সংবাহ শব্দের প্রচলিত অর্থ পাঁদ-মদ্দিন | ব্যাকরণের এই ব্যব- স্থাটি পাঠকবর্গের বড়ই অপ্রীতিকর জ্ঞান হইতে পারে। কিন্ত বাঁহারা বিজ্ঞ ,ও বহুজ্ঞঃ তাহারা নরলহৃদয়ে স্বীকার করিবেন যে, পৃথিবীর বহুস্থলেই যেরূপ বিবাহ এইক্ষণ গরচলিত রহিয়াছে, পাদমর্দনে কিংব! পাদবন্দনেই তাহার পরিণাম বিবাহে পত্রী পতির দানী, অথবা পতি পত্বীর দান। কেন না, বিবাঁহ বিষয়ে জগতে প্রেমভক্তির সুখ-মুন্দর সাম্যবিধি এখনও গচলন পায় নাই | যেখানে পত্রী পতির ক্রীতদানী। দেখানে পাদবেবাই তাহার প্রধান ধর্ম, এবং আহার বিহারের সঙ্গে নঙ্ধে প্রহার

বিবাহ ৩১

অথবা মংহারেইস্* তাহার শেষ দক্ষিণা | আঁর, জামাই- বারিকের চিড়িয়াখান। প্রভৃতি যে যে স্থলে পতিটি পত্ধীর ক্রীতদাদ, মেখানেও পাদলেহন, পাদদেবন পাদমদ্দিনই তাহার জীবনের একমাত্র কার্য, এবং মধ্যে মধ্যে প্রণয়- জলধির প্রলয়োচ্ছান স্বরূপ পদাঘাতই তাহার প্রধান দক্ষিণা যেখানে প্রীতির দেই পরমা গতি এবং প্রণয়- ভুনিত বাম্যব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা হয়, সেখানেও কি পাঁদনংবাহরূপ ক্রেশকর অথবা কমনীয় নীতির যম্যক্‌ উন্মুলন হইয়া থাকে? শাস্ত্রে এমন লিখে না। ভক্ত কি

জয়দেবের গীত-গোবিন্দে আছে,--

“মম শিরদি মগ্ডনং দেহি পদ্রপল্পবমুদারম্‌ |” * এখানে অনুপ্রাসরূপ উপনর্গের অনুরোধে প্রহারের সঙ্গে হারও আপনি আসিয়া পড়িয়াছে। যথা, উপনর্গেণ ধাত্বর্থো বলাদন্যত্র নীয়তে , প্রহারাহার-নংহার-বিহার-পরিহারব্চ।

কিন্তু যেখানে প্রক্কৃতিগত উপনর্গ একটু বেশী প্রবল, সেখা- নেও যে আহার রিহারের সঙ্গে প্রহার এবং প্রহারের নঙ্গে ংহার কি পরিহার আসিয়া উপস্থিত না হয়, এমন কথা সাহস পূর্বক বলিতে পারি না। ধীহায়। ইংরেজী বিন! বুঝেন না» তাহাদিগকে বলিয়] দেওয়! আবশ্যক যে, পরিহার মানে 7)15008,

৬২ গ্রমোদলহরী।

অর্থাৎ। আমার শিরের ভূষণ, .শিরে তুলি দেও প্রিয়ে রাঙা চরণ ভবভূতি রামচন্ত্রের প্রণয়বর্ণনায় লিখিয়া গ্িয়াছেন,_- “দেবি! দেবি! অয়ং পশ্চিমস্তে রামশিরসা পাদ- পহজন্পর্শঃ |” অর্থাং_-দেবি, রামের মাথা যে তোমার পায়ে বুষ্টিত হইত, আক্ধি এই তাহার শেষ নুতরাং ইহা নিঃমংশয়িতরূপে প্রতিপন্ন হইতেছে যে, কি ভাল অর্থে, কি মন্দ অর্থে, কি বিবাঁহবন্ধনের উত্কর্ষে, কি উহার অপকর্ষে, কি প্রীতির পূর্ণবিকাশে, কি প্রীতির অপূর্ণ আতামে, সকল স্থলে এবং সকল, অবস্থাতেই বিবাহের শেষ পরিণতি বংবাহে। যদি তুমি একটা বড়ই কিছু হও, তাহা হইলে তিনি তোমার পদ-বংবাহ করিতেছেন, এবং যদি তিনি একটা বড়ই

* এই টুকু পড়িলেই বোধ হয় যে, সীতার পদ-সংবাহন অথব! ভদীয় স্থুকোমল পদারবিনে শিরোলুষ্ঠন পুরুষ-প্রবীর শ্রীরাম" চন্দ্রের নিয়তকর্থের মধ্যে পরিগণিত ছিল। নতুবা! কবি এখানে পশ্চিয় শবের প্রয়োগ করিতেন না। পশ্চিম অর্থ শেষ।

বিবাহ। ৩৩

কিছু হন, তাহা হইলে তুমি তাহার পদ-ংবাহ করিতেছ। অথবা, যেখানে উভয়ে উভয়ের সমান, সেখানে উভয়েই উভয়ের সংবাহন্ুখে বিবাহের নার্থকতা সম্পাদনে যত্বু- বান আছ।

ব্যাকরণে আরও এই এক গুরুতর কথা জাঁনা- যাইতেছে যে, প্রাবাহ_নির্কাহব_বংবাহ এই যে বিবাহ- ধন্ধনের তিন ভাব অথবা তিন অবস্থা ব্যবস্থাপিত রহি- য়াছে, এই তিনেরই মূল ধাতু বহ অর্থাৎ বহন। সুতরাং ইহা মহজেই উপলব্ধ হইতেছে যে, যখন বিনা বাঁহনে বহন হয় না, তখন যেই তুমি বিবাহ করিলে, অমনই তুমি বাহন হইলে আগে বিধুক্ত এবং অতএবই উন্মুক্ত মনুষ্য ছিলে; বিবাহের পর-ক্ষণ হইতেই নিযুক্ত এবং অতএবই ভার-যুক্ত বাহন বনিলে।**আঁগে পাখীর মত উড়িয়া বেড়া- ইতে, জলের মত হাদিয়া খেলিয়া, ঢেউ তুলিয়া, চলিয়া যাইতে; বিবাহের পর-মুহূর্ভ হইতেই কিবা জীবনের প্রবাহে, কিবা জীবনযাত্রার নির্বাহে, সকল ভাবেই পরের ভার হৃদয়ে লইলে_আপনার নুখ-ছুঃখ এবং বর্তমান

“বনিলে * এই ক্রিয়াপদটি ত্রজভাষ| হইতে বাঙ্গালায় গৃহীত হইয়াছে। ইহা এইক্ষণ বঙ্গের প্রায় সর্বন্র প্রচলিত

৩ঃ গ্রমোদলহরী |

ভবিষ্যতের দুর্কৃহ ভাঁরের সঙ্গে সঙ্গে পরের মুখ-ছুঃখ এবং বর্তমান ভবিষ্যতের অধিকতর ছুর্দহ, দুর্বিষহ আর এক নূতন ভার মাথায় লইয়া, বংযারের কাটাবনে “সুখ- ক্রি” মনে, পাদ-চারণ করিতে আরম্ভ করিলে

এই অবস্থা নিতান্তই বাঞ্চনীয় কি? বাঞ্চনীয় না হইলে কলেই প্রবাহে প্রবাহিত হইয়া জীবননির্বাহের উপায় দেখিতেছে কেন ?' এবং যেখানে প্রীতির প্রবাহ কিংবা জীবনযাত্রার সাধারণ কি অনাধারণ নির্বাহ, এই দুইয়ের একও সম্ভবপর নহে, ্েখানেও পরকীয় পদ-মং- বাহ-সুখে আত্মসমর্পণ করিয়া আত্মাবগাঁননা করিতেছে কি জন্য? কিন্তু তথাপি কেন জানি না, এই প্রাবাহ অথবা নির্বাহ ইহার কিছুতেই আগার চিত্তের স্ফু্তি হয় না। জ্ঞানানন্দ ঘেমন তাহার প্রলাপে বলিয়াছেন যে, তিনি কখনই বিবাহ করিবেন না, আজি ব্যাকরণের বিজ্ঞাননুত্র সম্মুখে লইয়া আমিও বেই কথাই প্রকারান্তরে বলিতেছি,মামি বিবাহ করিব না। আমার মুখ্য ভয় নংবাহে। আমি কোন মতেই কাহারও বাহন হইতে রাঁজি নহি। অনেকে আপনি কাহারও বাহন না হইয়া! অন্যকে আপনার বাহন বানাইতে পারিলে বড়ই সুখী হইয়া থাকে কিন্ত নীতির নাম কাল*কুট কণিক-

বিবাহ ৩৫

নীতি | ইহা অধিকতর দোষাঁবহ | ইহা ম্বভাবতঃই পর-পেষিণী, পর-ঘাতিনী। ইহা অন্যের সুখ, স্বত্ব ্বাধীন-্ফূর্তির উপর দিয়া, পর্বত-অষ্ট শিলাখণ্ডের ন্যায়, ভাঙ্গিয়া চুরিয়াঃ গড়াইয়া৷ পড়িয়া, চলিয়া যায়; পরের ভাবনা ভাবিবার অবকাশ পায় না। অবকাশ পাইলেও ইহা পরের ভাবনা ভাবে না, পরের পোড়ায় পোড়ে না, পরের দুঃখে দ্রবে না। আমার অস্ত-পিপান্ু প্রাণ এই রূপ বিষাক্ত বিদ্বি্ বিধির পঞ্ষপাঁতী নহে। আমি আপনি অন্টের বাহন হইতে যত না অসম্মত, অন্যকে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনদন্বন্ধীয় ক্ষুদ্র ভাবের বাহন বানাইতে তদ- পেক্ষ! শত সহস্রগুণ বেশী বিরক্ত সুতরাং বিবাহ বিবাহের ব্যাকরণ আমার জন্য নহে | আমি ব্যাকরণের গিকাকার আমি আজিও যেমন একা'আছি, চিরদিনই এমনই একা রহিব ।__এবং একা থাকিয়া, এই ভাবে, এই ভবের হাটে, ব্যাকরণাদি বিবিধ শাস্ত্রের ঠীকা লিখিব।

পাস

ঘোমটা

দেশে ঘোমটাঁর ব্যবহার কত কাল অবধি ? ইতি- হাদে এই জিজ্ঞানার দদ্ুত্তর নাই। অনেকেরই এই রূপ ধারণা যে, হিন্দুর সুখ-স্বাধীনতাঁর সময়ে হিন্দু মহিলা- দিগের মধ্যে ঘোঁমটাঁর প্রচলন ছিল না;_যে অবধি ভারতে যবনের অত্যাচার, ভারত-ললনার মু মুগ্ধ মুখ- মগ্ডলেও দেই অবধিই ঘোমটার আবরণ

কথা অংশতঃ সত্য হইলেও আমার নিকট দর্কতো- ভাঁবে সঙ্গত বোৌঁধ হয় না। ভারতবর্ষে পূর্বেও যদি কোন না কোন রূপ ঘোমটাঁর ব্যবহার না থাকিবে, তবে অব- গুন অবগুষ্িকা প্রভৃতি শব্দ আদিল কোথা হইতে ? বিক্রমাদিত্যের, সমনীময়িক নাহিত্যে ইহার ভূরি প্রয়োগ ৃষ্ট হয়, ব্যামের মহাভারতে ইহার উল্লেখ আছে, এবং অনুমন্ধান করিলে তওৎপূর্ববর্তী গ্রন্থাদিতেও যে ইহা দৃষ্ট হইবে, তাহাতে দন্দেহ নাই |

কিন্তুঃ ইহাও অবধারিত যে, এখনকার ঘোমটা আর তখনকার অবগুধন এক রূপ কিংবা একই বন্ত নহে। এখনকার কুল-কামিনীরা, কোন কোন স্থলে সুর্য চনত

ঘোমটা ৩৭

তরু লতা এবং পিঞ্জর-রুদ্ধ! বিহঙ্গীর নিকটও ঘোঁমটা দিয়া থাকেন$ তখনকার কুল-কামিনীরা অপরিচিত বভা স্থল ভিন্ন প্রায়শ£ কোন স্থলেই মুখে অবগুঠন দিতেন নাঃ এবং ধাহাঁদিগের সহিত স্নেহ মমতার কোন রূপ সম্পর্ক কিংব। ভাল পরিচয় থাকিত, তীহাদিগের নিকট কখনও অবগুঠঠন দিয়া, শারদীয় উৎসবের অবশুষঠনার্তা একদলী-বধূর ন্যায় দণ্ডায়মান হইতেন না| তাহারা হজ প্রভৃতি গুরুজনদিগ্ের নিকট কন্যার ন্যায় থাকিতেন, দেবর ননান্দ ্রভৃতি ন্বনম্পর্কিত প্রিয় ব্যক্তিদিগকে ভ্রাতা ভগিনীর মত জানিতেন, এবং কি প্রতিবেশী, কি পৌরবর্গ, কি দূরাগত পুজ্য অতিথি, কি অভ্যর্থিত নাধু সঙ্জন, সকলের নিকটই নিরবগ্ুঠন কথোপকথন নির্্নক্ত বিচরণে অধিকার পাইতেন্ন। , কালিদাদের শকুন্তলা, দ্ুস্মস্তের জন-কোলাহল-পূর্ণ অদৃষ্টপূর্ক রাজসভায় আবিয়! অবগুষঠন * ব্যবহার করিয়া- * যথা বঙ্গান্থুবাদ__অভিজ্ঞান শকুস্তলে,-" প্রাজা | কে হন্দরী খষিদের মাঝে, অবগুষ্ঠে আবরি বদন? পাও্পত্র অন্তরালে ্লিপ্ধরুচি কিসলয় যেন! প্রতিহারী। চিনিতে না পারি প্রভু! ভাবে বুঝি পরম হুন্দরী।

গ্রমোদলহরী |

ছিলেন রত্য; কিন্তু সেই ছুগ্মন্ত যখন হার পিতার তপোবনে প্রথম উপনীত হন, তখন তিনি এবং তাহার সহচরীরা ছুগ্মন্তের সমুচিত আদর সৎকার করিতে কিঞিন্মাত্রও কু্টিত হন নাই। ভবভূতির জনকতনয়া, পাদপকণ্ঠলগ্ন পুঙ্পিত ব্রততীর ন্যায়, রঘুকুলপতির কণলগ্ন রহিয়াও, রাজদৃত, রাজর্ষি এবং দেবর লক্ষ্মণ সুমন্ত্ প্রভৃতি সুপ্রসিদ্ধ রাঁজপুরুষদিগের সহিত স্বচ্ছন্দ আলাপ করিয়াছেন। ইন্দুমতী, ফুল্লারবিন্দ-সরোবর-সদৃশী স্বয়ং বরদভায়, প্রফুল্ল রাজহৎসীর ন্যায় লীলা করিয়াও, অনি- ন্দিত রহিয়াছেন | দময়ন্তী দেব-প্রেরিত নিষধ-নাথের নিকট অক্নলানবদনে উপস্থিত হইয়া, তাহার প্রাত্যেক কথার প্রত্যুত্তর দিয়াছেন। পাঞ্চালী কুষদ্বৈপায়ন প্রভৃতি তেজঃপুগ্ধ তাপবুদিগের নান্লিধ্যেও রাজনীতির নানা কথা লইয়া বাদবিতর্ক করিয়াছেন, এবং পুর-নারীরা! পুজার ব্যক্কিমাত্রের দিকেই মুখ তুলিয়া চাহিতে পারি- য়াছেন।

যাহা হউক, দে অতীত কাহিনীর আলোচনা করা, আমার এইক্ষণকাঁর অতিপ্রেত নহে ভারতললনার বর্তমান ঘোমট! যবনাচাঁরের অনুকরণ, কিংবা যবন রাঁজাদিগের অত্যাচারেরই ফলম্বরূপ হউক, অথবা ইহা।

ঘোঁমটা | ৩৯

ভারতগমাজের ক্রমিক অধঃপাত হইতেই নমুক্ভূত হইয়! থাকুক, ইহাকে এখনও যত্ত্বের সহিত রক্ষা করা৷ উচিত কি না, ইহাই আমার জিজ্ঞান্য | প্রাচীন মন্প্রদীয়ের পুজ্য অপুজা, শিক্ষিত অশিক্ষিত, অনেকেই হয় এই প্রশ্ন শুনিয়। যুগপৎ স্বলিয়! উঠিবেনঃ এবং বিবিধ শ্রীব।ভঙ্গি সহকারে সমস্বরে বলি- , বেন যে, কুলের কামিনী ঘোমটা দিবে কি না, বিষয়ে বান্ধবের একজন সহযোগী পণ্ডিতের ব্যবস্থা লওয়ার আবশ্বাকতা নাই 1 আমি বলি, আবশ্যকতা আছে। আদৌ ঘোমটা কেন, তাহারই বিচার কর। ঘোমটা কি হিন্দুধর্্-নীতির বিশুদ্ধতা পৌরাণিক গৌরব রক্ষার জন্য? কথার আমার মনে বড় ছঞখ হয়, এবং ভুঃখের সঙ্গে হানি আদে। হিন্দ কি? যে হিন্দুধর্ম পূর্কে আর্জাতির মুকুটমনিস্বরূপ মহানুভাব আচাধ্যদিগের জ্ঞানোজ্জবল। ভক্তির অমল জ্যোতিতে নমস্ত জগৎকে আলোক দান করিত,._ ভগবৎপদাশ্রিত ক্ষত্র- বীরদিগের মগর্ক পদ-বিক্ষেপে পৃথিবীকে কম্পিত রাখিত, যে হিন্দুধশ্্ এক দিন সভ্যতার শিরোরত্ব রূপে শোভা পাইত, এবং যোগে ভোগে জদাঁচারের প্রবর্তন করিয়া, _নমাজে সর্বপ্রকার সুখময়ী সুনীতির পথ দেখা

3৩ গ্রমোদলহরী |

ইয়া, এবং সামীজিকতায় জীবনের সমস্ত কার্যে পৃথী- দুল্লভ পরার্৫থা প্রীতির সুধা ঢালিয়া, প্রকৃত দৌর- কান্তিতে বিলপিত রহিত, সেই হিন্দুধর্ম কি আজ ্রক্মাণ্ডের সকল ছাড়িয়া এবং প্রাচীন। কীত্তির সকল লীলায় জলাঞ্জলি দিয়! হিন্দুকুল-ললনার ঘোমটায় গিয়া লুক্কায়িত রহিয়াছে? তবে কি ঘোমটা লজ্জার অন্ন রোধে? ইহাও আমি মানিতে পারি না।

প্রচলিত লজ্জার প্রকার প্রতিক্কতি অনেক এবং উহা এক বিচিত্র বস্তু আমি বহু চিন্তা করিয়াও উহার অনন্ত চাঁতুরীর অন্ত পাই নাই, এবং কোন দিনও যে পাইব আমার মনে এমন আশা নাই ফলতঃ, কিসে লজ্জ! যাঁয়, আর কিনে লজ্জা! থাঁকেঃ তাহা মনূুষ্যের কথ! দুরে থাকুকঃ দেবতারও বুদ্ধির অগ্রম্য বিলাতের বিবি- দিগ্ের মধ্যে অনেকেই অর্দবনন। হইয়। 'অজ্ঞাত-চরিত্র পুরুষের নহিত প্রকাশ্য স্থলে তালে তাঁলে নাচিতে গাইতে পারেন, পূর্রাগের পুষ্পিত ছলনায় যে ভাঁবে ইচ্ছা দেই ভাবে এবং বীহাঁর সহিত ইচ্ছা! তাহার হিতই প্রণয়ের খেলা খেলিতে পারেন, এবং অশ্বারূঢ়া উগ্রচণ্ডার মত, অশ্বপৃষ্ঠে সমারূঢ়া হইয়া, পুরুষের পশ্চাৎ পশ্চাৎ অনা- য়ানে প্রধাবিত হইতে পারেন। ইহার কিছুতেই তাহা-

ঘোমটা 3৯

দিগের লজ্জা বিনষ্ট হইয়া যাঁয় না| কিন্তু তাহারা, অতি উতৎকট পীড়ার অনুরোঁধেও, পরের কাছে চরণতলের আবরণ ক্ষণকালের তরে উন্মোচন করিতে বাধ্য হইলে, অথবা দৈবদোষেঃ দেশে আদিয়া,পরের অধরে তামুল- রাগের রেখামাত্র দেখিলে,লজ্জায় একবারে মরিয়া যাঁন।

আমাদিগের মধ্যেও লজ্জার এই রূপ রস-বৈচিত্র্য এবং সর্বত্রই নেই বিচিত্রতার অখখ্য উদাহরণ সর্বদা লোকের চক্ষে ঠেকে যথা, স্ুুধীরবাবুর ছোট শ্বাশুড়ী বড় লঙ্জা- শীলা। সকলেই বলে, তিনি লক্জার শাপনে জ্যেষ্ঠ কি কনিষ্ঠ নহোদরেরও মুখের দিকে চাহিয়া কথা কহিতে সমর্থ হন না, এবং তাহার স্বামীর হিতও কোন দিন মুখ ভুলিয়া কথা কহিয়াছেন কি না, তাহা কেহ জানে না| কুলের কামিনী নিল্লজ্জা হইলে তাহার মনে এম- নই স্বণা “তরী যন্ত্রণা? উপস্থিত হয় যে, যদি তাহার পুভ্রবধূটি, সীমন্তে দিন্দুর দেওয়ার অভিলাষে, দর্পণের সম্মুখেও মুখের ঘোমটা ফেলিয়া বনে, তাহা হইলেই তিনি শিরে শতবার করাঘাঁত করেন, এবং কলির পাপাচারে আর লেখা পড়ার পাপময় অত্যাচারে পৃথিবীর লজ্জা সঙ্কোচ যে একবারে প্রক্ষালিত হইয়া গেল, ইহা চিন্তা করিয়া অতি গদ্দীদ কণ্ঠে বিলাপ পরিতাপ করিতে

৪২ গ্রমোদলহরী |

থাকেন। কিন্তু এদ্রিকে পাঁচ জনের মধ্যে অন্ন বাঞ্জ- নাঁদি পরিবেশনের মময় শান্তিপুরের দিগন্বরী পরিয় বাহির হইতে তাহার কষ্ট বোধ হওয়া দূরে থাকুক, বরং তাহাতে শরীরে মনে তখন তাহার আর আনন্দ ধরে না; গৃহের ভূত্যাদির উপর ক্রোধান্ধ পুরুষের মত অতি কঠোর কণ্ঠে তাড়না তর্জন করিতেও তাহার জিহ্ব। কখনও একটুকু বাধে না, এবং খিড়কীর ঘাটে কিংব। শয়নগৃহের সন্নিকটে পাড়ার স্ত্রী পুরুষ যুটা- ইয়া হাট মিলাইয়া বসিতে এই আধো রদ্ধবয়মেও বাঁষরগৃহের বিলাপিনী রাজিতে, _কৌতুকপ্রঙ্গে কথার ছড়া কাটিতেঃ অথবা বানিবিবাঁহের কাদাখেলা লইয়া, কমলকাননে করিণীর স্তায় প্রমত্ত ্রীড়া করিতে, তাহার চিত্ত কখনও কোন রূপ কাতরত| অনুভব করে না! বাড়ির বহিঃপ্রাঙ্গণে যখন কবিওয়ালার সেই নয়নহারি কপি-নৃত্য হয়, তখন তাহার কৌতূহল কলের উপরে তিনি তখন অমবয়স্কাদিগকে লইয়া! দখ করিয়া সখীনং- বাদ শুনেন, এবং যখন লহরের আরন্ত হয়, তখন তিনি তিরক্করণীর অন্তরালে চাতকীর ন্যায় তৃষিতচিত্তে উপ- বিষ্টা রহেন!

বিশ্ব্যবালার বড় পিমীও নিতান্ত লজ্জাবতী তিনি

ঘোমটা ৪৩

কিঞ্চিৎ পরিমাণে দেকেলে লোক। এখনকার কুৎসিত রীতি নীতি তাহার চক্ষে বিষ। ঘরের বি বউয়ের কথাই নাই, পাড়া প্রতিবেশীর মেয়েরাও তাহার ভয়ে নতত জড় বড় রহে। তিনি সর্বদাই ঘকলকে লঙ্জার কথ! লইয়া নানা দৃষ্টান্তে উপদেশ দেন শাসন করেন। এবং অতি ঘনিষ্ঠ কোন প্রাচীন প্রতিবেশীও যদি কার্ধ্যানুরোধে ভীহার নিকটে আজেন, তিনি ততক্ষণাৎই আজানুবিল" স্বিত ঘোমটা! টানিয়া সহ্ষ-কম্পিত স্ফুরিত কলেবরে এক পার্থ সরিয়া পড়েন কিন্তু তাহার শরীরে কামিনী- সুলভ ক্রোধ একটুকু অধিক। রূপ ক্রোধ যে নিন্দনীয়, এমন কথা বলিতে আমি সাহন পাইতেছি না আমার কেবল এই মাত্র বক্তব্য যে, তাহার হৃদয় সময়ে সগয়েই ক্রোধে ঈষৎ কম্পিত হয়। তিনি যখনই দেই কমনীয় অথচ ক্ষণস্থায়ী ক্রোধের ক্ষণিক উত্তেজনায় বাড়ির ভিতর ভঙ্কার দেন, বহির্বাটীর প্রাচীর চত্বরও তখন থর থর কীপিয়। উঠে, এবং গ্রাম্য পাঠণালার অনেক গজকণ্ঠ পণ্ডিত এবং ছুর্ধার বালকরৃন্দও তখন ক্ষণকালের জন্য চিত্রার্পিতবৎ স্তম্ভিত রহে | কেহ “পার্্যমাণে” * তাহার

* পার্ধামাণে এই শব্দটি সংস্কৃতমূলক্ষ নহে) কিন্তু ইহা বিদ্যমান

৪৪ . প্রমোর্দলহরী।

সহিত বিবাদ বাধাইতে যায় না। কারণ বকলেই মংসারে সন্তান সম্ততি লইয়। সুখে বান করিতে ইচ্ছা করে। তথাপি, যদি দৈবাৎ দুর্ভাগ্যবশতঃ তাহার সহিত সত্য নত্যই কাহারও বিবাদ বাধিয়া উঠে, তবে তাহারই এক দিনঃ কিংবা তীহারই এক দিন | তিনি তখন একে একমহজ্র এবং মৃদ্তিমতী মহিষানুররূপিণী। তীহার আলু: লায়িত কেশকলাগ তখন বঞ্চা-বাযু-বিতাঁড়িত বিক্ষিপ্ত কাদদ্বিনীর কম-কান্তি ধারণ করে, চক্ষে আগ্নেয় গিরির অভিনয় হয়, অঞ্চলের বস্ত্র কটিবন্ধনে পরিণতি পায়, বাহু- বল্পরী নাবিকের ক্ষেপণীর ন্যায় পুনঃ পুনঃ উৎক্ষিপ্ত প্রক্ষিপ্ত হইতে থাকে, চরণদ্বয় শন্যনিষ্পেষণদণ্ডের শক্তি মহিম! কাড়িয়! লয়, এবং ফেনায়মান বদনার- বিন্দ তটিনীর. ফেন-নমাচ্ছন্্ন শ্বেত পুলিনকেও বারংবার ধিক্কার দেয়। সকল কিছুতেই তাহার লজ্জার ব্যাঘাত হয় না, এবং অন্যকে লজ্জাহীন] বলিয়া তিরক্কার করি- বার বংশানুক্রমিক কায়েমি অধিকাঁরও ইহাঁতে কোন, ক্রমেই কমে না।

দৃশ্যমান প্রভৃতি শবের ন্যায় সংস্কৃতের অন্থকরণে--নংস্কৃত ছাদে গঠিত, এবং বঙ্গের সর্বত্রই সমান প্রচলিত |

ঘোমটা। ৪৫

কবি দার্শনিকেরা যাহারে লজ্জা বলিয়া বর্ণনা করেন, তাহ! আর এক সামগ্রী | তাহা বন্ততঃই অবলার অমূল্য আভরণ, এবং আভরণ অপেক্ষাও অধিকতর মৃল্য- বান্‌ প্রীতিপ্রদ, মনোহর আবরণ। তাহা! অবলার মুখচ্ছবিকে অতি মনোহর একখানি ছায়ার ন্যায় ঢাকিয়া রাখে; দৃষ্টির তীব্রতা চাঞ্চল্য বিনাশ করে, অথচ দৃষ্টিতে কেমন এক অপূর্ব মধুরী আনিয়! মাথিয়া দেয় )-- কথার কঠোরতাকে কোমলতায় দ্রবীভূত করায়ঃ এবং ক্রমশঃ বিকদিত, ক্রমশঃ পরিপুস্ট হইয়া, পবিত্রতারই আর এক মূর্তির মত অঙ্গে একবারে মিশিয়া যায়। নেই লজ্জা কি এই? যদি লজ্জার জন্যই ঘোমটার আবরণ, তাহা হইলে অগুবীক্ষণেরও অদৃশ্য, উর্ণনাভমুত্রের পরি- চ্ছদ কেন? শরীরের যে সকল অঙ্গ প্রত্যন্গ, আতরণের ছটায় প্রদর্শন করিতে পণ্যবিলাধিনীরও লজ্জিত হওয়া উচিত, সে সকল অঙ্গে আভরণ কেন? যে মৃদু মধুর মোহন হাষ্য অবলার বিশ্বাধরে কুসুমের অন্ফুট বিকা- শের ন্যায় সুন্দর দেখাঁয়,তাহাঁর পরিবর্তে এই অউহাস্যের আতঙ্কজনক হিল্লোল কেন? আর, পুরুষের পরাভব- যোগ্য শ্লেষপরিহাঁস,_পুরুষেরও অবশ্যপরিহার্য্য অনঙ্গত জামোদপ্রমোদ লইয়া উতমাহ আনন্দ, এবং যেখানে

৪৬ গ্রমোদলহরী।

মেখানে উল্লিখিতরূপ বিরোধের ঘনঘটা ভয়ঙ্কর বজ- গর্জন কেন?

এইক্ষণকাঁর প্রচলিত ঘোমটা অবলার লজ্জারক্ষার সহায় হওয়া দূরে থাকুক,আমার বিবেচনায় লজ্জার অমন ছন্মবেশ ছল-বিলামী শত্রু অল্প আছে। বাহার! কথার গুঢভাব গ্রহণে অসমর্থ, তাহারা, লোকাচারের পষ্ঠিল পরিণামে, মানবপ্রক্ৃতির মন্ার্থ পাঠ করিতে যত্বপর হইবেন; এবং গ্রিছুদীদিগের পুরাতন ধর্মাশান্ত্রে নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণের যে এক অতি পুরাতন প্রসিদ্ধ কাহিনী আছে, তাহারও তাৎপর্য পরিগ্রহে চেষ্টা করিবেন। দেশে ঘোমটাই দেই নিষিদ্ধ ফল, যেই রহস্যের রহল্য; এবং নিতান্ত দুঃখের বিষয় এই যে, আজও ইহা আর্য্- সমাজ বলিয়া! পরিচিত চিরপবিত্র হিন্দুনমাজের একা- দ্রকে কুলকালিমার মত ঢাকিয়। রাখিতে অধিকার পাইতেছে!

আমরা অনেক নময়ে অনেক গুদ্ধচারিণী পুর-কামিনীর চক্ষেও কেমন এক চটুলতা, হৃদয়ে কেমন এক তরল- তরঙ্গ এবং মনে কেমন এক কৌতূহলের আকুলতা দেখিয়া, অধোবদন হইয়া! রহি। প্ররুত প্রস্তাবে ঘোমটার কৃত্রিম আবরণই মকল কৃত্রিম বিভ্রমবিলাম কৃত্রিম লীলা-

ঘোমটা ৪৭

চাতুরীর প্রধান কারণ চক্ষুর স্বাভাবিক লালসা লোঁক- নিগ্রহে নিরুদ্ধ হয়; এবং নিরুদ্ধ হইয়া, অস্বাভাবিক বর্ে বিচরণ করে হৃদয়ের স্বাভাবিক প্রাবাহ গতিপথে বাধা পায়। এবং বাঁধ। পাইয়া অস্বাভাবিক গহিত পথে গড়াইয়া পড়ে। মনের অনিবার্য জ্ঞানতৃষ্া স্বাভাবিক আনন্দে বঞ্চিত হয়; এবং বঞ্চিত হইয়া অন্বাভাবিক আনন্দে তৃপ্তির অন্বেষণ করিতে থাকে আমরা অনেক স্থলে আবার অনেক সাধুর যুবজনের মধ্যেও পুরস্ন্দরী- দিগের প্রচ্ছন্ন রপরাশি দেখিবার মতি প্রবত্ভির পরিচয় পাইয়া বাথিত হই | একটুকু চিন্তা করিলেই প্রাতীত

যিনি অবলার চিত্র চরিত্র প্রদর্শনে দেশের সর্বত্রই অনা- ধারণ নিপুণ বলিয়া আদরের অতি উচ্চ আদন পাইয়াছেন,উলিখিত প্রসঙ্গে, তিনিও তাহার পরিণত বার্ধক্যে, ইন্দিরার ঘুখেঃ নিস্বোক্ত প্রকার সাক্ষ্য দিয়া গিয়াছেন।--

আমি অবগুঠনবতী, কিন্তু ঘোমটায় ভ্রীলোকের*ম্বভাব ঢাকা গড়ে না। ঘোমটার ভিতর হইতে একবার 'নিমক্ত্িত বাবুটিকে দেখিয়া লইলাম।”

পুনশ্চ,

পুরুষে বলিয়া থাকেন যে, অন্ধকারে প্রদীপের মত, অবগষ্ঠন

মধ্যে রমণীর কটাক্ষ অধিকতর তীত্র দেখায়।”

৪৮ প্রমোদলহরী |

হইবে যে, ঘোমটাই তাহার মূল। অবলার সুমার্জিত রুচি, সুশিক্ষিত শানন-ক্ষম চক্ষু, সামীছিক পবিত্রতার অদ্বিতীয় সুহৃৎ। যাহার! কিছুতেই লজ্জা পায় নাঃ কিছু- তেই আচারগত উচ্ছৃত্বলতা হইতে নিরৃদ্ব হয় না,এবং কি- ছতেই আপনাদিগ্ের অসভ্যতা অবজ্ঞাজনক ইতরত৷ অনুভব করিয়া বন্কুচিত হইতে শিখে না, অবলার অস্বৃতা- ভিষিক্ত পবিত্র দৃষ্টি তাহাঁদিগকেও তীব্র কশাঘাতের চ্ঠায় শানন করে। ঘোঁমট! আমাদিগের সমাজকে সেই প্রার্থনীয় শাননে বঞ্চিত রাখিয়াছে, এবং কতকগুলি ফুকবি, কুরসিক অরত্বতীর চিরবিদ্বেষী কুৎ্ঘিতচরিত্র নব্য নৌখীনের কাব্যালাপ, কৌতুকরন্দ এবং কথকতার এক ক্রীড়ান্থল হইয়া রহিরাঁছে।

অপিচ, ঘোমটা এক অপ্রারুত দৃশ্য, পুরুষের নিল্লজ্তা নিচুরতার এক আশ্চর্য নিদর্শন। মনুষ্যের চক্ষু এই জগতের শৌন্দর্যসাগরে সম্ভরণ করিবার জগ্ত, বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত রাঁখিবার জন্য নহে। দেখ, শরতের চন্দ্র তোমার নয়নপথের পথিক হইবার জন্য মেঘের অন্তরালে কতই কি খেলিতেছে, আর হানিতেছে। এঁ দেখ, মৃদুল- লুলিত মাধবী লতা» তোমার চক্ষু ছুটির সহিত প্রণয়ের আলাপ করিবার জন্য কিন্নপ ছুলিয়। দ্ুলিয়া পড়িতেছে,

ঘোমটা

কর-মন্কেত করিতেছে দেখ, তুমাঁর-ধবল ধবল- গিরির অভ্রভেদী শৃঙ্গ, তরুণ নুর্যের কনক-কাঁন্তিতে বিল- দিত হইয়া, ক্ষণে ক্ষণে কতই শোভা ফলাইতেছে, এবং উহার দে অপরূপ অথবা অনির্বচনীয় ঝল ঝল সৌন্দর্য্য তোমার চক্ষু কল্পনা উভয়ের উপর কি রূপ কার্য করিতেছে,উভয়কেই পৃথিবীর ধুলিকর্দম হইতে কত উদ্ধে কোথায় টানিয়া লইয়া যাইতেছে প্রকৃতির সহিত এইরূপ কথোপকথনই কাব্যের প্রক্কৃত অস্বত,এবং কাব্যের অম্ৃতপানেই হৃদয়ের উন্নতি বিকাশ | অবলার কি চক্ষু নাই ? যদি থাকে, তাহা হইলে ঘে চক্ষু কি এই অনন্ত বিশ্ব- সংসারে শুধু তোমার জ্কুটি-কুটিল মুখখানি দেখিবার জন্তই স্থষ্ট হইয়াছিল? বস্তৃতঃ, ঘোমটা অবলার চক্ষুকে বস্তরে আর্ত রাখিয়া, গ্ররূতির বিড়ম্বনা করে, অবলাহৃদয়ের উন্নতি বিকাশের পথে ভয়ানক অন্তরায় হয়, এবং হিনি প্রকৃতির প্রাণ-দেবতা৷ পবিত্রতার প্রত্রবণ, তাহার কর- লেখায়ও অপবিভ্রতার অপবাদ দেয়। যেখানে বাহিরে অবলার নম্মানরক্ষার সম্ভাবনা নাই, অবলা! পেখানে অন্তঃপুরেই অবস্থান করুক | অবলার বলাঁজ-মধুর চকিত চক্ষু যাহাদিগের চক্ষুর নন্নিহিত হইলেই ভয়ে উদ্বেজিত কিংবা ম্বণায় সংকুচিত হয়, অবল! তাদবশ ব্যাধ কিংবা

গ্রমোদলহরী

বিষ-দর্পের বিষ-দৃষ্টি পরিহার করিয়া চলুক | কিন্তু, তাই বলিয়া কি অবলা অন্তঃপুরের সুরক্ষিত শান্তিনিকেতনেও আপনাকে আপনি ঘোমটায় ঢাকিয়৷ কৃতিবাদী ভন্মলো- চনের কনিষ্ঠা ভগিনী সাজিবে ? দেশের লোক সুনীতি সুরুচির সম্মান করিতে জানে না বলিয়া কি শুধু অবলাই তাহার দণ্ড নিগ্রহ শাস্তি ভোগ করিবে?

সম্পাদকের মন্তব্য|

পরিব্রাজক কল্যাণভউ আমাদিগের পুরাতন বন্ধু। কিন্ত সত্যের অনুরোধে বলিতে হইতেছে যে, আমরা কোঁন দিনও তাহার সকল কথায় হৃদয়ের সহিত বায় দিতে সমর্থ হই নাই ভউ্টগ্রবর, পৌরাণিক সম্প্রদা- য়ের লোক হইয়াও, পরিবর্তে অনুরাগী প্রমোদ-প্রিয়। তিনি যাহা লিখেন, তাহার কোন্‌ কথা তাহার অন্তরের কথা,_কোন্‌ কথায় তাহার প্ররুত ব্যথা, তাহা আমর! নকল নময়ে সম্যক পরিগ্রহ করিতে পারি না

কল্যাণভট কিংবা তাহার আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেহই কখনও বিলাঁত যাঁন নাই সুতরাং বিলাতী ললনা- দিগের পূর্বরাঁগ, প্রণয়খেল। এবং নৃত্য গীত প্রভৃতি ক্রীড়া গ্রণঙ্গে তিনি যাহা লিখিয়াছেন, তাহ শুনা কথ!

ঘোঁমটা। ৫৯

শুনা কথাঁর উপর তর্ক বিতর্ক, এবং বিচাঁরমল্লতা শাস্ত্রীয় বিদ্ধান্ত আমাদিগের নিকট ভাল লাগে নাঃ এবং শুন! কথার উপর ভর করিয়া জাতিবিশেষের কুল-কাঁমিনী- দিগকে প্রকারান্তরে লজ্জাঁহীন৷ বলিয়! বিদ্রপ করা আমাদিগের নিকট সঙ্গত জ্ঞান হয় না।

বিলাঁতে নৃত্যাদির যেরূপ প্রচলন আছে, তাহা! কোন কোন অংশে নিতান্তই জঘন্য বাহারা তুক্ত- ভোগী * তীহারা স্বয়ংই ইহা স্বীকার করেন। তীহা- দিগের স্বহস্তচিত্রিত কাব্য নাটকাঁদিতেও সে নৃত্যের যেরূপ বর্ণনা দৃষ্ট হয়, তাহাতে ম্বভাবতঃই মনুষ্যের বিরক্তি জন্মিতে পারে। নৃত্যের পরিণামফলও সময়- বিশেষে নর্ধনাশেরই প্রশস্ত সোপান কিন্তু বিলাতে প্রণয়িদিগের মধ্যে পরিণয়ের পুর্বে পরস্পরের যে রূপ উপাসনা হইয়! থাঁকে, নেই পূর্বরাগের আনন্দময় অভি- নয়কেও নকল স্থলে এবং অকল অংশেই নৃত্যের মত জঘন্য বলিয়! নির্দেশ করিতে আমাদিগের নাহন জন্মে না কবি কহিয়াছেন,_যখা কুমারসম্তবে”_

ইয়েষ সা কর্তমবন্ধযরূপতাং নমাধিমাস্থায় তপোভিরাজনঃ

&২ গ্রমোদলহরী |

অবাপ্যতে বা কথমন্যথ। দ্বয়ং তথাবিধং প্রেম পতিশ্চ তাদৃশঃ | অর্থাৎ রূপের সাফল্য সিদ্ধি লভিবার মনে, বংকল্প করিলা সতী তপস্যাসাধন, বিনা তপে, কার কবে, ঘটে ভুবনে অইরূপ প্রেম আর পতিও অমন ইহাতে দেখ! যায় যে, পরিণয়ের পূর্বে প্রণয়ের সাধন! আধ্্যজাতির পুণ্যময়ী কল্পনারও আরাধ্য বন্ত ছিল তবে নে দাধনায় আর এখনকার সাধনায় পার্থকা বড় বেশী। দ্বিতীয়তঃ, ভট্ট মহাশয় অকৃতদার ব্যক্তি। অকুতদার ব্যক্তি অবার লজ্জা, সঙ্কোচ “হ্রী যন্ত্রণা” বিষয়ে অভিজ্ঞের মত কথা৷ কহিতে পারে কি না, ঘে বিষয়েও আমাদিগের কিঞিৎ অংশয় আছে। তবে ইহা আমরা সাধারণতঃ অক্ষুন্বচিতে বলিতে পারি যে, হিন্দুষমাজে হিন্দুর পুরাতন বিশুদ্ধ রীতি নীতি পুনঃ গ্বন্তিত হউক, ইহা আগাদিগ্নেরও একান্তিক কামনা +-আর, দেশে ঘোমটা এইক্ষণ যে রূপপ্মত্তি লাভ করিয়া যে ভাবেব্যব- হুত হইতেছে, তাহ পূর্বতন- বৈদিক কিংবা পৌরাণিক

ঘোমটা ৪৩

হিন্দুর প্রীতিসম্মত কি না, ইহা আমাদিগের বিবেচনায়ও আলোচনার যোগ্য কথা | ইহ! সত্য যে, পুর-ললনার ঘোমটাঢাঁকা মুখখানি কিয়দংশে নিষিদ্ধ ফলের লক্ষণা- ক্রান্ত। কিন্তু নিষিদ্ধ ফল মাত্রই কি জীবের নিরতিশয় স্গৃহণীয় | তাহা হইলে লজ্জার আর স্বাভাবিকতা৷ অথবা বার্থকতা থাকে কিনে? মনুষ্যের দয়া ধর্ম এবং প্রেম প্রভৃতি পবিত্র ভাবনিচয় যেমন যুগ্ন-যুগান্তব্যাপী ক্রম- বিকাশের পরিণাম, অবলাঁর লঙ্জাঁও দেইরূপ অসংখ্য যুগ- ব্যাপী আচার অনুষ্ঠানের অবশ্যন্তাবী ফল। ভট্ট মহাশয়ও ইহা স্বীকার করেন যে, লঙ্জাই অবলার প্রকৃত আবরণ» প্রক্তিনিদ্ধ আভরণ | নে লঙ্জাকে বদি কোন কারণেও বিদ্িত হইতে দেওয়। হয়, তাহ। হইলে অবলাম্বভাবের অমল-মাধূ্য্য কি অবলম্বন করিয়া রিকর়িত হইবে? অপিচঃ হিন্দু ভিন্ন পৃথিবীর অন্য অন্য জাতির মধ্যেও অব- গুঠন-ব্যবহার নানাবিধ প্রথায় প্রচলিত আছে ইহাতে কি অবগ্ঠনের রহিত অবলাঁজনোচিত লজ্জার একটুকু স্বাভাবিক সম্বন্ধই নুচিত হয় না? যাহা হউক, কথাটা! গুরুতর কথাটা লইয়৷ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বাদ প্রতিবাদ

এব্‌ৎ তর্ক বিতর্ক হওয়া একান্তই বাঞ্ছনীয়।

মুখর ভার্যা। অথবা গৃহিণী রোগ

প্রিয় বান্ধব $

আপনার আর কৌন গুণ থাকুক আর না থাকুক, নামটি বড় মধুর | আমি নামটি শুনিয়াই আপনাকে এক জন সহৃদয় লোক বলিয়া ঠাউরাইয়া রাখিয়াছি, এবং মন খুলিয়া মনের একটি নিগুঢ় বেদনা আপনার কাছে আজ প্রকাশ করিতে উদ্যত হইয়াছি। যদি আপনার হৃদয় মন প্রকৃত প্রস্তাবে আপনার নামের অনুরূপ হয়, তবে দয়া করিয়া উপদেশচ্ছলে আমায় ছুটি কথা বলিয়৷ বাধিত করিবেন। আপনার চক্ষু পরের দুঃখে কখনও আর হয় কি?

* আঘূর্বেদে “' থহণী” রোগের বর্ণনা আছে, “গৃহিণী” রোগের কোন উল্লেখ দৃ্ট হয় না। ্থৃতরাং, পাঠক অবশ্যই বুঝিয়া- ছেন যে, এই দুই রোগ এক লক্ষণীত্রান্ত নহে।

$ এই পত্রখানি বান্ধব নামক সাহিত্যপত্রের সম্পাদককে সন্বো- ধন করিয়া! লিখিত হইয়াছিন।

মুখরা ভারা

আদরের ধন কাহাকে বলে, তাহ! অবশ্যই আপনি জানেন। আমি শৈশবে সত্য মত্যই আমার পিতা মাতার বড় বেশী আদরের ধন ছিলাম আমি যখন যাহ! চাহি- তাম, অতি ছুল্লভ বন্ত হইলেও তৎক্ষণাৎই তাহ? আমার করায়ত্ব দেখিয়া আনন্দে ভাসিতাম। ছেলে বেলায় ঘক- লেই খেলিয়! বেড়ায় আমি খেলায় একটু বেশী মাতো- যারা ছিলাম। খেলার ছলে পাঁড়ার ছেলেদের উপর কখনও কখনও নিতান্ত অনঙ্গত অত্যাচার করিতাম। কিন্তু তাহারা আমার নামে নালিশ করিবার সুযোগ পাইত না নালিশ করিবে আমার পিতা মাতার কাছে। আমার পিতা মাতা, নালিশের আগেই; তাহাদিগকে মিঠাই মগ্ডা দিয়া, পরিতুষ্ট করিতেন। মনুষ্য, কিবা শৈশবে, কিব! বা্ধক্যে, সকল বয়সেই, কোন না কোন রূপ মিঠাই মণ্ডার জন্য, বহু প্রকারের নিগ্রহ সহ্য করিতে প্রস্তত। কোন কোন ছেলে মিঠাই মণ্ডার লোভে আমাকে পাচ কথা কহিয়া একটুকু উত্তেজন। দিত, এবং আমি উত্তেজিত হইয়। অত্যাচার করিলে, সাধ করিয়া তাহা সহিয়া লইত। এখন বংসারে প্রবিষ্ট হইয়া দেখি- তেছি যে, অনেক বড় বড় বিষয়ী লোকও, ঠিক এই নীতিরই অনুসরণ করিয়া॥ বাহেবদিগের কাছে পরিণামে

৫৬ প্রমোদলহরী

পুরস্কারের লে।ভে, প্রথমে পদাঘাত প্রাপ্ডিরই সুযোগ অন্বেষণ করেন।

খেলার নেশা না ছুটিতেই আমি আর এক নেশায় ডুবিয়া গেলাম | আমার বিদ্যারন্ত হইল। আমিকখ পড়িতে আরম্ভ করিলাম তখন খর পুঁথি, কখর তান এবং কখর নানা প্রকার নৃতন নূতন ছবিতে আমার থাঁকিবার ঘরটি ভরিয়া গেল, এবং আমি কথ লেখাকেও নৃতন এক প্রীকার খেলা মনে করিয়া তাহাতে বিশেষ প্রীতি লাভ করিলাম পিতৃদেবের সমবয়স্কের। ইহা দেখিয়াই বলিয়া উঠিল যে, “এ বাঁলক প্রতিভার অগরিস্ফুলিক্গ ।” পিতা তীহাঁদিগের কথায় প্রকৃতই যার পর নাই প্রীত হইলেন, এবং আমার উপযুক্ত শিক্ষার জন্য একটি “প্রাইবেট টিযুটর” নিযুক্ত করিয়া দিলেন

প্রাইবেট টিযুটর মাত্রকেই অনেক রকম বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হয়। যিনি অনৃষ্টদোষে আমার গ্রাইবেট টিমুটর হইলেন, বোধ হয় তাহাকে কোন কোন বিশেষ বিষয়ে একটুকু বেশী বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হইল তিনি আমাকে কখনও কোন প্রকারে শাবন করিতে পাইতেন না, দে বাহিরের কথা | ইহা ছাড়া ভিতরে আর একটি কথা ছিল। সে কথা৷ লিখিতে এখনও আমার

মুখরণ ভার্য্যা | ৫৭

লজ্জা বোধ হয়। লজ্জার সঙ্গে হৃদয় মাতৃম্মেহের অনির্বচ- নীয় মাধুর্য অনুভব করিয়া অবনন্ন হইয়া পড়ে। মা আমার টিঝুটর বাবুটিকে এক দিন নানা উপচারে জল- যোগ্ণ করাইলেন। জলযোগ্ন করাইয়৷ গোপনে বলিলেন, --৭ৰাছা, তুমি আমার ছেলেকে কোন প্রকারেও কষ্ট দিতে পারিবে না। তাহা হইলে আমি বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়। যাইব আমার একটি মাত্র ছেলে আমি কোন মতেও উহার কোন কষ্ট চক্ষে *দখিতে সমর্থ হইব না। পঁথিতে যা লেখ। থাকে, তুমি বড় গলায় নিজে তাহা পুনঃ পুনঃ পড়িও, ছেলে আমার ত1 শুনিয়াই সব কথা! শিখিতে পাইবে ।”

বেচারা টিমুটর তাহাতেই সম্মত হইলেন, এবং সে দিন হইতে কিছু কাঁল দেই ভাঁবেই আমি.কখনও ঘুমা- ইয়া, কখনও খেলিয়া, কখনও বা অন্যপ্রকারে সময় নষ্ট করিয়া, কানে শুনিয়া খশিখিলাম | যখন কখ এবং ফলা বানান অতিক্রম করিয়া ইংরেজি ইচ্পেলিং ধরিলাম, তখনও এঁ ভাঁবে,-এ রূপ সুখ-সেব্য প্রক্রি- য়াতেই আমার “পড়া। শুনা” হইতে লাগিল। কিন্ত, তাহাতে প্রায়শঃই বড় একটা বিষম গোল বাধিত।

টিমুটর কোন শব্দের বর্ণরিন্যাস করিয়া আমায় তাহার

৫৮ প্রমোদলহরী।

উচ্চারণ জিজ্ঞাসা করিলে আমি প্রায়ই একে আর কহি-

তাঁম। যথা, তিনি পড়িতেছেন,_ আমি শুনিতেছি,__ 40485 ৪. 88206 4086৮

বি এব, এস. এন. টি দেন্ট, এব্সেন্ট,। 0 % 0০১৮ 0) 8 পু 028, 080১869, নি বি ক্যাব বি জি বেজও ক্যাবেজ.। আবার, 4], 014৪9 21161800611 05906 বি এব্‌, এদ. এন টি সেন্ট এবসেন্ট,। 0৪8 0) ৪7829, 02079৫9, নি এবি ক্যাব, বি জি বেজও ক্যাবেজ্‌। এই রূপ বহু শব্দের বর্ণবিন্যান আরতি করিয়া তিনি যখন আমায়,জিজ্ঞানা করিতেন,_বল ত, বি এব এস. এন্টি নেন্ট--কি হইল? আমি তখন নিদ্রালন চক্ষে নির্ভয়চিতে বলিয়া বনিতাম_ ক্যা বেজ টিরুটর ইহাতে নিতান্তই দুঃখিত হইতেন। কিন্ত তাহার দুঃখে আজে যায় কি? আমার মায়ের কাছে তাহার দুঃখ বেশী, না আমার পরিশ্রম কষ্টটা বেশী। দেশের অনেক ছাত্র এখনও “পড়া গুনা” করে বলিয়া গুরুজনকে জানাইয়া থাকে। পড়া শুন! বিষয়টা কি

মুখর ভাষ্যা ) &৯

তাহা আপনি এখন ভালরূপ বুঝিয়াছেন ত? এক জনে পড়িতেছে, আর এক জনে তাহা শুনিতেছে, এবং কাছে বলিয়া কানে শোনার দরুণ যথাসম্ভব যৎকিঞ্চিৎ শিক্ষা করিতেছে ইহারই নাম “পড়া শুনা” |% বোধ হয়, এই রূপ “পড়া শুনা” অদ্যাপি কোন কোন স্থানে প্রচ-

* স্ুর-লোকে ইন্দ্রের বেদাদি শান্ত শিক্ষা সম্বন্ধে সংস্ক তে এই রূপ একটি উপাখ্যান আছে। ইন্দ্র বিদ্যা শিক্ষা কাঁরবেন। তাহার শিক্ষক হইবে কে? দেবতারা নকলে পরামর্শ করিয়া ন্থুর-গুরু বৃহম্পতিকে শিক্ষকের কার্য নিযুক্ত করিলেন। কিন্তু দেবতারা কিছু দিন পরে, পরীক্ষ। করিয়া দেখিলেন, ইন্দ্রের কিছুই ব্যুৎপত্তি জন্মিতেছে না। বৃহস্পতির মত বাক্তি দিতেছেন পাঠ, আর ছাত্র ইন্্র। তথাপি ইভের কেন বিদ্যা হইতেছে না, ইহা চিন্তা করিয়। দেবতার! সকলেই অবাকৃ। ইহার পর দেবতার! অহুসন্ধ'ন করিয়। জানিলেন যে, বৃহল্পতির শিক্ষপ্রণালীতেই দৌষ। তিনি, তাহার সেই মহামহিম ছাত্রের মন যোগাইবার জন্য, তাহাকে কোন ক্রেশ করিতে ন| দিয়া, সমস্ত পাঠই স্বয়ং পড়িয়া শুনাইভেন, এবং শব্ধার্থ বিষয়ে শিক্ষা না দিয়া মোটামোটি বাক্যের ভাবার্থটা মাত্র বুঝা- ইয়া দ্রিতেন। দেবতারা, ইহার পর, ইন্দ্রের শিক্ষাপ্রণালী পরি- বর্তিত করিয়। দিলেন, এবং ইন্্রও পরিশেষে নকল শাস্ত্রে পারদর্শী হইয়া গুরুর নিকট বিদায় লইলেন।

৬৪ 'প্রমোদলহরী | লিত আঁছে। যাহা হউক আমার সে সুখের পড়া! শুনা” শীন্রই বন্ধ হইল | পিভৃদেব যে দিন উহ! জানিতে পাঁইলেন, দে দিন হইতেই পড়! গুনার পরিবর্তে আমার রীতিমত “লেখা পড়া” প্রবন্তিত হইল, এবং আমি ছুই তিন বছরের মধ্যেই বালকদিগের প্রথমপাঠ্য পুস্তকগুলি কণ্স্থ করিয়া ফেলিয়া পাড়ার সব বালকের উপর প্রতিষ্ঠা পাইলাম।

যখন আমি একটুকু বড় হইয়া স্কুলে গ্রেলাঁম, তখন কএকটি বংমর আমার লেখা পড়া যথার্থই খুব ভাল চলিল, এবং আমার পিতৃদেবের মনস্তষ্টির জন্য, শিক্ষক মহাঁশ- য়েরাও মকলেই দে কথার উল্লেখ করিয়া পঞ্চমুখে আমার প্রশংসা করিলেন আমি বড় স্থবোধ, আমি বড় সুস্থির, আমি বড় আজ্ঞাবহ, আমি বড় বিনীত অধ্যয়নরত, এই বই আর তাহাদিগের মুখে বাক্য ছিল না| শিক্ষক- দিগের অনুকরণে প্রতিবেশীরাও পিতা মহাশয়ের নিকট আমার প্রশংসায় নানা কথা কহিলেন। এই আনন্দে পিতা আত্মহারা হইলেন,-আমার অবোধিনী মাতাও একবারে গলিয়া পড়িলেন; এবং কএক বৎদর অতীত্ব হওয়ার পরই আমার লেখা পড়ার কথা৷ ভুলিয়। গিয়া» কিনে শীন্্র শীন্র আমায় বিবাহ করাইবেন, উভয়ে সর্ধদ]

. মুখরা ভাঁ্য। | ৬১

তাহাই চিন্তা করিতে লাগিলেন যদি আতীয়দিগের মধ্যে কেহ নাহস করিয়। নিষেধ করিতঃ পিতা তাহার গুতি যার পর নাই বিরক্ত হইতেন, এবং এমন পুক্রকে পুজ্রবধূর সহিত একখানে করিয়৷ উভয়ের চন্ত্রমুখ নিরী- ক্ষণ না করিলে জীবনে আর প্রয়োজন কি, এই বলিয়া মা তাহাকে প্রবোধ দিতেন

পিতা আমার বিবাহের নাম লইতে ন! লইতেই ঘটক কুলাচার্ধ্যগণ চতুর্দিগ হইতে পঙ্গপালের নায় ঝুঁকিয়৷ পড়িল $ আমাদিগের বাড়ির বহিরঙ্গণে_“নত্থা তাংকুল-দেবতাং”-_-এই সুমধুর শ্লোক শত-কণ্ঠে উচ্চারিত হইতে লাগিল | বঙ্গদেশে বিবাহযোগ্যা মেয়ের সংখ্যা কিরূপ ভয়ানক বাড়িয়া! উঠিয়াছেঃ তাহ! আপনার অজ্ঞাত নহে। দেশের ইদানীন্তন পুরুষেরা প্রায়ই দৈবদোষে স্ত্রীলোকের মত অলস, অকর্মণ্য, ভীরুত্বভাব, বিলান-রত বিদ্যাবিমুখ বোধ হয়, ইহ] দেখিয়াই বিধাতা বঙ্গে পুরুষের সংখ্যা কমাইয়া, ঘরে ঘরে ক্ন্াসস্তানের সংখ্যা! ত্রিগুণ কি চতুণ্ত৭ করিয়া বাড়াইতেছেন কেন না, পুরুষের দ্বারা যখন কিছু হইল না, তখন হয় স্্রীলোকে- রাই পুরুষাচারপ্রিয় পৌরুষগুণনম্পন্ন হইয়া, একদিন না| একদিন দেশের দ্ুঃখভার মোচন করিতে পারে।

ঙ২ গ্রমোদলহরী |

নে যাহা! হউক, বঙ্গীয় হিন্দু-সমাঁজে বিবাহযোগ্য বরের সংখ্যা হইতে বিবাহযোগ্য। পাত্রীর সংখ্যা যে অনেক অধিক, তাহাতে আর কিছুই রন্দেহ নাই আমার বিবাহ উপলক্ষে ইহাই সকলের প্রত্যক্ষ হইল। ঘট" কেরা অনুন পঁচিশটি পাত্রীর প্রনঙ্গ লইয়া আমাদের বাড়ি দিবারাত্রি যাতায়াত করিতে রহিল |

পিতা শ্বভাবতঃই একটু অভিমানী ছিলেন | কেন না, তিনি বড় শ্রোতিয়, এবং খুব ধনী না হইলেও, বুনেদি বড় মানুষ পুভ্রের মহার্ঘতা দর্শনে তাহার অভিমান আরও বাড়িয়া উঠিল, এবং অভিমানের সঙ্গে ফরমায়েষও ক্রমে ক্রমে নিতীস্ত উচ্চ হইতে চলিল | দশ জনের ঘরে সাধারণতঃ যেরূপ মেয়ে দেখা যায়, তাহাতে তাঁহার মন অগ্রসর হইল না। তাহার পুত্রবধূ তগুকাঁঞ্চনের ম্যায় উজ্জ্বলবর্ণা হইবে, উল্ের কাজ তুলির কাজ গ্াভৃতি স্ত্রীজন-নুলভ সুকুমার বিদ্যাচয়ে দীক্ষিত থাকিবে, এবং বুদ্ধি বিবেচনা গৃহস্থালীর নকল গুণে দেশের সকল মেয়েকে পরাজয় করিবে একাধারে এত গুণ থাকিলে মনঃপৃত, নচেৎ অগ্রাহ্য কিন্তু এরূপ সাগর- নেচা সোনার পুতুল অথবা৷ অমূল্য মাঁণিক্য কয়জনের ঘ্বরে পাওয়৷ যাইতে. পারে ? ঘটকের! গুনিয়। শুনিয়া,

০৪

মুখার! ভাষ্য | ৬৩

হতাশ হইয়া, পৃষ্ঠভঙ্গ দিলঃ এবং বিবাইও কাঁজে কাঁজেই কিছু দিনের জন্য কথায় রহিল।

আমি নিজে কোন দিনও তেমন একট! সুন্দর ছিলাম না কিন্তু যখন বিবাহের বর রূপে, আজ ইহার কাছেঃ কাল উহার কাছে, শ্রীবারজ্ঞুপ্নত লীলামর্কটের ন্যায়, প্রদর্শিত হইতে লাঁগিলীম, তখন পিতাঁর প্রসাঁদে এবং প্রিয়ংবদ গ্রতিবেশিগণের মুখের গুণে আমিও ভয়ানক (1) সৌন্দর্যযশালী হইয়! পড়িলাম। আমার লাবদ্যশূন্ত অক্গিদ্ধ শ্টামবর্ণ রকলকে দশরথের দূর্ধাদল-শ্যামের কথা ল্মরণ করাইল; আমার কোটরস্থিত কুঞ্চিত চক্ষু সুতীক্ষ বুদ্ধির পরিচায়ক হইল; শরীরের ক্ষীণতা অধ্যয়নশীলতার, এবং দুর্বলতা নৌভাগ্য চিচ্ছের নাম ধারণ করিল; এবং সংক্ষেপে আমি একজন দিব্যাঙ্গসুন্দর গন্ধর্দপুরুষ হইয়া সকলের নয়নবিনোঁদনে প্ররৃত্ত হইলাম |"

কথা, আছে যে, বিবাহের ফুল ন1 ফুটিলে এবং লক্ষ কথা পূর্ণ না হইলে, কখনও কাহারও বিবাহকার্ধ্য সিদ্ধ হয় না। গতিকে, কথোপকথনে এবং পাত্রীর অন্বেষণে দশ বাঁর মান এঁ রূপ দেখা দেখিতেই অতিবাহিত হইয়! গেলে, শেষে সত্য ঘত্যই এক দিন আমার বিবাহের ফুল ফুটিয়া। উঠিল )

৬$ প্রমোদলহরী।

আমাদের বাণস্থান হইতে দ্িনেকের পথ দূরে এক- জনধনাটঢ্য বংশজ বনতি করিতেন তাহার পাচ ছেলের পর নবে একটি মাত্র কন্ত1 | সুতরাং সে কন্যার অত্য- ধিক গৌরব ছিল। তিনিও নুপাত্রের অন্বেষণে দেশে দেশে লোক পাঠাইয়া ছিলেন। তাহার অনুচরেরা ব্রহ্মাণ্ড খুঁজিয়া আমাকেই অর্ধনুলক্ষণাক্রান্ত সুপাত্র বলিয়া স্থির করিলেন, এবং আমার পিতা মহাশয়ও পাত্রীর উচ্ছলিত রূপ-লাবণ্য এবং অশেষ গুণপন দর্শনে একবারে মোহিত হইলেন1 উভয় পক্ষেই আগ্রহ জন্মিল; এবং এঁ আগ্রহ হেতু, ব্রা্মণের আগ্যশ্রাদ্ধের ন্যায়, অদূরদশী আমোঁদ- বিহ্বল যুবজনদিগের মিত্রতার ন্যায়, অথবা উৎকোচ- লুন্ধ কৃতসংকল্প বিচারকের বিচারকার্যের স্ায়, মুখের কথা ফুটিতে না ফুটিতেই, আমার পিতা মাতার অত সাধের পুত্রবধূর সহিত গুভদিনে শুভক্ষণে আমার “িভ বিবাহ” অম্পন্ন হইয়া গ্েল। এস্থলে কেবল এই মাত্র আপনাকে জানাইয়। রাখা আবশ্যক যে, এই "শুভ বিবাহে" পিতা আমার অর্ধস্বান্ত হইলেন | ধন-গর্কিত সম্থদ্ধ লোকের মহিত মমানে সমান চলিতে গিয়া, তাহার যাহা কিছু ছিল, সঙ্গস্তই অল্প সময় মধ্যে খণের দায়ে ঠেকিয় বিক্রয় করিলেন, এবং আমারও লেখা পড়া

মুখরা ভাষ্য | ৩৫

বিছ্যাব্রক্গণ্য, বঙ্গদেশীয় অনংখ্য বালকের বিগ্যালীভের স্যায়, পাকতঃ পর্ধ্যস্তই এক প্রকার পরিনমাপ্ত হইল।

আপনি এইক্ষণ মনে করিতে পারেন যে, আমার পিতৃগ্ৃহের প্রমোদনিবানে তাদুশ পূর্ণচন্দ্রের উদয় হইল, ইহার উপর আবার লৌভাগ্য কি?--হউক মেন দারিদ্র্য দুঃখ, অমন রূপের ডালি যদি রতত সম্মুখে থাকে, তাহার উপর আবার গুভাদৃষ্ট কি? আপনি যদি সত্যই এই রূপ কিছু ভাবিয়া থাকেন, তবে আমার দৌভাগ্য শুভা- দৃষ্টের কথা মনোযোগের নহিত শ্রবণ করুন|

বিবাহের সময়, আমার বয়ঃক্রম মগ্ডদশ বৎসর ; আর আমার চিত্তহারিণী তখন একাদশীর চন্দ্রলেখ রূপের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় নাই, অথচ তাহার রূপ তখনই যেন ঝলকে ঝলকে উছলিয়া পড়িতে চাহিতেছে। আমার পিতা পিতামহ প্রভৃতি কলেই সুশিক্ষিত, সুপত্ডিত এবং কাধ্যক্ষম লোক ছিলেন | কিন্তু, তাহাঁদিগের মধ্যে কেহই কোন দিন কবি বলিয়া পরিচিত ছিলেন নাঁ। কারণ ভাহাদিগের সময়ে “কবিওয়ালা” গায়কেরাই দেশের সমস্ত খোস কবিত্ব খাম দখল করিয়া ববিয়াছিল। বিষয়ী অথব! বিজ্ঞদিগ্ের সহিত উহার বিশেষ ম্পর্ক ছিল না। কিন্তু প্রেয়নীর সেই প্রণয়োৎফুল্প পুষ্পিত নৌন্দর্ধ্যরাশি

৬৩ গ্রমোদলহরী

আঁমাঁকে অচিরেই “কবিবর” করিয়া তুলিল। আমার মনে দংসারে বিরাগ জন্মিল; সকল প্রকার কার্য্যকর্দ্েই অশ্রদ্ধা হইল, এবং আমার উৎদাহ, উদ্যম যাহা কিছু ছিল, সমস্তই ভ্রমে ত্রমে ফুরাইতে লাগিল আমি আমা ছাঁড়া হইয়া! একবারে তঞ্চাত হইলাম, এবং নিষ্পন্দ সাধ- কের ন্যায় নয়নে নয়ন মিলাইয়! মুখ খানি নিরখিয়াই পড়িয়া রহিলাম।

যাহারা মানবজীবন লাভ করিয়া জীবনে কখনও রূপের উপাননা করে নাই, তাহারা আমার সে সময়ের অবস্থা অনুভব করিতে পাইবে কি? আকাশে চন্দ্র উঠিত। চন্দ্র কোন্‌ দেশে কোন কালে না উঠে? তবে, আমার চক্ষে চক্দ্রোদয় তখন এক অনির্কচনীয় দৃশ্য। আমি একবার সে চন্দ্রের দিকে চাহিতাম, আবার আমার চাকুমুখীর মুখ-চন্দ্র খানি নিঝিষ্টচিত্তে চাহিয়া! দেখিতাঁম। মানুষের মুখচ্ছবি এমন মাধুর্য্যময় হইতে পারে, ইহা দণ্ডে দশ বার দেখিয়াও প্রত্যয় করিতে ইচ্ছ! করিতাম না আমাঁদিগের আঙ্গিনায় মাঝে মাঝেই খঞ্জন তাহার আহারের অন্বেষণে উপস্থিত হইত। খঞ্জন কো- থায় না আইনে ? তবে, আমার কাছে খগ্তন তখন এক নৃতন বন্ত। খগ্জন মাটিতে চরিয়া, নাচিয়] নাচিয়া, খুঁটিয়।

মুখরা ভার্য্যা ৬৭

খাইতে ভাল বাসে খঞ্জন প্রক্ৃতপ্রস্তাবে নাচে না, কিন্তু তাহার স্বুল-দোলনের স্বাভাবিক মোহনভঙ্গিই মনুষোর চক্ষে মনোহর নৃত্য খ্জন খু'টিয়া খাইবার জন্ত, স্বভাবের স্ফুরণে, রূপ নাচিত, এবং আমার চক্ষু তখন প্রিয়তমার চির-চঞ্চল স্সি্বশ্যামল অচ্ছিনন-ভ্রচাপ-বেষ্টিত টল টল চক্ষু দুটির অপরূপ শোভা চিন্তা করিয়া দৃষ্িশৃ্য ইইত। আমার তখন মনে লইত যে, রূপ -বুঝি ফুলের ম্যায় সুগন্ধি, নবনীতের ন্যায় সুকোমল এবং সুধা কিংবা মধুর ম্যায় সুস্বাছ। নহিলে, জীবের মন প্রাণ, রূপের মোহময় আকর্ষণে, এমন আকৃষ্ট হইবে কেন? ছাত্রেরা সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাঁন গ্রণিতাদি যে সকল বিষয় লইয়৷ বিদ্যালয়ে পরিশ্রম করে, তত্সমূহের প্রতি আমার হৃদয়ে তখন প্ররুতই অতি গ্রগা় স্বণী ,জন্মিল, এবং রূপের কথা, রূপ-বর্ণনা রূপদীর রূপই আমার এই ক্ষুদ্র হদয়টাকে একবারে গ্রাস করিয়া বদিল।

জীবনের আোতি চিরদিনই যদ্দি এই ভাবে, এই রূপ তরল তরঙ্গে, বহিয়া যায়, তবে সে এক মন্দ কথা নহে। কিন্তু, তাহা হয় কৈ? আোঁতে জোঁয়ারও আছে, ভাটাও আছে। আমার দে স্ুখ-ন্বপ্রময় আনন্দের শ্রোতেও দেখিতে ন! দেখিতেই তাঁটা লাগিল। আোতন্ষিনীর সে

৬৮ গ্রমোদলহত্ী।

গ্লাবনী পরিপূর্ণতা ক্ষুধাতুরা পিশাচীর পরিক্রিষ্ মূর্তি ধারণ করিল। চাঁরি দিকে আশ! আকাঁজ্ষার কতক- গুলি ছোট ছোট লতা, যেন আমারই সুখ-নমীরে ছুলিয়] ছুলিয়া, ফুলের হানি হাসিতেছিল ; সেগুলি একে একে চলিয়া পড়িল আমি অচিরেই ভীটার নে প্রবল টানে পড়িয়া বড় বেশী ফাঁপর হইলাম | সুখ কাহাকে বলে, তাহা যদিও জানিতে পাই নাই, তথাপি বলিতে পারি যে, আমি পরিণয়ের পর কএক বতসর কাল বিশেষ কোন ছুঃখে দগ্ধ হই নাই। পিতা, তীহার তদানীন্তন নিঃস্ব অবস্থায়_শুধু আক্সনির্ভরেরই অতুল গৌরবে, সুর্যের উদয় হইতে সুর্য্যের অন্তগমন পর্যন্ত, প্রাণান্তকর পরিশ্রম করিয়া, আমাদের অন্ন বস্ত্র আহরণ করিতেন* আমি ঘরে বসিয়া, মৃদ্ু-মারুত- সঞ্চালিত ম্বণালবদ্ধ কমলের ন্যায়, আমার ঘৌভাগ্যের সরোবরে একবার ঈষৎ ডুবিয়া, একবার ঈষত.ভািয়া”_ কখনও সুখের কানন! কাঁদিয়া, কখনও দুঃখের গীত গাইয়া, ' দেই এক ভাবে দিন যামিনী যাপন করিতাম। আমি সময়ে আমার পিতৃদেবের একটু বিরাগভাজন হইয়াছিলাম বটে। কিন্তু, তাহা বুঝিয়াও বুঝিলাম না, অথবা বুঝিবার অবকাশ পাইলাম না| তিনি আমার জন্য অহোরাত্র

মুখরা ভার্যা।। ৬৯

দুঃখকষ্ট ভোঁগ করেন, অথচ আমি তীহার দুঃখ শ্রমের ভার কমাইবার জন্য মুহুর্তের তরেও কোন কাজ করি না, কিংবা মুখ তুলিয়াও একবার তাহার দিকে চাহি না, বোধ হয় কথাটা বৃদ্ধের হৃদয়ে মর্মশল্য অথবা মর্ঘ- দাহি গরলখণ্ডের ন্যায় লাগিয়! রহিয়াছিল। কিন্ত, আমি তখন পৃথিবীতে, না পৃথিবীর উর্ধতন কোন স্বপ্নময় ধামে”আমি তখন ম্ববশ, না বিবশ, তাহা আমার বিষয়-বিষ-ম্র বদ্ধ পিতা বুঝিতে পাইলেন না অবশেষে পিতা লোক-লীল। সংবরণ করিলেন? মাতা সংনারের ক্লেশ আর বহিতে না পারিয়া কাশীবাঘিনী হইলেন 7 একটি দুঃখিনী বিধবা ভগ্িনী ছিল, সে তাহার “দীন হীন” দেবর-গৃহে চলিয়া! গেল। আর আমি ?_আমি রাশীরুত স্বালা যন্ত্রণা এবং আমার সেই রূপের ডালি লইয়া সেই শুন্যগৃহে পড়িয়৷ রহিলাম। সুখের স্বপ্ন ভাঙ্গিয়া গেল। সংনাঁর, সহজ্রজিহ্বা প্রসারণ করিয়া, আমার রক্ত মাংন অস্থি মজ্জা লেহন করিতে প্ররৃত্ত হইল ; এবং শ্বপ্পোথি- তের কাছে যেমন হইয়! থাকে, আমার কাছেও তখন সকলই আর এক মূর্তি ধারণ করিল।

আগে ভাবিতাম কাব্যই প্রকৃত ম্পর্শমণি। উহা! অন্ন, বন্্র, গুধ, পথ্য সকলই আনিয়া দেয় এবং সকল

| প্রমোদলহরী।

অভাবই যথাসময়ে মোচন করে। এখন দেখিতে লাখি- লাম যে, উহ! এক কথার কথা, উন্মত্বের কল্পনা, অথবা আকাশের ফুল.। উহার সহিত গৃথিবীর কোন দিক্‌ দিয়াই কিছুমাত্র সম্বন্ধ নাই, এবং কোন অভীষ্টই উহার লাধনায় দিদ্ধ হয় না।

আগে জানিতাম, যে প্রেমিক সেই পুজ্য;_দেই দেবতা, দেই মানবজাতির মাথার মুকুট | মনুষ্যমীত্রেরই উচিত যে, প্রতিদিন ভক্তির সহিত তাহার পদ-ধুলি লয় এবং তাহাকে আলন্যের সুখশয্যায় শয়ান রাখিয়। তাহার নকল কার্ধ্য নির্বাহ করিয়া দেয়। এখন বুবিতে পারিলাম যে, ইহা আর এক বিষম ভ্রম. মনুষ্যের আশা, স্বগভৃষ্ঃকাঁর ন্যায়৮_মনোহারিণী অথচ চিরবঞ্চনা- কাঁরিণী। পৃথিবীর লোকেরা সকলেই কর্াসুত্রে বন্ধ, সকলেই কর্ম্মজগতের অবুল্পঙ্ঞনীয় শাসনে সতত বাস্ত কোন্‌ প্রেমিক কোথায় বিয়। পূর্বরাগ, গ্রণয়, পরিণয়, মান বিরহ প্রভৃতি কোন, পালার কি গীত কোন, রাখিণীতে থাইতেছেন, কেহই তাহার সংবাঁদ লয় না।

আগে জানিতাম, মনুষ্যের শ্রীতি আর প্রয়োজন, আঁলোক ও. অন্ধকার অথবা উত্তাপ শৈত্যের ন্যায়, পরম্পর বিরুদ্ধ! এখন ইহা. চক্ষে দেখিয়া এবৎ প্রাণে

মুখর! ভারা | ৭১

প্রত্যক্ষ অনুভব করিয়৷ ভালরূপে বুঝিলাম যে, প্রীতি আর প্রয়োজন কোন কোন অংশে অভিন্ন বস্ত। কেন না, যেখানে যার যত বেশী প্রীতি, বেখানেই তার তত বেশী প্রয়োজন, এবং যেখানে অত্যধিক প্রয়োজন, সেখানেই মনুষ্যের অক্ষয় প্রীতির অচল আনন। পৌষ মাঘের নিদারুণ শীতের সময়ে, প্রেমমর়ীর মৃণাল-কর-দোলিত বীজনও বিষের মত লাগে কেন না, তখন উহাতে প্রয়োজন নাই। তখন অগ্নির একটু উত্তাপ পাইলেই প্রাণট! প্রফুল্ল হয়। আর নিদাঘের নৈশ স্বালায় দেই অগ্নিই আবার বিষ, এবং সেই সশীর-স্পর্শই অস্ত। কেন না, অগ্িতে তখন আর প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন তখন সমীর-তরঙ্গে | পিপানাঁয় যার প্রাণ যাইতেছে, নয়ন নন্দ কহিনুর দেখিলে কি তাহার নয়ন 'জুড়াইবে ? আর, যে বাক্তি জলে ডূবিয় প্রাণে মরিতেছে, তাহার কাছে এক পিয়ালা তুষাঁর-শীতল স্বচ্ছ বারি উপহারন্বরূপ উপ- স্থিত করিলে, দে কি তখন শ্রীতিতে হাত বাড়াইবে ? সুতরাং, কথার আর অধুমাত্রও সংশয় নাই যে, শ্রীতি আর প্রয়োজন প্রাথে প্রাণে গীথা কালিদানের একটি কবিতা বহুকাল হইতে আমার গাণঞ্ডিয়। কবি- তাটি এই,__-

প্রমোদলহরী।

কিমিত্যপাদ্যাভরণানি যৌবনে ধৃতং তয়া বার্ধকশোভিবল্কলমৃ| ধদ প্রদোষে স্ষটচন্দ্রতারকা বিভাবরী যদ্ভরুণায় কপ্পতে |

অর্থাৎ গ্রিরিরাজকুমারী গৌরী জগন্তুর মহাঁদেবকে পতি লাভ করিবার জন্য যৌবনে যোগিনী নাজিয়াছেন, এবং নবযৌবনের উপযোগী আভরণনিচয় পরিত্যাগ করিয়া, বাকল পরিয়াছেন। মহাদেব, রৃদ্ধ ব্রাহ্মণবেশে, গৌরীশিখর নামক বিজন পর্বত-গ্রদেশে, তাহাকে অবস্থায় গ্রাগাঢ তপপ্্যায় নিমগ্ন দেখিয়া, সঙ্সেহ পরিহাল- চ্ছলে বলিতেছেন,___-

কি'! কেন আভরণ ত্যজিয়া যৌবনে,

পরিয়াছ বার্ধক্যের ভূষণ বাকল ?

উষার কুয়ান! কেন বন্ধ্যার গগনে!

কোথা দে টাদের টিপ, তারার কুন্তল?

আমি সন্ধ্যার শোভা দেখিতে চিরদিনই বড় উৎ-

সক রহিতাম, এবং হন্ধ্যাকালে আকাশের পানে চাহি- লেই আপন! আপনি এই কবিতাটি আরতি করিতাম। কিন্তু একবার আগাদিগের দেশে বড় ভয়ঙ্কর অনারৃষ্টি

মুখরা ভার্যযা ৭৩

হইয়াছিল ফাল্গন চৈত্র বৈশাখ জ্োষ্ঠ চলিয়া গেল, তথাপি বৃষ্টি হইল না। দেশে হাহাকার উঠিল। তরু লতা শুকাইয়া মরিতে লাখিল। মাীর দূর্ঘাও দগ্ধ হইয়া গেল। সন্ধ্যার স্বাভাবিক শোভা কবিকল্পনার দর্পণে তখন শতগুণ বাঁড়িল বটে কিন্তু আমি তখন মন্ধযা- কালে আকাশের রে মনঃকল্পিত শোভার দিকে ভ্রমেও দৃষ্টিপাত করিতে সমর্থ হইতাম না আকাশের সেই নিরভ্র নির্শল মৃত্তি, যেই স্ফুট-চন্দ্র-তারক বিচিত্র দৃশ্য, আমার কাছে তখন, ভৃষাতুরের নিকট মরুভূমির মত, অতি বিদ্বিষ্ট জ্ঞান হইত) এবং সঙ্গে সঙ্গে কালি- দাসের এঁ চির-পরিচিত চির-গ্রীতিকর কবিতাটিও মে কালে যার পর নাই তিক্ত লাখিত। তখন ত্য সত্যই কথাটা আগার হৃদয়ে দৃঢ় তআষ্কিত হইল যে, যেখানে যাঁর হৃদয় মন অথবা জীবনের প্রয়োজন নাই, সেখানে কখনও তাহার শ্রীতি থাকিতে পারে না প্রয়োজন বলিলেই যে নিতান্ত নিন্দিত প্রায়োজন বুঝা- ইবে, এমন কথা কে বলিয়াছে ?

আগে ইহাও মনে করিতাম যে, পৃথিবীর মার প্রাণি- বর্গ প্রাণিজগতের সার মনুষ্যজাতিঃ মনুষ্যের সার রমণী। রমণীর সার রূপ। রূপই স্বর্গ, রূপই সম্পদ, রূপই

৬৩

গ্রমোদলহরী 1

মকল সুখের প্রত্রবণ | যেমন যেখানে চন্দ্র, সেইখানেই জ্যোৎম্সা এবং নেইখানেই অস্থত+ তেমন যেখানে রূপের হিল্লোল, সেইখানেই গুণের গরিমা, সেখানেই হুদয়ের বিলান-লীল! এবং সেখানেই শ্রীতি প্রফুল্পতার নিত্য আনন্দ। আমার এই বিশ্বানও, এক দিনে ছুদিনে, একটু একটু করিয়৷ টুটিতে লাগিল। কেন টুটিল, তাহা বুঝিতে পারিয়াছেন কি?

আমার কুম্ুমে এত দিনের পর কীট পশিল। আমা- রও চক্ষু ফুটিল, এবং প্রেয়পীর কুনুম-কোমল মোহন অধরেও এত দিনে ক্রমে ক্রমে কঞ্চরের ম্যায় কঠোর কথা সকল ফুটিতে লাগিল। ধন্য মনুষ্যের প্রক্কৃতি ! ধন্য অবলার প্রেম! যিনি রঙ্গভূমিতে, একবার শকুন্তলা সাজ নাজিয়া, নুধামাখা। কথা কহিয়। সকলকে মোহিত করিয়া যান, তিনিই যদি আবার ছুরক্ষরভাষিণী কৈকেয়ী কিংবা দু্র্যদর্শনা শূর্ণণখার সাজে অবতীর্ণ হইয়! সকলকে ভয়ে শশব্যস্ত করিয়।৷ তুলেন, তাহা কেমন দেখায় ? আমার অবস্থাপরিবর্তের সঙ্গে নঙ্গে, হৃদয়বল্পলভার এই আকস্মিক বেশপরিবর্তও আমার নিকট ঠিক তেমনই বোঁধ হইল যিনি পূর্বে ফুলটি, ফলটি, লতাটি, পাতাটি পাইয়াই আক্মাদে ডগ.মগ হইতে, তিনি এইক্ষণ

মুখর। ভার্ধ্যা! 1

রজত-কাঞ্চনাদি পাপবস্তচয়ের জন্য গ্রামত্ত হইলেন। যাহার হুদয়রূপ পুণ্যতীর্থের পঞ্চক্রোশীর মধ্যেও, সুখের দিনে, লোভের কোন ঘম্পর্ক ছিল না, এইক্ষণ দুঃখের দিনে লোভই তীহার হৃদয়ের অধিপতি হইল। বাহার প্রাণের অনুরাগ শুধু গ্রন্থপত্রেই আবদ্ধ ছিল, তাহার প্রাণ এইক্ষণ বেশবিন্তাসের উপযোধি বস্ত্রীদির জন্য পাগল হইল বীহার অভিমানের ক্রোধ, অতিমাত্রায় উপ- চিত হইলেও, পূর্বে ত্রিতন্ত্রীর ঝঙ্কারের ন্যায়, পরাণ মন কাড়িয়া লইত, তাহার ক্ঠরবে এইক্ষণ কাঁংদ্য করতাল এবং চক্কারবও নীচে পড়িল। লজ্জা, সৈকতভূমিতে ভাটার জলের মত, দেখিতে দেখিতেই অপসারিত হুইল; সন্ত্রমের ভাব দূরে পলায়ন করিল ;-_-এবং পৃথিবীর যত কিছু আপদ, সমস্ত আনিয়াঃ যেনু মন্ত্রণা করিয়া, আমার সেই দীন-নিবানে নিত্য নৃত্তন যন্ত্রণীর আকারে প্রবিষ্ট হইতে লাখিল।

আমার আর এক দুর্ভোগ হইল প্রিয়তমার গুত্যক্ষ অপ্রত্যক্ষ অনন্তপ্রকারের রোগ যিনি আমার নৌভা- গ্যের সময়ে বনস্তের কোকিল কিংবা বর্ধাকালের রাজ- হংনীর স্যায় মুস্থ প্রকৃতিস্থ ছিলেন, এইক্ষণ প্রায় মকল সময়েই তিনি রোগের শধ্যায় ছিন্নমূল লতার ন্যায় জীর্ণ,

গ্রমৌদলহরী |

বিশীর্ঘ হীনপ্রভ। পাড়ায় কাহারও বাড়িতে উৎ্দব হইতেছে, সেই উত্সবের আনন্দময় কোলাহলেও তিনি মুচ্ছিত হইয়া ঢলিয়া পড়িতেছেম। অথবা, ইদানীং পলীতে কাহারও গৃহে কোন রূপ উৎনব কিংবা উপ- দ্রবের সাড়া শব্দ নাই, তিনি চারিদিকের নেই নিস্তব্ধ গা্তীর্যযেও বায়ুর প্রকোপে অস্থির হইতেছেন। শীতে তাহার সে সুকোমল তনু শৈত্যক্লেশে অবশ হয়, শ্রীম্মেও উহ! অবদন্ন হইয়৷ পড়ে সুর্যের প্রথর তাপ শরীরে বহিবারই নহে + কিন্তু চন্দ্রের শীতল জ্যোতম্নাও তাহার কাছে কখনও কখনও দগ্ধকঙ্করের ন্যায় অনুভূত হয়। তিনি যখন তাহার ইদয়ের সেই একপ্রকার অভাবনীয় উচ্ছ্বাবে একটুকু বেশী কথ! কহিতে ইচ্ছা, করেন, নেই সময় ভিন্ন প্রায় কল সময়েই তিনি এই রূপ রুগ্ন। মন্ুষ্যের মনে কেন এই রূপ বিপর্যয় ঘটে, ভাহার অনুযন্ধান করা আমার অভিপ্রেত নহে আমি একে, অপণ্িত, তাহাতে এইক্ষণ বিপাকে পড়িয়া অরসিক। নকল কথার তত্ব নিরূপণের ভার আপনাদের মত লোকের উপর | আমি আমার বর্তমান গার্হস্থ্য জীব- নের সামান্য একখানি ছবি আকিয়৷ তুলিতে পারিলেই আপনাকে আপনি ক্ৃতার্থ জ্ঞান করিব। আপনি কৌতু-

মুখর ভার্য্যা। ৭ল

কের কথা চান, না! করুণরসের কথা ভাঁলবাঁরেন? আমার এই কাহিনীতে ছুইই পাইবেন এবং তাহার উপর বীর- রবেরও ছিটাটা,ফৌটাটালাভ করিয়া কুতার্থহইবেন। আমাদের গৃহে এইক্ষণ এক এক দ্রিন এক এক নাট" কের অভিনয় হয়; দুঃখের বিষয় এই যে, ধাহার1 অভি" নয় করেন, তাহার! বই আর কেহ দর্শক থাকে ন। কোন দিন গৃহিণী পাঠশালার গুরুমহাশয়, আমি পলা- তকছাত্র। তাহার মে পাঠশালায় প্রবেশ করিবার পুর্বে একবার ভয়ে ছুই পদ অগ্রসর হইতেছি ; আবার ভয়ে, যেন নে পুরাতন নবাবী কায়দায়, এক পদ পিছু যাইতেছি | কোন দ্রিন তিনি অজ গজ গোছের একটি মফংম্বলী হাকিম, আমি দস্তকের আগামী, অথবা ভীতি- বিহ্বাল বিপন্ন আমল|। তখন কাহার বাধ, ত্বাহার মুখের দিকে চাহিয়া কথা কহিবে? কোন দিন আবার আমি অমাঁবন্যার শব-সাঁধনে উপরত সাধক, আর তিনি আলুলিতকেশা, বিকটবেশা আরক্তলোচন৷ উগ্রভৈরবী ! আমার ইহাই বিশেষ পরিতাপ যে; এই রঙ্ষলীলায় আমি এক দিনও বেশ বিনিময় করিতে অধিকার পাই না। কারণ, অপরাধের ভাগ সমস্তই আমার আমি বামন হইয়া টাদে হাত দিয়াছি, চগ্ডাল হইয়া ্রান্ষণ স্পর্শ

৭৮ গ্রমোদলহরী।

করিয়াছি, কুকুর হইয়া জের মৃত খাইয়াছি ।+-অথবা আমার মত দাড়কাকের ভাগ্যে তাদৃশ পাকা আম যুটি- য়াছে, "আমা হেন মর্কটের গলায় তাদৃশ মতির হার দুলিয়াছে”_আমার অশুভ বিবাহে” বরাহের দত্তে বিমল গজমুক্তার বিড়ম্বনা ঘটিয়াছে। অতএব কোন শান্তিই আমার উচিত উপযুক্ত শাস্তি নহে।

প্রথম বয়মে আমার যে চরিত্র, প্রেয়মীর প্রেমাপ্তনন্নিপধ ছল ছল প্রফুল্ল চক্ষে, চাতক, চকৌর চক্রবাকের মনো" হর প্রক্কৃতি হইতেও অধিকতর মুষ্ধ প্রতীয়মান হইত, আমার দেই চরিত্রের আদি অন্ত, বমস্তই এইক্ষণ নিষ্ঠুর নিকৃষ্ট গৃ্শকুনির চরিত্রের ন্যায় নিন্দনীয়। আমি মভায় গিয়া ভেকরাগিণীতে বন্তৃত৷ করিতে গারি না; অতএব আমি অশিক্ষিত অধার্টিক। আমি নট-কবি- দিগের নাচনিচ্ছন্দে গীতি-কবিতা লিখিয়া পাঁচজনকে গ্রমোদিত করিতে গারি না; অতএব আমি অপ্রেমিক। আমি নিরীহ গ্রতিবেশিদিগের মহিত নিরর্থক গলা বাজাইয়া কোন্দন করিতে পারি না, অথবা কাহারও উৎপীড়নে যাই নাঃ অতএব আমি অকর্ধণা কাপুরুষ | আর, আমি তাহাকে বিরহিণীর দশ দশা পরীক্ষা করিয়া বুঝিবার জন্য, বাড়িতে এক] রাখিয়া, অর্থোপার্জনের

মুখরা ভার্যযা ৭৯

অভিলাষে, ব্রদ্মদেশে কিংব। দূরতর রিদেশে, চলিয়া যাইতে সাহস পাই নাঃ অতএব আমি অন্তঃনারশুন্য ভেতো বাঙ্গালি।

আজ আকাশে মেঘ নাই, দে আমার দোষ আজ বৃষ্টির জন্য ঘরের বাহিরে যাওয়া যায় না, সেও আমার দোষ | আমি মধ্যাত্-রৌদ্র-তগ্ত এক জন অভুক্ত দরিদ্রকে এক মুষ্টি তগুল তুলিয়া দিলে, তাহা অপরিণামদর্শিতা অথবা অপব্যয়। আর, আজ ঘরে খাবাঁর নাই ইহা জানি- য়াও যদি তিনিঃ পায়ে আলতা অথব। গাঁয়ে একখানি আভরণ পরিবার উদ্দেস্টে, আমার পিতার সময়ের নিতান্ত মূল্যবান্‌ একটি বন্ত অতি অল্পমূল্যে বিক্রয়ের জন্য উদ্যোগ করেন, তাহার নাম উদারতা অথবা উচ্চবংশের অপরিহার্য উচ্চনীতি। যদি আমার আহ্বানে ঘরে অতি অল্প বয়স্ক একটি শিশুও আসিয়। দু'দগড উপ- বিষ্ট রহে, তবে লোকের স্বালায় নেখানে টেকা যায় না এবং যদি তাহার অনুরোধে নবীনা প্রাবীণা প্রভৃতি পাড়ার বর্ধপ্রকার ম্বালাতনকারিণীরাই সংকীর্ণ স্থানে আনিয়া জড় হন, তথাপি পোঁড়া ঘরে আগুন দিয়া লোকের সহিত প্রাণ খুলিয়া আলাপ করিবার সাধ পরিপূর্ণ হয় না।

৮০ গ্রমোদলহরী |

মহাশয় ! আর বলিব কি? প্রভাত-হুর্য্য, সান্ধ্যরমীর এবং নৈশ-গগন সকলেই আমার যন্ত্রণার সাক্ষী ভব- যন্ত্রণা কাহাকে বলে, তাহা! আমি পূর্কে বুঝবিতাম না, এইক্ষণ অক্ষরে অক্ষরে বুঝিতে পাইতেছি। রেলের গাড়ী যেমন ঘড় ঘড় নাঁদে অবিরাঁমগতি চলিয়! যায়, আমার সকল উদ্বেগের আকররূপিণী প্রিয়তমার মধুমাথা জিহ্বাখানিও ঘটিকায় ঘটিকায়, দণ্ডে দণ্ডে, পলে পলে, রূপ অবিরাম চলিতে থাকে দিনে, নিশীথে, কখনও এই অশ্রাম্তগতির বিশ্রাম নাই কিবা তীহার তথাবিধ রোগে, কিবা তাহার নিত্য নূতন দুর্ভোগে, কোন অবস্থাতেই উহার নিবৃত্তি নাই |

বর্ধাবিপ্লত নভোমগুলে, ঘনঘটা কখনও থাকে, কখ- নও থাঁকে না।, আমার রূপাভিমানিনীর মুখমণ্ডল এই- ক্ষণ সকল সময়েই নিবিড় মেঘমালায় সমাচ্ছন্ন থাকে এই শ্বার-প্রশ্বামে কিংবা অঞ্চল-তাড়নে ঝড় বহিতেছে এই অশ্রধারায় বৃষ্টি হইতেছে এই নয়নপ্রান্তে ক্ষণপ্রভা ক্ষণিক খেল। দেখাইয়া লুক্কায়িত হইতেছে, এই আবার রদনারপ অমোঘ অশনির ভয়ঙ্কর নিষধোষ আমার হদ- ফলকে থাকিয়া থাকিয়া কীপাইয়া তুলিতেছে।

আমার অনুপ্রাসচ্ছটা দেখিয়া আপনি বিরক্ত হই-

মুখর ভার্ষ্যা 1 ৮৯

বেন না। ইহ! ইচ্ছারুত নহে। কবিতাঁর নাম সহাঁমু- ভূতি। সুখ ছুঃখ, ছুইয়ের সহিতই উহার সমান নম্বন্ধ মানুষ যখন কাদিতে চীয়, পর-ছুঃখ-কাতরা কবিতা তখনও প্রিয়সখীর ন্যায় কাছে বিয়া তাহাকে বাছিয়া বাছিয়া শব্দ যোগায় নহিলে, আকুল-হৃদয় অক এবং আলুলিতকুন্তলা রতির বিলাপে অনুপ্রাসের অমন অপূর্ব বিলান পরিলক্ষিত হইত না। অতএব পরিহাস-রবিকত। পরিত্যাগ করিয়া, আমায় এখন উপদেশ দ্রিবেন আমি কি উপায় অবলম্বন করিলে, এই জপণ্তাল এবং এই হাতে পায় বাধা বিপজ্জীল হইতে অব্যাহতি পাইতে পারি, আমায় সেই পথ প্রদর্শন করিবেন |

আমার বুদ্ধিপাধ্যে যাহা কিছু যুটিয়াছিল, সগস্তই করিয়া দেখিয়াছি তাহাতে কোন অংশেও, ঝৌন ফল ফুলে নাই। এক জনে বলিয়াছিলেন, বদন্তপঞ্চমীতে বীণা বেধুর পুজা ন৷ করিয়া, নাদ-বিদ্যা-রূপিণী চক্কাদেবীর পুজা করিলে, গৃহিণীর ঢন্কানুকারিণী মুখরতা নিরৃত্ত হয়। আমি তাহ! করিয়া আরও বিপন্ন হইয়াছি। আগে শুধু মূর্খ ছিলাম, এইক্ষণ মূর্খের উপর আঁবার ভাকিনীমন্ত্রে উপানক বলিয়া অবিরত ধিকৃত হইতেছি। আর এক জন কুচক্রী স্বামায় বোকা] পাইয়! বুঝাইয়াছিলেন যে,

১১

৬২ প্রমোদলহরী |

যেমন দ্িদল-দ্রব অন্তার্টীহে উথলিয়া উঠিলে একটুকু সিগ্ব বন্তর গ্রক্ষেপেই তৎক্ষণাৎ আবার প্রশমিত হয়; তদ্রপ মুখরা ভা্্যার উদ্বেল ক্রোধাবেগও পতির নয়ন-জল- প্রক্ষেপরূপ কোন না কোন শীতল প্রক্রিয়ায় তনুহূর্তেই শান্তি লাভ করে। আমি কর্্মদোষে, এক দিন এই কুপরামর্শে কর্ণপাত করিয়া, এইক্ষণ অশেষ বিড়ম্বনা ভুগিতেছি, এবং অহোরীত্র নেই কুস্ুম-কৌমল অথচ কঙ্কর-কঠোর জিহ্বার স্বালায় পড়িয়া পুড়িয়া মরিতেছি। আমার পরিত্রাণের জন্য কৌন পন্থাই কি আর নাই £ সম্পাদকের কথা।

আমর! পত্রখানি পড়িয়া ুঃখে বিগলিত হই নাই কারণ, রূপ-রঙ্গিণী কুল-রমণী যদি রূপের চটক বাঁড়া- ইবার জন্য, নয়নে কাজল পরিতে যাইয়া, মুখে নখের আচড় লাগাইয়া, শেষে বিরলে বণিয়া বিলাপ করে, মেবিলাপে লোকের দুঃখ হয় না; বরং হাসি পাঁয়। রমণীরগ্কন কুল-পাবন যুবাও যদি প্রেমের পরীক্ষার নাটকশিক্ষার বিকৃত অভিলাষে, অথবা নবোঢ়া পুর- কামিনী লইয়া নিত্য নূতন নাটকের পট সাঁজাইবার উদ্দেশ্যে, পারিবারিক জীবনের চিরপরীক্ষিত অবলম্ব- স্বরূপ ভক্তির ভিত্তি তাঙ্গিয়! ফেলিয়া, শেষে ফীপরে

মুখর] ভার্যয। ৬৩

পড়ে, কিংবা বিলাস-লীলার কুমুম তুলিতে যাইয়া, শেষে কাটার আচড়ে ছট ফট করিতে রহে, লোকের তাহাতে খুব বেশী দুঃখবোধ হওয়া স্বাভাবিক নহে। অপিচ, লেখক স্বগৃহচরিত্র চিত্রিত করিয়াছেন, না৷ পরের ঘরে উকি মারিয়। একটু আধটু যাহা দেখিতে পাইয়াছেন, তাহাই কল্পনার তুলিতে নানা রঙে রঞ্জিত করিয়া আমাদিগের নিকট পাঠাইয়। দিয়াছেন, দে বিষয়েও আমাদিগের সংশয় আছে আমরা তথাপি, তাহার এই অতিচিত্রিত বর্ণনাই ম্বীকার করিয়। লইয়া; প্রতীকারের পথ দেখাইতে যত্ববান্‌ হইব |

বর্ণিত অবস্থা, আমাদিগের বিবেচনায়ঃ গারস্থ্য- জীবনের স্বাভাবিক অবস্থা নহে | ইহার নাম গৃহিণী রোগ, এবং গৃহলক্মীর অপ্রাক্কত মুখরত্বাই ইহার প্রধান উপরর্গ। আগর। যে অপ্রাকৃত শব্দটি ব্যবহার করিলাম, তাহার বিশিষ্ট হেতু আছে। মুখ থাকিলেই মুখরতা জন্মে; সুতরাং আমর] দর্ধপ্রকার মুখরতাকেই দোষ বলিতে পারি না। কিন্তু মুখরতা যখন প্রক্কৃতির সীমা শঙ্ঘন করে, তখন তাহাকে দোষ বলি, এবং সেই দোষ গ্লাঢতর হইলে রোগ বলিয়া নির্দেশ করি | মানিনী মুখর) সে বদন্ত-বি্লাপিনী কোকিলা কিংবা এআজারের মত

৮৪ গ্রমোদলহরী |

প্রণয়বিহ্বলা বর-বর্ণিনীও কখনও কখনও মুখরা; নে কল-কল-বাহিনী আোতঘ্বিনীর মত। কিন্তু কোন কোন চারুমুখীর মুখরতা! যথার্থই চড়কা কিংবা ভাঙা ঢাকের বিকট শবের ন্তায়, এবং উহা! এক ভয়ানক রোগ রূপ রুগ্ন স্ত্রীলোকের স্বামীকে পণ্ডিতের বিলাতে কুকুটীক্ষু্ন এবং দেশে গৃহিণীগ্রস্ত বলিয়! ব্যাখা! করেন

এই রোগের * গুকৃত নিদাঁন নিরূপিত হইয়াছে কি না, বলিতে পারি না। কিন্ত ইহার লক্ষণাদি সহজবোধ্য ইহার প্রথম বঞ্চার সময়ে চক্ষু শিশির-পিক্ত গ্রভাঁতপদ্মের ন্যায় একটুকু আরজ অথচ ঈষৎ লোহিত বর্ণ হর, জযুগ অল্প অল্প আকুঞ্চিত হইয়া আইঘে, নাঁগ! স্ফীত হইতে থাঁকে, এবং অধর ওষ্ঠ হইতে আরম্ভ করিয়। বমস্ত অঙ্গ কেমন এক তাড়িত-তরঙ্গের আকন্সিক স্ফষরণে কাপিতে রহে। রোগ দীর্ঘস্থায়ী হইলে অবস্থা আরও একটুকু আশঙ্কাজনক হয়, এবং অপন্মারের গহিত তখন ইহার

* 79561001118 নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক পণ্ডিত তদীয় “10 200. 10020 4. 9$৮ণয 01 60180, 39৫০0005 39309] 00001906978” নামক পুক্তকে ট৩৪:588)01 রোগের যে কল বিচিত্র লক্ষণ বর্ণনা করিয়াছেন,ভাহাতে বোধ হয় প্রমোদ- বাহরীর গৃহিনীরোগ' নিতান্তই কল্পনার কথ! নহে।

মুখরা ভার্য্যা ৮&

অনেক সাদৃশ্য দেখিতে পাওয়া যায় কেন না, তখন চক্ষু শুধু আরক্ত ন। রহিয়! চক্ষের মত আবর্তিত হয়ঃ হস্ত পদ ইতস্ততঃ উৎক্ষিপ্ত হইয়। পড়ে, মুখ ফেনিল হইয় উঠে, অঙ্গয্টি খাঁনি এলাইয়া পড়ে, এবং রোগী ভাবাবিষ্ট ব্যক্তির মত অনর্গল প্রলাপ বলে।

যাহা হউক ব্যাধি অচিকিত্সনীয় নহে হোমিও- প্যাথিম্মত “সদৃশ চিকিৎসা” অবলম্বন করিলে, চিকিতন- কের বুদ্ধি বলে, কোন কোন স্থলে ঝটিতি রোগের প্রাশ- মন হইয়া থাকে। কিন্তু তাহাতে প্রায়শঃই আহার নিদ্রায় অরুচি জন্মে, এবং রোগী অনেক স্থলে অনাহাঁর অনিদ্রার ক্লেশে, বাঁতাহত লতার ন্যায়, ছুলিয়! পড়ে প্রণালীর প্রাতিবিধানে রোগও একবারে নির্মূল হয় কি না, নন্দেহ। ইহা এক আশ্চর্য্য কথ] যে, পূর্ব পশ্চিম দুই দিগের ছুইটি প্রধান লোক এই সদৃশ-পদ্ধতির পক্ষ- পাতী। শেক্ষপীরক্কত কর্কশার বশীকরণ নামক নাঁটকা- রূতি চিকিত্সাগ্রন্থ অনেকেই হয় পাঠ করিয়াছেন উহাতে আগুনের উপর আগুন ঢালার মত চিকিৎসার যেরূপ অভিনব ব্যবস্থা আছে, আমাদিগের কালি- দাও এবিষয়ে ঠিক রূপই আর এক ব্যবস্থা, অল্লা- ক্ষরগ্রথিত সুত্রের ভাষায়, বিধিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন।

৮৬ গ্রমোদলহরী 1

বাহার না জানেন, তাহার! তদীয় “বিষন্য বিষমৌষধমূ” এই চিকিৎনাস্ত্রের গীক1 ঠীপ্পনী পাঠ করিবেন; এবং ইচ্ছা হইলে, দেশ কাল পাত্র বিবেচনায়, কুত্রচিৎ কখনও, বিশেষ নাবধানতার সহিত মৃদুভাঁবে, উহা! প্রয়োগ করিয়া দেখিবেন।

এলোপ্যাথির বিরুদ্ধচিকিতৎসা,* বহুকাল-কলনীয় চিকিৎসকের পক্ষে বহুরেশকর হইলেও, রোগীর অধিক মনঃপ্রিয় এবং বোধ হয় রোগের নির্দুলতানাধনেও অধিকতর অনুকূল | সক্কেতিশের গৃহিণী এই রোগে অভিভূত ছিলেন, এবং ফরাশি রুশোর শেষবয়সের প্রেয়ণীও অনেক দিন পর্য্যন্ত ইহার অকথ্য যন্ত্রণা অনু- ভব করেন। গুনিয়াছি, তাহার! উভয়েই এই প্রণালীর চিকিৎনাঁয় রোগমুক্ত হন। কিন্তু বিরুদ্ধচিকিতসা, অর্থাৎ উত্তাপে শৈত্য এবং উগ্রতার সম্মুখে শম-দম-নম ভাব, অবলম্বন করা, যে সেব্যক্তির কর্ণ নহে। ইহার অনেক নিগুঢ় তত্ব আছে, তাহা সকলে কুবিতে পায় নাঁ। চিকিত্মকের একটুকু যোগ-বিদ্যা, একটুকু দর্শন বিজ্ঞান জানা চাই, এবং মৈম্মর তত্ব গুভৃতি অপ্রচলিত তত্ত্রা- দিতেও ভালরপ দীক্ষিত হওয়া চাই। তাহা হইলেই লিদ্ধি, নচেৎ উষধ-প্রয়োগের পদে পদেই বিষম বিপদ |

মুখর] ভার্যযা ৮৭

পত্রলেখক স্বভাঁবতঃই যেরূপ মৃদুল-মতি, মধুরভাষী এবং ্থাদগ্রাহী, যদি তিনি সেইরূপ বুদ্ধিসম্পন্ন লোক- প্রতিজ্ঞ হন, তবে তাহার পক্ষে উপরোক্ত ছুই প্রণা- লীর মধ্যে শেষোক্ত প্রণালীই আমাদিগের বিবেচনায় অধিকতর প্রশস্ত। তাহার উদ্বেল ছিদল-দ্রব এবং নয়ন- জল-নিক্ষেপই কথার প্রমাণ কিন্তু, উপযুক্ত ময়ে নয়নের এক ফৌঁটা জলে ষে উপকারের আশা. করা যাইতে পারে, অনুপযুক্ত সময়ে এক কলবীতেও তাহা হইয়া উঠে না। তাহার গৃহিণী আবার যখন হুঙ্কার- বঙ্কারে গর্ডিয়। উঠেন, কিংবা! ফণিনীর মত মাথ! ফুলাইয়াঃ নয়ন বাঁকাইয়া ছুলিতে আরম্ভ করেন, তখন বিদ্ধমন্ত্র নাপু- ডিয়াদিগের ন্যাঁয়, তীহার বন্মুখে দণ্ডায়মান হইয়া, এবং স্বকীয় হস্তদ্বয়ের সম্পৃক্ত-বন্ধনে সুন্দর একটি আবাহনী দ্র! অথবা মুদ্রাবদ্ধ অঞ্জলি রচনা করিয়া, 'তার-স্থরে তীয় স্ততিবন্দনায় রত হওয়াই তাহার প্রথম প্রধান কর্তব্য যদি তিনি বুকে এত টুকু সাহসও বান্ধিতে না পারেন, তাহা হইলে নিহিলোপ্যাথি অর্থাৎ নীরব-কবির নিশ্চিন্ত'নিষ্পন্দ সুগভীর নিদ্রালুতাই তাহার শেষ পথ। তার পর- ফলাফল-_অদৃষ্ট

বিবাহ কত প্রকার।

আকাশে কত তারা, মানুষ তাহ! গণিয়া দেখিবার জন্য চেষ্টা করিয়াছে কিন্তু, পৃথিবীতে কত একার বিবাহ প্রচলিত আছে, অথবা বিবাহপ্রথা দেশ কাল পাত্রভেদে কত প্রকারে প্রীবর্তিত হইয়াছে, মানুষ তাহ! গণিয়া নিরূপণ, কিংবা নিঃশেষ, করিতে পারে নাই। ভারতীয় আধ্যনমাজের পুরাতন ব্যবস্থাগুরু বিখ্যাত, নামা মন্ুর মতে বিবাহ আট প্রকার | যথা, ব্রাঙ্গো দৈবস্ততৈবার্যঃ প্রাজাপত্যন্তথাত্ুরঃ গান্ধর্ক্বো রাক্ষদশ্চৈব পৈশাচাউমোধমঃ। অর্থা ত্রাঙ্গ, দৈব, আর্ধ, প্রাজাপত্য, আম্ুর, গান্বর্ক, রাক্ষম এষং সকলের অধম পৈশাচ এই আট প্রকারে বিবাহ হয়| সুশিক্ষিত সুশীল ব্যাক্তিকে বররূপে আহ্বান করিয়া, বাড়িতে আনিয়া, বর-কন্া! উভয়কেই বন্ত্রালঙ্কারের দ্বারা অঙ্চনাপুর্ৰক কন্যাদানের নাম ব্রাহ্মবিবাহ | * আচ্ছাদ্য চার্চয়িত্বা শ্রুতশীলবতে স্য়ং | আহ্য দানং কন্ায়।ত্রা্নোধশশং প্রকীর্ভিতঃ

বিবাহ কত প্রকার ৮৯

ভারতবর্ষীয় ভদ্রবিশিষ্টের ঘরে উল্লিখিতরপ ব্রান্গ- বিবাহই বহুকাল হইতে বেশী প্রচলিত। ইহাতে ল্পষ্টই দেখা যাইতেছে ষে, প্রাচীন আর্যযের1! এখনকার মত অতিরিক্ত সভ্য না হইলেও, তীহারা বরে এক খুঁজি- তেন বিদ্যাবত্তা, আর খুঁজিতেন নুশীলতা | স্ুশীলতা৷ বলিলে অনেক কথাই তাহার মধ্যে আইনে কেন না, ভক্তি প্রীতি, বিনয় মাধুর্য, মধুর-ভাঁষিতা উদারতা, এবং পর-সুখ-পরায়ণতা প্রভৃতি নানাবিধ উচ্চভাবই এক শীলতা৷ অথবা সুশীলতা শব্দের অন্তগ্তি।

বর যদি বিদ্বান এবং এত গুণের যম্পর্কহেতু সুশীল হয়, তাহা! হইলে মনে করিতে হইবে যে, মে পৃথিবীর হিঘাবে দরিদ্র হইলেও প্রকৃতপ্রস্তাবে দেবতাঁ। প্রাচী- নেরা, সন্তবতঃ এই রূপ মনে করিয়াই, কাধ্য করিতেন এবং পরিজনদিগকে এই বলিয়া গ্রবোধধ দিতেন যে, দেবতার নিকট কন্ঠাদান অপেক্ষা কন্যাবস্বন্ধে আর অধিকতর প্রার্থয়িতব্য কি হইতে পারে কিন্তু, কালে সকল দেশেই রুচির পরিবর্ভ ঘটে দেশীয়দিগের রুচির পরিবর্তহেতু ইদানীং দেশে বরে দুইটি গুণের অর্থাৎ বিদ্যা সুশীলতার আর তেমন আদর নাইঃ

এখন আদর ও.অনুরাগ.বরের বহিরাবরণে ধনে | .. ১২

ম* প্রমোদলহরী |.

অপিচ; বিদ্যার পরীক্ষারূপ বিপদ্ধিট! বরকে ছাড়িয়া ক্রমে ক্রমে কন্ার দিকেই বেশী গড়াইতেছে, এবং ছেলেটি যেমন তেমন হউক,মেয়েটি লেখা পড়ায় সুনিপুণা কি না, এই একটা কথা, দেশের অধিকাংশ স্থলেই, সর্বদা গ্না যাইতেছে বরের হস্তাক্ষর চিংড়ি মাছের ঠ্যাঙের' মত কদর্য্য এবং স্বণার্থ হইলেও তাহাতে কিছু আনে যায় নাঃ কিন্তু মেয়ের হস্তাক্ষর যদি মুক্তামালার ম্যায় মনোহর' না হয়, সে বড় দৃষ্য কথা বর যদি স্বকীয় মাতৃভাষায়, গুদ্ধ সুন্দর শব্মযোগে, সামান্য একখানি পত্র লিখিতেও অসমর্থ হয়, তাঁহাঁতে লজ্জার কোন কথা নাই। সেষদি করিমন্তগবদ্গীতা” নামটি উচ্চারণ করিতে না পারিয়, তৎপরিবর্তে “শ্রীমতী বৃন্দাদূতীর গীত” বলিয়া বসে, এবং আপনার অপ্রতিম মূর্খতায় আপনিই নকলের আগে খিল খিল 'করিয়! হাঁবে, তাহাতে কেহই লজ্জা অনুভব করিবে না। মে যে তাহার বাপকে ফাদার শিক্ষক প্রভৃতি গুরুজনদিগকে ষাঁড় বলিয়৷ নস্তাষণ করিতে শিখিয়াছে, এবং মাতা জ্যেষ্ঠ! ভগিনীর কাছে বসিয়া জল ন! চাহিয়া, ওয়াটার বলিয়া! হীকিতে পারিতেছে, এই পাশ করা বিদ্যাই তাহার জন্য চুর | কিন্ত, মেয়েটি যদি দীনবন্ধুর “নধবার একাদশী” অথবা একখানি

বিবাহ কত গরকার। ৯৯

“বঙ্গবাণী” হাতে লইয়। তৈয়েরী তোতার মত "ত্বরিত- গতি” পড়িয়া যাইতে ন] পারে, তাহা হইলে বর-পক্ষী- য়েরা নকলেই, ক্রোধে নৈরাশ্যে, হতবুদ্ধির মত খা েঁট করিয়া বদিয়। থাকিবে |

তার পর, বরের শীলতা | দেশের অভিনব আঁচাঁরে এবং বিদেশীয় সভ্যতার অভব্য অত্যাচারে ক্রমে এই রূপ ঘটিয়া উঠিতেছে যে, বর যতই নির্লজ্ঞঃ নিঃনক্কৌচ, এবং উদ্ধতও অহন্মুখ বলিয়া পরিচয় পাইবে, যদি তাহার গাঁয়ে ইট গুরকি চুণের অথবা অন্য কোন প্রকার বিষয় সম্পদের কিঞ্চিন্মীত্রও গন্ধ থাকে, তাহা হইলেই সে বরের হিদাবে তত বেশী বরণীয় হইবে এই রূপ বরে কন্যাদানই এই- ক্ষণ শান্ত্রম্মত ত্রান্গবিবাহ বলিয়া কথিত হইয়া! থাকে

দৈব-বিবাহ এখন এক প্রকার বিলুপ্ত হইয়াছে! পুরাতন কালে খধিরা যখন জ্যোতিষ্টমাদি যজ্ঞের অনু- ষ্কান করিতেন, তখন তাহারা কখনও কখনও যজ্ঞারস্ত- কালে, সেই যজ্জের কর্মকর্তা পুরোহিতকে সাঁলঙ্কত কন্যা দান করিয়া কতদাঁর বানাইয়া লইতেন। প্রকার দান-ম্পাঁদ্য বিবাহের নাম দৈব-বিবাঁহ।

যক্তে ভু বিততে সমাগৃত্ধিজে কর্ণাকুর্বাতে 'ভলধত্যে ুতাদানং দৈবং ধর্ম প্রচক্ষন্ধে 1

৯২ .. প্রমোদলহরী |

কিন্তু, এক্ষণ নে যজ্ঞও নাই, যজ্ঞের পুরোহিতও নাই | সুতরাং এখন আর দেশে দৈব-বিবাহের সম্ভাবনা কোথায় ? যদি দৈব-দোষে, দায়ে ঠেকিয়া, কাহারও না কাহারও জাতিমানের জীবন্ত বোবা অথবা কুলের «গোজা” গছিয়! লওয়াকেও দৈব-বিবাহ বলিয়। নির্দেশ করা অপঙ্গত না হয়, তবে দে এক পৃথক্‌ কথ। | কেন না, তাদৃশ “দৈব” অথবা দুর্দৈব বিবাহ এখনও দেশের অনেক স্থলেই অনেক দময়ে অনুষ্টিত হইয়৷ থাকে।

দৈবের পর আর্য। আর্ধ বিবাহও এক্ষণ অপ্রচলিত। একটি গাভী এবং একটা বৃষ এই দুইয়ে হয় এক গ্রো- মিথুন। পুর্বে কোন কোন গৃহধর্্মপরায়ণ খষি, অথবা জনপদবানী গৃহস্থ, বরের নিকট হইতে এক কিংব। ছুই গো-মিথুনমাত্র গ্রহণ করিয়াঃ যথাবিধানে কন্াদান করিতেন'| উল্লিখিতরূপ দানসিদ্ধ বিবাহের নাঁম আর্য বিবাহ 1% গরীব দুঃখী গৃহস্থদিগের মধ্যে এখনও অনেকে কন্যার বিনিময়ে গো-মিথুন গ্রহণ করিয়। থাকে কিন্তু শুধু এরূপ গো-মিথুন গ্রহণদ্বারাই বিবাহটা আর্ধ হইয়া! পড়ে কি না, পাঠক তাহ! বিচার করিবেন

* একং গোমিথুনং দ্ধে ব1 বরাদাদায় ধণ্মতঃ। 'কন্যাপ্রদানং বিধিবদীর্ষে। ধর্মঃ উচ্যতে

বিবাহ কত প্রকাঁর। ৯৩

প্রাজাপত্য বিবাহটা! প্রক্কৃতপ্রস্তাবে কি পদার্থ, তাহা আমার বুদ্ধিস্থ হইতেছে না। “তোমরা দুইয়ে, মিলিয়। মিশিয়, গাহস্থ্যধর্শের অনুষ্ঠান কর”? বর কন্যাকে এই কথা কহিয়া অর্চনাপুর্বক কন্ঠাদানের 'নাম প্রাজাপত্য বিবাহ। * এইক্ষণ প্রথম জিজ্ঞার্য এই, কথা কহিতে- ছেন কে? কন্যার পিতা কিংবা মাতা, অথবা জ্ঠভ্রাতা প্রভৃতি কোন ঘনিষ্ঠ অভিভাবকই বর কন্যাকে সাধা- রণতঃ এই রূপ উপদেশ দিয়া থাকেন। কিন্তু ব্রাহ্ম দৈব প্রভৃতি দান-সম্পাদ্য বিবাহমাত্রেই প্রকারতঃ এই রূপ উপদেশের প্রথা আঁছে। এমন স্থলে প্রাজাপত্য বিবাহে আবার এই অতিরিক্ত উপদেশের বিশেষ ব্যবস্থায় কি বিশেষ ফল দিদ্ধ হইতেছে, তাহা বুবিতে পারি নাই। পু আস্তুর বিবাহের নমস্তই দোজা কথা, এবং আজিকার এই অনুর-স্বভাঁব ভারতে অনংখ্য লৌকই উহার মর্্া- টা ভালরূপ বুঝিয়া লইয়াছেন। কন্যার পিতা অর্থ | তিনি কিছু চাহিতেছেন। তাহার আকাঁক্ষা পূর্ণ না হইলে, তিনি তাহার বুকের মাংন বিক্রয় করিয়া রথ!

* সহোতৌ চরতাং ধর্্মমিতি বাঁচান্ুভাষা চ। কন্যাপ্রানমত্য্য প্রাজাপত্যো বিধিঃ স্মৃতং

৯৪ . গ্রমোদলহরী |

নরকভোগে ম্মত হইবেন না। কন্যার মাতাঁও আঁচল পাতিয়া বিয়া আছেন। যদি বর. কিংবা বরপক্ষীয়েরা তাহাকে আচল ভরিয়া অর্থ দিতে না পারিল; তাহা হইলে তিনি তাহার আচলের ধন পরের হাতে তুলিয়া দিবেন কেন ? কন্যার অন্যান্য জ্ঞাতিবর্গও, এই দময়ে আপনা! হইতেই, আত্মীয়তা প্রদর্শনের জন্য অধীর কেন না, অর্থোপার্জনের এই প্রকার সুযোগ শুভ- সংযোগ অকল বময়ে ঘটে কৈ। যদি বর এমন স্থলে সকলকেই কিছু কিছু দিয়া, এবং সঙ্গে সে কন্যাকেও অর্থ কিংবা আভরণের উপহার দানে পরিতৃপ্ত করিয়া, কোন প্রকারে বিবাহটা সম্পাদন করিতে পারে, তাহা হইলে নে বিবাহের মাম আনুর বিবাহ

মন্থুর মতে এই প্রকার বিবাহ অন্ুরেরই যোগ্য তবে মনুষ্যের মধ্যে ইহার আবার এত অধিক প্রচলন হুইল কেন ? অপিচ, বিবাহটা যদি আমর নামে ব্যাখ্যাত হইল, তাহা হইলে এতৎ সম্পর্কে আনল অসুর বলিয়৷ গণ্য হইল কে? বর,_না কন্যার পিতা! প্রভৃতি জ্ঞাতি- বর্গ ? বরপক্ষ,_ন। কন্যাঁপক্ষ ?

*জ্ঞাতিভ্যো দ্রবিণং দত্। কন্যা চৈব শকিতঃ। কন্যাপ্রধানং স্বাচ্ছন্্যাদা স্থরো! ধর্ম উচ্যতে

বিবাহ কত প্রকার ৯%

গ্রান্র্ধ বিবাহ *% লালপা-জনিত প্রীতির ললিত-বন্ধন | উহাতে গো-মিখুনেরও কোন নম্পর্ক নাই, এবং কন্যার জ্ঞাতিদিগকে ধনের দ্বারা বশ করিয়া লওয়ারও কোন প্রনক্ষ নাই। বর কন্য। পরম্পরের রূপ দেখিয়। পাগল, অথবা বিশেষ কোঁন গুণের আকর্ষণে উভয়ে উভয়ের জন্য বিহ্বল। সুতরাঁৎ রূপ স্থলে, বিবাঁহট! প্রায়ই গোপনে সম্পাদিত হইয়! থাকে, এবং গান্ধর্ববিবা- হের বর কন্যা, এই হেতুই, প্রায় বর্ধত্র, আপনা দিগের প্রণয়ের ইতিহাঁন লজ্জার আবরণে ঢাকিয়া রাখে

কুলাচার্ধয কুল-পুরোহিত ঠাকুরেরা অবশ্যই গান্ধর্ধ- বিধানে নিতান্ত বিরক্ত। কারণ, তাহারা ক্ঠকগুয়নের অনাধারণ স্বালায়ঃ অথবা কর-তলম্থ মুদ্রার ঝনত্কার* শ্রুতির প্রত্যাশায়, সাধারণতঃ যাহা যাহা, করিয়া থাকেন, বিবাহে কোকিল দয়েল প্রভৃতি বনের বিহঙ্গই, বিনা লাভে বিনা লোভে, প্রায়শঃ তাহ! সম্পাদন করে আর, বাহারা ঘরের খাইয়া পরের উত্নবে উন্মত্-_হাঁতে আর কোন কাজ নাঁই বলিয়া নর্ধদাই পরের ক্রিয়াকর্মে কার্ধযাধ্যক্ষরূপে ব্যাপ্ত, তাহারাও | * ইচ্ছ্য়ান্যোন্যনংযোগঃ কন্যায়াশ্চ বরস্য চ।

গাস্বর্বঃ নতু বিজ্ঞেয়ো মৈথুন্যঃ কামসম্ভবঃ |.

৯৩ গ্রমোদলহরী |

পদ্ধতিতে নিতান্ত অপ্রীত। কেন না, বিবাহের আনন্দ-উত্দবে যাহা কিছু চাই, আকাশের চন্দ্র তারা এবং উদ্যানের তরু লতাই তাহার মস্ত উপকরণ আপনা হইতে বিনা মূল্যে উপহার দেয়।

ভারতবর্ষের বীর বড় মানুষদিগের মধ্যে এক সময়ে, ্রাহ্মবিবাহের পর, গরান্ধর্বিবাহেরই একটুকু বেশী গৌরব ছিল, এবং তপোবনবাধিনী খষিকন্যাদ্িগের মধ্যেও অনেকে, পিতামাতার অগোচরে, গান্ধর্ধ ব্যবহারে, বরে আত্মদান করিয়া, উহার দে গৌরব বাড়াইয়া গ্রিয়াছেন। ুম্স্তশকুন্ভলার বিবাহ বর্ধাংশে গান্ধর্ক, এবং উহা কথ কশ্যপ প্রভৃতি মহামনম্বী মহ্ষিদিগেরও অনুমোদিত কালিদার এই ছুষ্মন্ত শকুন্তলার বিবাহের কাহিনী লিখি- য়াই জগতে অদ্বিতীয় কবিকীর্তি লাভ করিয়াছেন। কিন্ত, ইদানীৎ ব্রাহ্ম গান্র্ব অপেক্ষা আস্ুর বিবাহেই লোকের অনুরাগ দিন দিন বৃদ্ধি পাইতেছে, এবং বিবা- হের কথ] বিষয়বাণিজ্যের কথা অনেক স্থলেই এক হইয়া দীড়াইতেছে। মহানির্বাণতন্ত্রোক্ত শৈব-বিবাহও গান্ধর্ধবিবাহেরই আঁর এক নাম। কিন্ত, শৈব-রিবা- হের নিগৃঢ় উদ্দেশ্য তান্ত্রিক নাধক ভিন্ন অন্যের সুখ- বোধ্য নহে !

বিবাহ কত গুকার। ৯৭

ফ্াক্ষনবিবাহ, ঞ্৯ এইক্ষণকার পিনালকোঁডের শাসনে, রাক্ষন অরাক্ষন সকলের পক্ষেই সমাঁন পরিত্যজ্য। কন্যা, হা! তাত ! হা ভ্রাতঃ! বলিয়া! চীৎকার করি- তেছে”» বর রে আলুলায়িত-কুম্তলা ভয়-বিহ্বলা কুল- বালার তথাবিধ করুণবিলাপে কর্ণপাতও না করিয়া, বাহুবলে তাহাকে হরিয়! লইয়া যাইতেছে শুধু ইহাই নহে, যাহারা ঘেই বিলপমান। বিপন্ন অবলার পরিত্রাণের জন্য সম্মুখীন হইতেছে, নে তাহাদিগকেও হত, আহত, কিংবা ভূপাতিত করিয়া, বাহুবলের বিজয়শত্ব বাজা- ইয়া, আপনার পথ দেখিতেছে। এইরূপ ত্রাহি ত্রাহি গোছের মুগুচ্ছেদী তুগুভেদী বিবাহ বল-দৃপ্ত ভুর্ব তত এবং রাক্ষন-প্রাতিম ব্যক্তিদ্রিগের জন্য এক প্রকার মন্দ নহে বোধ হয় দণ্ডকারণ্য দাক্ষিণাত্যের পুরাতন রাক্ষবদিগের মধ্যে এই প্রকার বিবাহেরই সমধিক প্রচ- লন ছিল। ইহাতে বীণা, বেধু মুরজ প্রভৃতি বিবিধ মুখাবহ যন্ত্রের মধুর ধ্বনির পরিবর্তে, অস্ত্রথন্ঝনার আত* হ্বজনক শব্দই অধিকতর পরিশ্রুত হয়, এবং আতর গুলাবের পরিবর্তে মানুষের ছিন্ন-কঠ-নিঃস্ত রুধির"

হত ছিত্ব। তিত্বা ক্রোশসীং রুদতীং গৃহাৎ।

প্রনছ্য কন্যাহরণং রাক্ষমে। বিঘিরুচ্যতে ৯৩

৯৮ গ্রমোদলহরী

ধারাতেই বরপক্ষ কন্যাপক্ষের বন্দি রঞ্জিত হইয়া থাকে কিন্তু ইহা সকল লোকের ভাল লাগে না। অনেকে জ্ঞানানন্দ শর্মার মত চিরজীবন অক্ৃতদার রহিতে প্রস্তত, তথাপি রূপ উতৎ্কট বিবাহের আশে পাশে যাইয়া অন্যের চিন্তে অগুমাত্রও কষ্ট দিতে, অথবা? আগনি অনর্থক আপদ্গ্রস্ত হইতে অনম্মত। মনু গান্ধর্্ রাক্ষম এই দ্ুইকে মিলাইয়া মিশাইয়া 'গান্বর্ধ-রাক্ষপ নামে আর এক অভিনব মিশ্র বিবাহের ব্যবস্থা দিয়াছেন তাহাতেও বলপুর্বাক হরিয়া৷ লওয়ার কথা আছে। কিন্তু, বে হরণ পুজার্হ আহরণের মত। উহ? কীর-ধর্শের বিচারে অযোগ্য অথবা। অযশন্য, এবং প্রেম-ধর্মের বিচাঁরেও অপরাধজনক নহে। কারণ, কন্ঠ স্বয়ংই হৃত. হইবার জন্য লালায়িত। ক্ৃফান্মরাগিণী রুক্িণী এই রূপে আহ্ৃত হইয়া, শিশুপালের মত পশুর হস্ত হইতে, আত্মরক্ষা করিয়াছিলেন | মুভদ্রীহরণও উল্লিখিত রূপ গাঞ্ষর্ধ-রাক্ষদ বিবাহেরই আর একটি স্ুগরসিদ্ধ উদাহরণ রাক্ষন শব্দে সকল স্থলে রক্ষক অর্থটই অধিকতর পরিস্ফুট। _.. পৃথকৃপৃথস্থা মিশ্রো। বা বিবাহ পূর্বমীরিতৌ গান্ধর্কো! রাক্ষদশ্ঠৈব ধর্নযী ক্ষত্রসয তৌ স্তৌ।।

বিবাহ কত প্রকার। ৯৯

মন্ুর তালিকায় পৈশাচ-বিবাহই & সকলের মধ্যে নিকৃষ্ট তিনি উহাকে পাপিষ্ঠ অধম বলিয়! নির্দেশ করিয়াছেন, এবং আমিও এই হেতুই উহার সবিশেষ বর্ণনে নির্ত্ব রহিলাম | যে কথাটা কানে গুনিলেই শরীর শিহরিয়া উঠে, পাঠককে আবার তাহার বিশেষ অবস্থ। বুঝাইবার জন্য প্রয়াস পাইয়া! ফল কি? কিন্তু মন্ুযে প্রকার বিবাহকে পৈশাচ বলিয়৷ উল্লেখ করিয়াছেন, তাহা ছাড়া, আরও অনেক প্রকার পৈশাচ-বিবাহ পৃথি- বীতে নিত্য প্রত্যক্ষ হয় না কি? যাহারা বাহিরের মার্জিত আবরণে মনুষ্য, কিন্তু গ্রক্তির অকথ্য নীচতায় পিশাঁচ,যাহারা শতপ্রকার নুগন্ধিলেপে সুনিক্ত রহি* যাও, চক্ষের দৃষ্টি, মুখের কথা, এবং গায়ের গন্ধে পিশাচ বলিয়া ধর] পড়ে, তাহাদিগের পারিবারিক জীবনকে পৈশাচ-বিবাহেরই রূপান্তর বলিয়া বর্ণনা করিলে, নিতা- স্তই অসঙ্গত হইবে কি?

ভারতবর্ষের প্রাটীন ইতিহানে আরও ছুই প্রকার বিবাহের বিশেষ প্রনিদ্ধি ছিল। মেছুইয়ের একটিকে

* লুপ্তাং মতাং প্রমত্ত।ং ব। রহ! যত্রোপগচ্ছতি পাপিষ্ঠে। বিবাছানাং পৈশাচশ্চাষ্টমোধমঃ

১০, গ্রমোদলহরী

স্ব়ধবর এবং আর একটিকে শৌধ্যবরণ বিবাহ বলিয়া বর্ণনা করিলে অমঙ্গত হইবে না

স্বয়ংবর বিবাহে মেয়ের বড় নোৌহাগ | মেয়ে অব* শ্যই অত্যন্ত সুন্দরী নহিলে, দেশ দেশান্তরের পাত্র, বরবেশে সুসজ্জিত হইয়া,_যখন রেলের গাড়ীর সুদুর কল্পনা কাহারও স্বপ্নেও প্রবেশ পায় নাই, এমন দিনে, _তখনকার নেই দুর্গম বর্ঘ অতিক্রম করিয়া, মেয়ের পিতৃভবনের আশে পাশে আবিয়া উপবানী পড়িয়। রহিতে অন্মত হইতেন না।

সমাগত পাত্রের অন্নাভাবে উপবানী থাকিতে, এমন কথ! বলা আমার উদ্দেশ্য,নহে। তাহারা উপবানী থাকিতেন উদ্বেল-হৃদয়ের আনন্দ-উচ্ছ্াসে, অথবা অনুষ্ট- পরীক্ষার অনিবাঁধ্য হাহৃতাশে | ইহার পর, কোন এক নির্দি্ দিবসে বৃহৎ একটা নভা হইত। সভার নাম স্বয়বর সভা আমন্ত্রিত পাত্রবর্গ সেই সভায় যাইয়া! গৃথক্‌ গৃথক্‌ মঞ্চে অথবা পৃথক্‌ পৃথক্‌ আসনে .উপৰিষ্ট হইতেন ; এবং ধীাহার বিবাহের জন্য এত ঘটা, তিনি তাহার রূপের ছটাঁয় সকলের চক্ষে ধাঁধ লাগাইয়া, একটি প্রগন্তবচনা বৃদ্ধা পৌর-অঙ্গনার বঙ্গে, সভার মধ্য- স্থল দিয়া,দেহবদ্ধ দামিনী কিংবা ক্ফুটিত-পুজ্পাভরণা চলন্ত

বিবাহ কত গ্রকার। ১5১

লতার মত, চলিয়া! যাইতেন। পরিণয়ণার্থী পাত্রগ্নণ তাহার দিকে চাহিতেন, তিনিও সলজ্জচকিত, সরোজ- চক্ষে তাহাদিগকে একটু একটু দেখিয়। লইতেন। সঙ্গিনী উপমাতা নে সময়ে একে একে প্রনিদ্ধ পাত্রগণের রূপঃ গুণ সাংলারিক সুখ-সম্দ্ধির বর্ণনা করিতেন; এবং কন্তা, তাহা কান ভরিয়া! শুনিয়া, নে বর্ণনায় ত/হার হৃদয় আক্ুষ্ট না হইলে, পাত্রান্তরের সান্নিধ্যে যাইয়া উপ- স্থিত হইতেন। পরিশেষে, ধাহার ূপ তাহার হৃদয়কে স্পর্শ করিত, অথব। বাহার গুণ-গরিমার বর্ণনা তাহার প্রাণে ভাল লাগিত, তাহার গলায় ফুলের মালা দোলা- ইয়। দিয়া, উত্নবের হল-হলার মধ্যে ঘরে ফিরিয়া আনিতেন। রভাস্থ পাত্রদিগের মধ্যে এক জন ভিন্ন আর নকলেরই বেশ-তুষা এবং উচ্ছলিত, আশা! তখন বিফল হইত | নেই ব্যর্থমনোরথ, বিষঞ্ন যুবাদিগের তদা- নীন্তন দুঃখের অবস্থা বুঝাইবার জন্গা, পূর্বতন স্বয়ত্বর-বর্ণ- নার একটি শ্লোক এখানে উদ্ধৃত করিব।

সঞ্চারিণী দীপশিখেব রাত্রৌ

যং যং ব্যতিয়ায় পতিংবরা সা।

নগেক্জ্মার্গাউ ইব প্রপেদে

বিবর্ণভাবং নস নস তৃমিপালঃ &

১০২ গ্রমোদপহরী

অর্থাৎ।স্প [ও নিশীথে চলম্ত দীপ-শিখার আভায়,

ক্ষণ হানি” রাঁজ-পথে, গ্রাসাদ-নিচয়,

ডোবে অন্ধকারে ত্যজি গেল৷ রাঁজ-বালা যাদেরে সভায়ঃ ভুবিল তেমতি দেই যুবরাঁজচয় বিষাদ-আধারে | মনুর আট প্রকার বিবাহের মধ্যে ম্বয়ংবর বিবাহের

উল্লেখ নাই। কিন্তু, উহা গান্ধর্ধ বিবাহেরই প্রাকারান্তর, অথবা নীরব-গান্ধর্ব নামে নির্দিষ্ট হইবার যোগ্য গান্ধর্ক বিবাহের মুখ্য কথা পরস্পর অনুরাগ | পাত্র যখন বর- বেশে সুসজ্জিত হইয়া, বিবাহের সভায় বিয়া, গৎমুক্য দেখাইতেছেন, তখন অবশ্যই বুঝিতে হইবে যে, তিনি অনুরাগের টানে পড়িয়া আধ" পাগল হইয়াছেন পক্ষা- স্তরে, কন্যাও যখন, সহঅজনের মধা হইতে, এক জনকে তাহার প্রাণ-প্রিয় জ্বানে বাছিয়া লইতেছেন, তখন বুঝিতে হইবে যে, তাহাতে তিনি অনুরাগিণী। বীহারা স্বয়বর বিবাহকে নীরব-গান্ধর্ব বলিয়া গ্রহণ করিতে অনম্মত, তাহারা সম্ভবতঃ উহাকে একতরফা গান্ধর্ক বলিয়া গ্রহধ করিতেও সম্মত হইবেন না। কেন না,

বিবাহ কত প্রকার ১৫৩

গান্র্কের টান শাশ্রমতে ছুই দিকে বমাঁন। যদি ন্বয়ংবর বিবাহ গান্ধর্কের মধ্যে নিবেশিত হইতে না পারে, তবে উহা নিবিষ্ট হইবে কিসে ?

শৌর্যবরণ বিবাঁহও কিয়দংশে স্বয়ংবরের মত। শ্বয়ং- বরে যেমন শ্বত শত পাত্রের মমগম হয়, শৌর্্যবরণেও দেশ দেশাস্তর এবং দিগৃদিগন্তর হইতে সুরূপ কুরূপ, সক্ষম অক্ষম, এবং সমৃদ্ধ দরিদ্র গ্রভৃতি শত শত পাত্রের আগ্ধমন হইয়া থাকে কিন্তু, স্বয়ণবরে বরণ করে কন্যা স্বয়ং শৌর্য্যবরণে বরণ হয় বরের প্রত্যক্ষ কর্ম্মফলে | কন্যার পিতা মাতা, অথবা কোন কোন স্থলে কন্য। আপনি, বরের শৌর্্য পরীক্ষার জন্য, কোনরূপ উৎকট প্রতিজ্ঞা করিয়া, তাহ! বর্ধত্র ঘোষণ! করিয়া দেন $ এবং নগাগত পাত্রদিগের মধ্যে ধিনি দে প্রতিজ্ঞার নিয়মানু- মোদিত কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, পিতা ষাতা। তাহা” কেই কল্যান করিয়া থাকেন, কিংবা কন্য। আপনিই তাহাকে বর-মাল্য দিয়া, পতিরূপে বরণ করেন।

অধোধ্যার লক্ষ্মী জানকীকে আজও লোকে ধনুক- ভাঙ্গ। ধন বলিয়া আদরের ভাষায় বর্ণনা করে। কেন না, রঘু-কুল-তিলক শ্রীরামচন্্, মিথিলাধিপতি জনকের হর-ধনু-ভম্বরূপ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ পরীক্ষায়, আপনার অপ্র-

১০৪ প্রমোদলহরী

তিম শৌর্য্যপ্রাদর্শন করিয়া, জানকীকে লাভ করিয়া- ছিলেন। মহাভারতের মুখ্যতত্বরূপিণী দ্রৌপদীও, গ্রতি- জ্ঞার নিয়মানুদারে, পাগুবের সঙ্গিনী হইয়া, পিতার রাজ-প্রানাঁদ ছাড়িয়া, এক কুম্তকারের কর্মশালায় আশ্রয় লইয়া ছিলেন যে ধুরদ্ধর পুরুষ, ঘেই লোক-সমুদ্রের মধ্যে ধনুর্বাণ হস্তে দণ্ডায়মান হইয়া, ভ্রপদের প্রতিজ্ঞার অনুরূপ, লক্ষ্যভেদরূপ পরীক্ষা দ্বারা, আপনার অলৌকিক শৌর্্যের পরিচয় দিয়াছিলেন, কে তাহাকে অজ্জুন বলিয়া জানিত? দ্রৌপদীর চক্ষেও তিনি তখন এক দীন- দরিদ্র ব্রাহ্মণ কিন্ত, দীন-দরিদ্র হইলেও তিনিই তাহার পতি এবং সুতরাং জীবনের গতি তিনি যখন নিয়ম নুনারে প্রতিজ্ঞ'ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তখন তিনি রাজা হউন, কিংবা রাঁক-পথের ভিখারী হউন, তাহাকে ঠেলিয়া ফেলায় এমন শক্তি কার ? স্বয়ংবর বিবাহে যে গান্ধর্বভাবের একটুকু ছিটা ফোটা প্রক্ষেপ আছে, তাহা পূর্বেই বলিয়াঁছি। শৌর্্য- বরণে ঈ্* নে ভাঁবের নুদূরলম্পর্কও পরিলক্ষিত হয় না। ₹* শৌধ্যবরণে আগে শুধু ধনু্িদ্যা অথবা রণঃনৈপুণ্যেরই পরীক্ষা হইত। কালক্রমে, নাধারণত বিদ্যাবুদ্ধি এবং বিচাবুনৈপুহধ্যর পরীক্ষাও উহা'র অঙ্গীতৃত হইয়া ছিল।

বিবাহ কত প্রকার | ১০৫

ইহাকে তবে মন্ুসংহিতার ব্যবস্থানুসাঁরে কোন্‌ গ্রকা- রের বিবাহ বলিয়া নির্ধীরণ করিবে?

পৃথিবীর আরও অনেক প্রকার বিবাহ, মন্ুর লিখিত আট প্রকারের বহিভূতি। অথচ, নে সকল বিবাহও সর্বাংশে এবং জন্পূর্ণরূপেই বিবাহ-পদ-বাচ্য। কেন না, বিবাহে যাহা চাই, অর্থাৎ জীব-প্রবাহ, জীবনের সুখ-ছুঃখ-প্রবাহ, এবং সঙ্গে সঙ্গে জীবন-যাত্রা-নির্বাহ সম্ভাবনানুরূপ সংবাহ, নে সমস্তই সকল বিবাহে সমান লক্ষিত হইয়। থাকে | আমি এখানে দিপ্াত্র প্রদর্শনের জন্য তাদ্শ কএক প্রকার বিবাহের উল্লেখ করিব বাহারা বাদার্ধে পণ্ডিত, তাহার! মনুর ব্যবস্থা এবং বিবাহবিষয়ে পৃথিবীর প্রকৃত অবস্থা মিলাইয়া লইয়া বিচার করিতে পারেন।

১ম | টৈংহিক বিবাহ | নৈংহিক এই নামটি অবশ্যই র্ধাংশে নৃতন | এই প্রাবন্ধে এই রূপ আরও অনেক নৃতন নাম নংকলিত হইয়াছে কিন্তু নাম নূতন বলিয়া বিব- রণও নূতন নহে। বিবাহসংক্ৰান্ত যে কল বিবরণ এই প্রাবন্ধে এক একটি নামের বিষয়ন্বরূপ বিস্তাস্ত হইয়াছে, তাহার সমস্তই বহুকালের পুরাতন বৃত্বীম্ত | সুতরাং নামে কিছু আনে যায় না। বিবরণের প্রকার-ভেদ্

১৪

. ১৬ গ্রমোদলহরী |

লইয়াই প্রকৃত কথা এখন সৈংহিকেরই কথা কহিব। উহা বহুংখ্য অনভ্য জাতির মধ্যে বিশেষ প্রচলিত, এবং অনভ্যদিগের মধ্যে যাহারা বীর,তাহাদিগের চক্ষে নিতান্ত আদৃত। ইহার প্রধান লক্ষণ এই,_যুবতী যখন পরিণয়- যোগ্যা, তখন তাহার প্রণয়াভিলাষে দুইটি কি তিনটি বলিষ্ঠ যুবা তাহার পাশে পাশে বিচরণ করে, এবং কোন রূপ নির্জন স্থানে, স্ুযোগ্ন পাইলেই, যুবতীকে আপনাদি- গের পৌরুষ দেখাইবার জন্য, আপনারা এক জনে আর এক জনকে নিংহের বিক্রমে জড়াইয়! ধরে। বল! বাহুল্য যে, এই রূপ ছন্দযুদ্ধে বাহার পরাজয় ঘটে, দে আপনা হইতেই, প্রাণের আশায় প্রণয়ের লাঁলদা পরিত্যাগ করিয়া, এক দিকে মরিয়া পড়ে, এবং যুবতী জয়শীল পুরুষকেই নর্বতোভাবে পতি জ্ঞান করিয়া, নিঃশব্দে তাহার অনুমরণ করে।

সিংহীর সিংহলাভও ঠিক এই পদ্ধতিতেই সংঘটিত- হয়| নিংহী বনের মধ্যেঃ কোন রূগ ঝোপের আ- ডালে, অলন-মধুরা মানিনীর মত; এলায়িত ভাবে, নীরবে বসিয়া দেখে ; এবং দুইটা প্রমত্ব সিংহ, নখরে দস্তগ্রহারে, একে অন্যের প্রাণ লইয়া, দেই এক ভয়- ক্কর খেলায় প্রমত্ত রহে | ছুইয়ের মধ্যে যেটা জয় লাত

বিবাহ কত গ্রকার। ১০৭

করিয়া রণ-ডূমি অথবা বন-ভূমিকে নিংহনাদে কাপাইয়া তুলে, দিংহী আর এদিকে ওদিকে না চাহিয়৷ তনুহ্র্ড হইতেই তাহার সঙ্গে চলে

পাঠিক অবশ্যই বুঝিয়াছেন যে, রাক্ষসবিবাহের নির্দয় কন্যাহরণ কিংবা কন্যাঁপক্ষ-নির্থাতন, এবং সৈংহিকের শৌর্ষ্য প্রদর্শন, উদ্দেশ্য পরিণামে, বড়ই পৃথক সৈংহিক বিবাহের সহিত বরং শৌধ্যখরণ বিবাহেরই কতকটা মাদৃশ্য আছে। কিন্তু, ধাহার1 পৃথিবীতে দয়াধর্্ম পৌরুষী শক্তির আশ্রয়ন্বরূপ প্রক্কৃত শুর বলিয়া! পুজা পাইয়াছেন, তাহাদিগের ইহাতে লজ্জিত হইবার বিষয় কি? পুরুষের মধ্যে অনেকে যখন, প্রেমের গাসজে, চকোর চাতকের সঙ্গে নিজ নিজ পিপাসু প্রাণের তুলন। করিয়া, প্রীতি লাভ করেন, তখন যে সকল পুরুষ- বিংহ গৃথিবীতে একটুকু উচ্চ পদবীরডঢ় বলিয়। দশ জনের মধ্যে গণ্য মান্য, তাহার] যে, দৈংহিক বিবাহের সার রসটুকু আকর্ষণ করিয়া, শৌর্্যবরণপ্রথায় অনুরাগী হই- বেন, ইহাতে বিস্ময়ের কথা কি?

২য়। মানুরিক বিবাহ 1_ ইহাতে ম্বগেক্জের সহিত গ্রাতিদ্বন্ী মৃশ্েন্ত্রের নখ-দন্ত-গ্রহার*লক্ষিত মহাযুদ্ধের কোন সম্পর্ক নাই,_তজ্জন নাই, গজ্জ্ন নাই, তরু

১০৮ গ্রমোদলহরী |

লতার নিম্পেষণ নাই, আছে শুধুই মনুরের মোহন নৃত্য, মনোমোহন ঠাম | মনুর যেমন মঘুরীর মন ভুলাইবার জন্য, পাখা ছড়াইয়া, পেখম ধরিয়া, ঘুরিয়া ঘুরিয়া নৃত্য করে, মাঝুরিক বিবাহের বরও, মাথায় বিবিধ বিহঙ্গের বর্ণবিচিত্র পক্ষরাজিতে বিভূষিত হইয়া, কটিতে কাচের মালা পরিয়া, করে ঢাঁল বড়শা ধারণ করিয়া, পাত্রীর সান্নিধ্য, পর্বনিদ্দিষ্টি কোন দিবসে, বরবেশে নাচিতে প্রবন্ধ হয়। পাত্রী লঙ্জায় নত্মুখী। নে যাহা কিছু দেখে, তাহা অবনত চক্ষে; যাহা কিছ কহে, তাহা সমানবয়স্কা সখীর মুখে পাড়ার মেয়ের! তাহারে ঘেরিয়া বনে, বর তাহার কাছে নাচিয়া নাচিয়া, যেন সে নৃত্যের ভঙ্গিতে তাহার হৃদয় যাচিয়া, আপনার শ্রীবা, বক্ষ বাহু প্রভৃতি অক্প্রত্যঙ্ষের শোভা প্াদর্শন করিতে রহে।

পাত্রী, কখনও কখনও প্রৌঢার মত লজ্জার সমস্ত . শান পাঁনরিয়া, বরকে তদীয় পৃষ্ঠপ্রদর্শনের জন্য ফিরিয়া ঘুরিয়া নাচিতে উপদেশ করে ; এবং বরও সেই মুহূর্তেই আদিষ্ট প্রণালীতে পৃষ্ঠের পরিপুষ্টি দেখাইয়া, অধিকতর উৎসাহের সহিত নাচিতে থাকে যখন বরের তাদৃশ নৃত্যদর্শনে পাত্রীর মন প্রাণ উথলিয়া উঠে, তখন

বিবাহ কত প্রকার ১০৯

মে সখীর্দিগের নঙ্গ ছাঁড়িয়।, দৌড়িয়া। গৃহান্তরে চলিয়া যায়, এবং পাঁড়ার মেয়েরা অন্যান্য পৌর-জনেরা তাহার পিছু পিছু ধাবিত হয়। পাত্রীর অবস্থা তখন কতকটা জুরিপতির অবস্থার মত। কারণ, তখন তাহার মুখে যাহা বাহির হইবে, বেচার। পাত্রের অদৃষ্টফল- বিচার দশ্বন্ধে তাহাই চরম নিম্পভি |

আফ্রিকার অনেক অদভ্য জাতি উল্লিখিতরূপ মানুর বিবাহের বিশেষ পক্ষপাতী | তাহারা, পা ত্রীর গৌরব রক্ষার্থ তদীয় পিতা মাতাকে, আর্ধপ্রথার অজ্ঞাত অনুকরণে, চারি পাচটি গোরু প্রীতির উপহার স্বরূপ দিয়া থাঁকে। পাত্রী যদি বড় রূপদী হয়, তাহ! হইলে গোরুও অবশ্যই বেশী দিতে হয়। এইরূপ আদান প্রদানে তাহাদিগের নিন্দা নাই.) বরং প্রশংসা আছে। বরের এই প্রশংযা যে, সে বেশী দিতে পা- রিল; কন্যার এই প্রশংসা যে, নে বেশী পাওয়ার যোগ্য হইল |

উল্লিখিত অমভ্যেরা বহুবিবাহেও অনুরক্ত যে অন্ততঃ দুই তিনটি বিবাহ করিতে অসমর্থ তাহার স্ত্রী, দরিদ্রের গৃহিণীর ন্যায়, সকল অময়েই দশ জনের কাছে ল্লান-মুখী | কেন না, তাহার ম্বামীকে দে বই

১১, গ্রমোদলহরী।

আর কেহ আদর করিল না| কিন্তু এই বহুবিবাহ এবং কন্যার বিনিময়ে বু গো-দান সত্বেও, বর-নির্বাচনরূপ মুখ্যকার্ধ্য মানুর-বিবাহের প্রাকৃত পদ্ধতিতেই লল্পাদিত হয়। হা মরুর! মনুষ্য কত স্থানে, কত প্রকারে, তোমার মনোহর নৃত্যের অনুসরণ করিয়া» জীবনে কুতার্থ হইবাঁর জন্য, আজও যত্বশীল হইতেছে, তাহা কি তুমি জান ? জানিলে বোধ হয়, তুমি কখনও তোমার প্রিয়রগ্ন পেখম ছাড়িয়া, পায়ের দিকে চাহিয়া, বিষাঁদে মলিন হইতে না।

ওয়।_ ম্থগয়িক বিবাহ | ইহাতে দৈংহিকের সাহসি- কতা আছে, রুধির-ধারা! নাই + মানুরিকের মধুরতা আছে, নৃত্যের কোন অবকাঁশ নাই। এইরূপ বিবাহ আঘি- যার মধ্যখগুবানী তুরঙ্গবিলাদী তুর্কমান তাতারদিগের মধ্যেই অধিক প্রচলিত। ইহার বর কন) উভয়েই, রজঃপুত যুবক যুবতীর ন্যায়, অশ্বারোহণে পটু বর কন্যার পিতামাতার মধ্যে বিবাহের কথা চলিলে, এক দিন বু লোকের জ্ঞাতদারে, গ্রামের অদূরে, বড় একটা প্রান্তরে, ঘোড়দৌড় দেখার মত বৃহৎ ঘটা হয়। দেশের দুপ্ধ-পোষ্য শিশু অবধি দুলিত-চর্ম্া বৃদ্ধপর্য্যস্ত অসংখ্য লোক, দেই ঘটা দেখিবার জন্য, প্রাতঃসময় হইতে ক্রমে

বিবাহ কত গ্রকার। ১১5

ক্রমে সেই মাঠের চারি দিকে আনিয়া জড় হইতে থাকে

ইহার কিছু ক্ষণ পরেই, বাত আটটি সুসজ্জিত যুবতী, বড়বড় তেজন্বী ঘোড়ার উপর ওয়ার হইয়া,-যেন শক্তি সৌন্দর্য্যের সম্মিলিত মাধূর্য্যে দর্শকরন্দের চক্ষে চমক লাগাইয়া, সেই প্রান্তরের এক প্রান্তে আদিয়৷ দেখ! দেয়। বিবাহের কন্যাও নাত আটটির মধ্যেই একটি অন্যের! তাহার মর্্নসুখের অংশিনী নর্দ্সখী। কিন্তু কন্যাকে চিনিয়া লইবে কি প্রকারে ? সকলেরই নমান রূপ, সমান বয়ন, আজি বিবাহের উত্নবে বমান নাজনজ্জা,_করে চারুদৃশ্য চাবুক, কপোলে নিবিড়-কুফ ভ্রমর-পংক্তির ন্যায় মৃদুল দোলায়িত চুর্ণকুম্ভল, অধরে হালি, নয়নে গুসুক্য এবং সমস্ত মুখচ্ছবিতে লজ্জার অরুণরাগ | তাই বলিয়াছি, যেটি বিবাহের কন্যাস্তাহাকে চিনিয়া লইবে কি প্রকারে ? চিনিবার এক বিচিত্র চিহ্ন আছে। কন্যার কোলে একটি বদ্যোমৃত স্বগ-শিশু। বঙ্গের কোকিল-কবি, গুণাকর ভারত তদীয় নায়িকার রূপবর্ণনায় কহিয় গিয়াছেন,_

“কাড়ি নিল স্বগ-মদ্ নয়নহিল্লোলে, কাদে রে কলঙ্কী চাদ মগ ল'য়ে কোলে ।” যদি এখনকার কোন নূতন গায়ক সৃগ্নয়িক বিবাহের

১১২ গ্রমোদলহরী |

এই মধুর কাহিনী ভারতের কষ্ঠানুকরণে কবিতায় গাই- তেন, তাহ। হইলে তিনি হয় কহিতেন,_ গ্রশিশু কোলে ঢাঁকি মধুর ঘোহাগে, পাতিয়া প্রেমের ফাদ, হানে অকলঙ্ক টাঁদ, পার যদি ধর শিয়া নব অনুরাগে,

--পারিলে কাড়িয়া নেও ম্গ-শিশু আগে।

কন্যার কোলে, নেতের অ"চলে, মৃগ্র-শিশুর ম্বতদেহ ঢাক! রহিয়াছে | নেটিকে কাড়িয়া নিতে পারিলেই বিবাহ বিদ্ধ হইল কিন্তু, সে অশ্থারূঢ়া অবদ্ধকুন্তল। বিদ্যাধরীর অঙ্ক হইতে, তাহার অঙ্কের ধন কাঁড়িয়] নেওয়া যে নে যুবার কাধ্য নহে।

কন্যা! যেমন.অখীমগ্ডলে পরিরৃত হইয়া, হাতে চাবুক লইয়া, অশ্বপৃষ্ঠে থাকিয়া, আড়নয়নে এদিক ওদিক চাহিয়া দেখিতেছে, বরও সেইরূপ, সেই প্রান্তরেরই আর এক স্থানে ? সমানবয়স্ক যুব-জনে পরিরৃত হইয়া, অশ্বপৃষ্ঠে থাকিয়া, বৃদ্ধদিগের ইঙ্গিতের প্রাতীক্ষা করিতেছে যেই সেই ইঙ্গিত পরিব্যক্ত হইল, কন্যার দল অমনি, তীর, তার! উ্কাপাতকে অবজ্ঞা করিয়া, তড়িছেগে ছুটিল, এবং বরপক্ষও ততোধিক উদ্যমে”_-ততোধিক উৎসাহে,

বিবাহ কত প্রকার। ১৪৬

ঘোড়া চালাইল | যখন বর যাইয়া কন্যাকে ধরিয়া তাহার কোলের দেই ম্বগ-শিশু কাঁড়িয়া লইল, তখন চারিদিকে জয়ধ্বনি পড়িল, এবং বিবাহের প্রাথমিক অনুষ্ঠান সিদ্ধ হইয়া গেল।

বাহারা বঙ্গদেশে বরবেশে অলন্কত হইয়া, বুকে চুলের চেইন আর ফুলের মালা দোলাইয়া, রূপের বাহার দেখাইয়া থাঁকেন, তাহারা এই রূপ রিবাহে অগ্রয্পর হইতে ঘম্মত হইবেন কি না, পে বড় কঠিন অমক্যা। যে সকল যুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিধ পরীক্ষায় উচ্চ শ্রেণির “পাশ” বলিয়। পুরমহিলাদিগের কাছে বিখ্যাত, তাহারাঁও হয়ত মৃৃগয়িকবিবাঁহের কথা শুনিলেই মাথা নোয়াইয়। বনিয় থ্রাকিবেন। কারণ, পরীক্ষা শিকৃলি- বান্ধ। টিয়া কিংব। পিঞ্জর-রুদ্ধ পাহাড়িয়া, ৮৪ মুখস্থ পাঠের পরীক্ষা নহে।

যে স্থান হইতে বদস্তের বিনোদ্র-মমীর মাত হয়, নেই চির-মনোহর মলয়-্বীপে এবং আরও কোঁন কোন রমণীয় উপদ্বীপে অশ্বারূঢা সুন্দরীর রঙ্গে এই রূপ ঘোঁড়- দৌড় পরীক্ষার প্রথা আছে। সুন্দরী ঘোড়ায় চড়িয়া এক দিকে উড়িয়া! যায়, বরও তাহার আচল পরিবার ন্নন্য আকুল হইয়া আপনার ঘোড়ায় উন্মত্ের মত্ত

" ঠ্ছ

১১৪ গ্রমোদলহরী |

চাবুক লাগায় কোন কোন জাতির মধ্যে, কন্যা ঘোড়ায় উঠিতে সাহন না পাইয়া পদ-ব্রজে পলায়ন করে, এবং বনে কিংবা উপবনে লুকাইয়৷ থাকে; বর তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিবার জন্য, ঝোৌপে জঙ্গলে ঘুরিয়া ঘুরিয়া, অথবা গ্রামের নিকটবন্তি বনের মধ্যে দৌড়িয়া দৌড়িয়া, পরিশ্রান্ত হইয়া পড়ে। কিন্ত মগ কাড়িয়। লইবার প্রথাটা শুধু মধ্য আনিয়াতেই দৃষ্ট হয়। মগরিক বিবাহ, মনুর মতে, কোন্‌ নম্বরের অন্তর্গত হইবে? ইহাকে গ্রান্ধর্ব বলিতে পারি না। কেন না, কন্যা ধরা পড়িবার আগে বরে অনুরাগিণী হয় না। অপিচ, যদি যে অশ্বরজ্জু শ্রথ করিয়া! আপনা হইতে ধরা দেয়, তাহা হইলে সমানবয়স্কা যুবতীদিগের মধ্যে তাহার নিন্দার আর পরিণীমা থাকে না। ধর্থ।' মদিরিক বিবাহ |--মদিরেক্ষণার পীতাব- শিষ্ট পিয়ালা হইতে, পিতা মাতা প্রভৃতি গুরুজনের' নামিধ্যে, মদিরারূপ মহীপ্রপাদ গ্রহণই বিবাহের মূল- মন্ত্র অথব! মুখ্য কার্ধ্য | বিবাহের প্রথা ভারতের প্রান্ত- স্থিত পর্বতবানী বহুমংখা জাতির মধ্যে বিশিষ্টরূপে সম্মা- নিত। ইহার অভ্যন্তরে অবশ্যই অনুজ্ঞাত গান্ধর্ধের বিশেষ গন্ধ আছে। কেন না, বর কন্যার মধ্যে পরস্পর

বিবাহ কত গ্রকার। ১১৫

অতি প্রবল অনুরাগের পূর্তলক্ষণ প্রক্ফুট না হইলে, 'পরি- বারস্থ আর কেহই বিবাহের কথা মুখে আনে না।

যখন পিতা মাতা, কোথাও নে অনুরাগের অশিষ্ট, কোথাও বা বিশিষ্ট পরিচয় পায়, তখন তাহারা একটি দিন নিরূপণ করিয়া, গুণয়-লোলুপ বর, বরের আত্মীয় স্বজন এবং পাড়ার দশ জনকে আমন্ত্রণ করিয়া বাড়িতে লইয়। আইনে নকলে যে নময়ে না করিয়া উপবিষ্ট হয়, বিবাহের কন্তা নেই অময়ে, খোঁপায় বন-ফুলের মালা পরিয়া, অধর-রান্তে অনল্পবিকদিত বন-ফুলের মধুর হানি হানিয়া, জননীর ইঙ্গিতক্রমে, বরের উত্নন্গে যাইয়া উপবেশন করে ইহাঁর পর জননী এক পিয়ালা মদিরা আনিয়৷ কন্যার হাতে তুলিয়া দেয়। কন্া বরের বাম হস্তের কনিষ্ঠাঙ্থলির মহিত আপনার দক্ষিণ হস্তের কনিষ্ঠাঙ্ুলিটি ভঙ্গিক্রমে জড়াইয়া মোড়াইয়া, *লজ্জায় যেন মাথা নোয়াইয়া, অমাগত প্রাচীনাদিগের উপদেশ- ক্রমে, আগে আপনি একটু খায়, এবং যাহা অবশিষ্ট থাঁকে, তাহ বরকে আদর করিয়। দেয়। বর মে প্রনাদ- পানে প্রীত কৃতার্থ হইয়া,_তাহার সে নবোঢা যুব- তীরে তখনই মক্গে লইয়া;_উপস্থিত অভিভাবকবর্গের পায়ে লুটাইয়া পড়ে।

১১৬ প্রমোদলহরী।

ভূমিলুষ্ঠন নিশ্চয়ই হৃদয়ের আনন্দ-জনিত; মদ্দিরার উত্তেজনা-জনিত নহে। কেন না, পরিণয়বন্ধনের প্রথম পিয়ালায় বেশী মদ্দিরা দেওয়ার প্রথা নাই। কিন্তু বিবাহটি তথাপি মদ্িরিক বলিয়াই বর্ণিত হইবার যোগ্য কারণ, বর কন্যা যতক্ষণ রূপ এক পিয়ালায় মদিরা পান না করে,ততক্ষণ তাহার পতি পত্বী, এবং এক পরি- বার কিংবা এক “কিলি' বলিয়। গণ্য হইতে পারে না। মদিরিক বিবাহও মনুর তালিকার বহিভূর্তি। মনুর প্রমত্ত পৈশাচিক, প্রণয়-ঞমোদময় মদিরিক বিবাহ হইতে বর্বথা পৃথক্‌।

৫| পৈষ্টিকবিবাহ | এটি বড় সুন্দর | ইহা মদ্রিরিক বিবাহেরই আর এক মৃত্তি। মদিরিক বিবাছে মুখে তুলিয়] দিতে হয় একটুকু মদ্য; পৈষ্টিকবিবাহে মুখে তুলিয়া দিতে 'হয় একটু সুমিষ্ট পিষ্টক। পদ্ধতিটা বহিঃস্থ লোকদিগ্ের গ্রীতিকর হউক আর না হউক,বর কন্তার অবশ্যই নিতান্ত প্রীতিপ্রদ। বর কন্ত। যদি বয়নে নিতান্ত কাচা! হয়, তাহা হইলে তাহাদিগের পক্ষে ইহা মুকুলিত-প্রীতির এক অপূর্ব মঙ্ছৌৎসব। শান্ত্রে আছে”_

“কন্যা বরয়তে র্ূপৎ মাত! বিত্তং পিতা শ্রচ্তং ;

বান্ধবাঃ কুলমিচ্ছস্তি মিষীননমিত্বরে জনা |”

বিবাহ কত একার ৯১৭.

অর্ধ, কন্যার কামনা রূপে” গাতা খুঁজে ধন, বরে পিতা খুঁজে জ্ঞান, _জ্ঞাতি-বন্ধু কুল-মান ;- গুধুই মিষ্টান্রে রহে ইতরের মন। এবিবাহে সে মিষ্টান্নের ভাগটা বর কন্যার মধ্যে 1 বীর-চুড়ামণি রোমান জাতিই পৃথিবীতে উল্লিখিত রূপ বিবাহের প্রথম প্রবর্তক | পুরাতন রোমাঁনদ্িগের মধ্যে তিন প্রকার বিবাহ প্রচলিত ছিল ।৯% একটা অতিজঘন্য আনুরিক। তাহাতে কন্যাকে গোরু বাছুরের ন্যায় রীতিমত খরিদ করিয়া লওয়া হইত | আর একটা ব্যব- হার-নিদ্ধ | যাহারা স্বামী স্ত্রীর ন্যায় বার মাস একত্র বাস করিত, বমাঁজেও তাহারা শেষে স্বামী: স্ত্রী রলিয়াই

51100900766 011001656 100498 01 10977180667 (00%09580) 09970080 20 10900]0) 80৫ 0৪08, রঙ চি র্‌ “6 7৮ স2৪%261101008 0976100] 06007 621 10035888) 1 স100) ৪0 0. 28 82011060200 2. 1190191 08091010160. 80৫ 4171494 0৫৮60 1019 ৪1003080011 [01690 [19 100290 70, £

১১৮ গ্রমোদলহরী |

পরিগণিত রহিত | তৃতীয় পৈষ্টিক, এবং এই পদ্ধতিই সম্মানে প্রথমস্থানীয় বর কন্যা এই পদ্ধতির বিবাহে দশটি সাক্ষীর চক্ষের সম্মুখে উপবিষ্ট হইয়া এক সঙ্গে একটি পিঠা খাইত, এবং পিঠা খাওয়াটা হইয়া গেলেই, তাহার! বিবাহশৃত্বলবদ্ধ দম্পতির ন্যায় নকলের কাছে বিশিষ্ট বম্মান পাইত। কিন্তু উল্লিখিত পিঠা ভবানন্দ মজুমদারের বাঁড়ির_- চুষি রুটি রামরোট মুগের সামুলী কলাবড়া ঘিয়ড় পাপড় ভাঁজা পুলী ৮-_

অথবা এরূপ কোন উপাদেয় সামগ্রী নয়। পিঠার উপ- করণ সামান্য কিঞ্িৎ গম আর লবণ জল। যে বিবাহে এমন কদর্ধ্য পিষ্টকেই কার্ধ্য নির্বাহ হইত, সে বিবাহের বর কুন্যন প্রেমের রস-মাধু্য শিক্ষা বিষয়ে প্রথমেই কোন সুযোগ পাইত কি না, তাহা মংশয়ের বিষয় ।- নাবাজে! প্রভৃতি অনভ্যদিগের মধ্যে অদ্যাপি বিবাহে গুধু এই পিষ্টকভক্ষণের অনুষ্ঠানই পরিলক্ষিত হইয়া থাকে মনুর তালিকায় পৈষ্টিকেরও স্থান নাই।

৬ষ্ঠ। তাশ্বুলিক বিবাহ ।-ইহাও সর্বাংশেই মদি- রিক পদ্ধতির অনুক্তি কন্যাঁর জন্য বরনির্বাচন করে পিতা মাতা, এবং উত্নবের জন্য যাহা কিছু আয়োজন

বিবাহ কত প্রকাঁর। ৯১৯

চাঁই, তাহাও পিতা মাতাই মংগ্রহ করিয়! থাকে তার পর, বরপক্ষ কন্যাপক্ষের কলে যখন কন্যার পিতৃণৃহে ্রফুল্লচিত্তে উপবিষ্ট হয়, কন্যা তখন আধ” ধরাধরি অবস্থায়, বরের কাছে আনীত হইয়া, চারিদিকের দানন্দ কোলাহলের মধো, তাহার হাতে তাশ্বল তুলিয়া দেয়। সে তাম্থুলও, রোমানদিগের পিষ্টকের ন্যায়, সম্ভবতঃ নিতান্তই প্রীতিশোঁষক পিত্বর্ধক। ইহা! নিঃনংশয়ই বলা যাইতে পারে যে, উহা কোন অংশেও “মিঠা পাঁন- মিঠা গুয়া এবং কেয়া খর পাথরিয়া চুণের মিশ্রণ জনিত কোন মনঃপ্রিয় বন্ত নহে। কিন্তু দেশাচারের চির-পুজিত প্রথান্ুারে তাম্থুলদানই তনু'মন প্রাণ দানের প্রত্যক্ষ প্রমাণ, এবং নব-খিনির বহু জাতির মধ্যে শুধু উহাতেই পরিণয়ের চরম বমাধান ! মন্ুর তালি- কায় তান্'লিক বিবাহেরও উল্লেখ নাই। থাকুক বা নাই থাকুক, যখন তাথ্'লিক পদ্ধতিও বিবাহের অনন্ত পদ্ধ- তির মধ্যে একট। বলিয়া পরিচিত, তখন যার তার হাতে, হাতে হাতে, তাম্কুল দান করা! কর্তব্য কিনা, তীব্রদর্শনা নব্য ললনার। তাহার বিচার করিবেন

এম। তাঙুলিক বিবাহ ।-ইহার নামট। তাশ্বলি- কের মত ভ্রুতিমধুর হইলেও অনুষ্ঠানটা মোটের উপর

১২১ _. গ্রমোদলহরী।

অতি নীরস? উড়িম্যা প্রদেশে যুয়ঙ্গ নাগে এক জাতি আছে তাহার! ধর্মে সুর্যোপাসক, জীবনের নিত্য কর্মে ভার-বাহক। তাঙুলিক বিবাহের প্রণালীট। তাহাদিগ্রের মধ্যেই পরিলক্ষিত হইয়া থাকে কন্যা তাহাদিগের মধ্যে ঘরের কোন খবর লয় না| . কিন্তু বর মনোমত কন্যার অন্বেষণে, এখানে ওখাঁনে, কিছু কাল ঘুরিয়া বেড়ায়। যখন স্বজাতীয় কোন পাথুরে পুতুল তাহার প্রাণে বড়ই শ্রীতিকর বোধ হয়, তখন দে তাহার অভিভাঁবকদিগের নিকট নে কথা প্রকাশ করে। অভিভাবকেরা বরের মনোগত ভাব বুঝিতে পাইয়া, ঘটকতার জঘ্য কন্যার পিতৃগৃহে যাইয়া উপস্থিত হয়, এবং কন্যার পিতা মাতা প্রস্তাবিত বিবাহে গ্রীতির বহিত সম্মত, কি.না, কথাটা ভাল করিয়৷ বুঝিয়া লয়।

বিবাহের নিরপিত দিবনে বর কন্যার পিতৃগৃহে আইনে না; বরপক্ষীয়েরা ঘটার সহিত আনিয়৷ কন্যাকে বরের গৃহে লইয়া যায়; এবং রূপ লইয়া! যাইবার পূর্বে, কন্যার কাছে বরের উপহার বলিয়া, অল্প কিছু তুল মাপিয়া দেয় | বরের মে তগুলগ্রহণই, বিবাহে, পতিত্বের বরণ। যে এত ক্ষণ ঘরের কন্য! ছিল, নে উল্লি- খিত রূপ তুল গ্রহণের পরক্ষণ হইতেই পরের পত্রী হইল,

বিবাহ কত প্রকার ১২৯

এবং পত্বী সাজিয়া৷ জন্মের মত পরের ঘরে চলিল। বিবাহের আর কিছু বাকী রহিল ন1।

বরের গৃহেও সে দিন আহারাদির ঘটা ইন উত্পব ভিন্ন বিবাহের আঁর কোন অনুষ্ঠান নাই। গৃহে নব-বধুর রমাগম হইলে বাড়ির সকলে যে রূপ আমোদ লইয়া অধীর রহেঃ বরের পিতা! মাতা এবং আত্মীয় শ্বজ- 'নেরাও বে দিন শুধু সেইরূপ আমোদ লইয়াই আল্ম- বিস্বত। কেন না, বিবাহের ভাবন| পূর্বেই চুকিয়া গিয়াছে কন্যা যে বরের তগুল গ্রহণ করিয়াছে? তাহা- তেই বিবাহ সিদ্ধ হইয়াছে, এবং মে ুভপংবাদ পূর্বেই বাড়িতে পৌহুছিয়ছে। এখন বাকী কেবল আমোদ- আহ্বাদ নৃত্যগীত।

কন্যার পিতা মাতা এবং ভাই ভখিনীরাও বিবাহের দিবন কন্যার সঙ্গে বঙ্গে বরের গৃহে অবস্থান করে, এবং মেখানকার নৃত্যগীতে দশ জনের সঙ্গী হইয়া কন্যার নহিত বশ্বন্ধচ্ছেদের ছুঃংখটা ভুলিয়। রহে যখন পে সুখের নিশ। সুপ্রভাত হয়, তখন বর, তাহার বাসর-গৃহ হইতে বাহির হইয়া, শ্বশুর শাশুড়ীকে তিন পাত্র তগুল দিয়! বিদায় করিয়। দেয় 1

বিবাহের আরম্তে তুল, উপসংহারেও তগুল ; সুতরাং ১৬৩

১২২ প্রমোদলহরী।

ইহ অর্জতোভাবেই তাঙুলিক | কাহার! মনুর গীক টিপ্ননী লইয়াই ব্যাপৃতঃ তীহার। হয় তাগুলিক বিবাহ- কেও আন্ুরিক বিবাহেরই আর একট] নাম বলিয়া নির্দেশ করিতে ইচ্ছা করিবেন। কিন্তু, আশ্গুরিক বিবা- হের অযশশ্য অধর্্য অর্থদান, আর তাগুলিকের নিয়ম বদ্ধ তগুলপ্রদান প্ররৃতপ্রন্তাবে এক কথা নহে কারণঃ কন্যাকে অন্ন আর বশ্রদ্ধারা আদর করা, বিশেষ দুই এক প্রকার ছাড়া, সাধারণতঃ সকল প্রকার বিবাহেরই অঙ্গম্বরূপ অপিচ, কন্যা কিংবা কন্যার পিতা মাতাকে বিবাহের নময় কোন রূপ উপকার করিলে, অথবা কোন, বস্তু উপহার দিলে, সে উপকার কিংবা প্রীতি শ্রদ্ধার বে সামান্য উপহারও যদি আসুরিক অনুষ্ঠানের অন্তর্গত হয়, তাহা হইলে পৃথিবীর অধিকাংশ বিবাহই আস্ুরিক |

৮ম। ঘৌত্রিক বিবাহ |_এই বিবাহের মুখ্য অনু- ষ্ঠান, বর-কন্যার হস্তে, মন্তকে কিংবা শ্রীবাঁদেশে, সুত্র- বন্ধন। কথিত নুত্র কোথাও শ্বেত, কোথাও গীত এবং কোথাও বা লোহিত। কিন্তু বর্ণ আর উপাদান যাহাই হউক না কেন, সুত্রের মহিমা বড় বেশী। পিতা মাতা কিংবা পুরোহিত যখন বর কন্যাকে হাতে হাতে কিংবা গলায় গলায় এক নুতায় বন্ধন করে, তখন: নৰ-

বিবাহ কত প্রকার। "১২৩

লেরই মনে স্বভাবতঃ নানাবিধ মধুর ভাবের সঞ্চার হইতে থাকে। মনে লয়, বুঝি ছুইটি প্রাণ, ছুটি পঙ্গীর মত, দুই দিকে উড়িয়া যাইতেছিল ; কেহ' তাহাদিগকে ধরিয়া আনিয়া, এক সুতায় বীধিয়া, এক পিঞ্জরে ভরিয়া রাখিল | বন্ততঃঃ বিবাঁহের সহিত কীধাবাধির যদি বিশেষ কোন সম্পর্ক থাকে, তাহা হইলে শৌত্রবন্ধনের সুখময় দৃশ্যটি সর্কাংশেই সার্থক |

থিয়ংখ গ্াভৃতি অশিক্ষিত বৌদ্ধদিগের বিবাহ-উৎসবে সুত্রবন্ধনই প্রধান কার্ধ্য। এখানে খিয়ংখ বিবাহের সামান্য একটুকু বিবরণ দিব। বর যুবা, কন্ত। যুবতী; তথাপি বরের জন্য কন্যা এবং কন্যার জন্য বরনির্বাচনের ভার পিতা মাতার হস্তে যখন ছুই দিকের সমস্ত কথা নুস্থির হয়, তখন বর, “শুভ দিনে” “শুভ ক্ষণে” কন্যার গৃহাভিমুখে গুভযাত্রা করে। বরের আগে পাছে দামাম। দগড় বাঁজে | বর, দেই বাগ্যকোলাঁহলের মধ্যে, পিতা মাতা এবং বহুমংখ্য সুহৎ স্বজনের সঙ্গে পদ-ব্রজে চলিতে থাকে | কন্যাকে বিবাহের উদ্দেশ্টে বাঁড়িতে লইয়া যাওয়া! খিয়ংদিগের রীতি নহে। কন্যার বাড়িতে যাইয়া বিবাহ করাই তাহাদিগের কুল-প্রথা সুতরাং কন্যার পিতৃভবনেই বিবাহের বিশেষ আড়ম্বর।

৬৪ গ্রমোদলহরী

বরের পিতা! যেমন তাহার বন্ধুবান্ধব যুটাইয়া, বর বরযাত্রীদিগকে বঙ্জালঙ্কারে সাজাইয়া, ঘটা করিয়া আনিতেছে; কন্যার পিতাও নেই রূপ তাহার কুটুম্ব কুটুম্িনীদিগ্নকে আমস্ত্রণপত্রদ্বারা বাড়িতে আনিয়া, ঘটার সহিত গ্দ্ভত হইয়াছে। গ্রামের স্থানে স্থানে কাশের মীচা উঠিয়াছে। বরযাত্রীরা নে কল স্লীচায় বাসা লইবে। বরের জন্য একটি পৃথক্‌ মঞ্চ প্রস্তুত হইয়া, তাহা নান! রঙের ফুলের মাল নান! প্রকার লতায় পাতায় নাঁজ্জিত হইয়াছে কল মঞ্চেই প্রাথমিক জল- যোৌগের সুন্দর আয়োজন আছে। বর বরের পিতা! মাতা প্রভৃতি ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির। সন্ধ্যার পূর্বক্ষণ পর্য্যন্ত দেই মঞ্চে অবস্থিত রহে, এবং কন্যাপক্ষের প্রধান ব্যক্তিরা সেখানে যাইয়] তাঁহাঁদিগের অভ্যর্থনা করে।

বিবাহটা গোধুলি লগ্নে আকাশে যখন ছুই একটি করিয়া নক্ষত্র ফোটে, কন্যাপক্ষীয়েরা বরকে তখনই অন্তঃপুরে লইয়া যায়, এবং পুরোহিত বর কন্যাকে একটি পল্পবাচ্ছাদিত পূর্ণকুস্তের নম্মুখে মুখামুখি দাড় করাইয়াঃ তাহাদিগের উভয়ের মুখে সাত বার সাত মুষ্টি অন্ন দেয়, আর এক গাছি নূতন নুত্দ্ধার1 তাহাদি- গকে সাত বার বাধে

বিবাহ কত প্রকার | ১২

যখন পুরোহিত আছে, তখন অবশ্যই মন্ত্র আছে। কিন্তু বৌদ্ধদিগের বিবাহের মন্ত্র পালি ভাষায়। তাহা না বুঝে পুরোহিত, না বুঝে বর-কন্যা, কিংবা তাহা- দিগের পিতা মাতা মন্ত্র বুঝা দূরে থাকুক, অধিকাংশ পুরোহিত মন্ত্রের প্রক্কত শব্দগুলিও কৌন দিন কানে শুনে নাই। তাহার এই হেতু, মন্ত্র পাঠের জন্য প্রয়ার- পর না! হইয়া, বর কন্যাকে স্ৃতায় জড়াইবার নময়, শুধুই ঠোট নাড়িয়৷ থাকে যাহাদ্িগের বিবাহ, তাহারা এই মাত্র বুঝে যে, সুতার বাঁধে গলায় গলায় জড়িত হইলেই, তাঁহার! সাংসারিক জীবনের সুখ-ছুঃখে স্বামী স্ত্রীর ছুশ্ছেদ্য বন্বনধনৃত্রে জড়িত হইল |

চাঁকমাদিগ্ের বিবাহ, আস্তে আুরিক এবং উপ- সংহারে পৈষ্টিক হইলেও, মূলে লৌত্রিক বলিয়া পরি- গণিত হইবার যোগ্য কারণ, উহাদিগের মধ্যে বর কন্যার শরীরে, সুতার অনুকল্পে। এক টুকরা নুখ-দৃশ্য ছিন্নবস্ত্রে বাধ দেওয়া ভিন্ন বিবাহে আর কোন ব্যাপার নাই। উহারা, রূপ বয়সের বিবেচনায়, উপযুক্ত পণ দিয়। কন্যাকে গৃহে লইয়া যায়; সুতরাং উহাদিগের বিবাঁহ বরের গৃহে সেখানে, বর কন্যার জন্য পৃথক একখানি আমন প্রস্তত থাকে $ এবং য়েআযনের সম্মুখে

১২৩ গুমোদলহরী |

পরিমর কদশ্লিপত্রে পিষ্টক, পক্কান্ন সুপক্ক ফল প্রভৃতি নানাবিধ খাদ্যবস্ত সজ্জিত রহে। যখন বর কন্যা, ঘরে আবিয়া, আনে উপবিষ্ট হয়; তখন বরের একটি সখা বরকে ঘেরিয়া তাহার কাছে বসে? এবং কন্যার একটি সখী কন্যার পার্খধদেশে আরন গ্রহণ করে। বরের নখার নাম মওলা, কন্যার অখীর নাম সওলী। চাঁকমাদিগের পুরোহিত নাই | খিয়ংখদিগের বিবাহে পুরোহিত যাহ! করিয়। থাকে, চাকমাদিগের বিবাহে সওলা আর সওলীদ্বারাই তাহ। সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়। বাকী থাকে শুধুই অনক্ষর পুরোহিতের মন্ত্র-পাঃ-প্রদর্শনী মুখভঙ্গি | কিন্তু চাকমার দে অভাব অনুভব করে না, এবং তজ্জন্য দুঃখিত হয় না সওলা আর সওলী দীড়াইয়া উঠিয়া বকলকে জিজ্ঞাসা করে, “কেমন নকলে সম্মত ? সকলে শ্বীক্কৃত ত? এখন আমরা প্রকৃত কার্য্ের অনুষ্ঠান করিতে : পারি ত?” বভাস্থ কলে উচ্ষেঃম্বরে উত্তর করে, “হা, ইহাঁদিগকে সুতায় বাঁধ, ইহাঁদিগকে সুতায় বাধ” সওলা আঁর মওলী তখন হাসিয়। হীসিয়া,বর কন্যাকে নুত্রকল্প বন্ত্খণ্ডে বেষ্টন করিতে প্ররত্ব হয়; এবং বান্ধনিটা হইয়া গেলেই, নব-দগ্পতি, নিঃসঙ্কোচে নূতন অনুরাগে,

বিবাহ ফত প্রকার ১২৭

একে অন্যের মুখে, পন্কান্ন, পক্ষ ফল নানাবিধ মিষ্টবস্ত তুলিয় দেয়।

খন্দদ্রিগের বিবাহও, চাঁকমাদিগের বিবাহের ন্যায়, আঁরন্তে আগর এবং অভ্যন্তরে লৌত্রিক। উহার উপ- মংহারভাগে রাক্ষৰ বিবাহের একটু অনুক্কতি আছে। কিন্তু সে অনুকূতি নিতান্ত উপহাপাম্পদ অভিনয় মাত্র

সম্প্রতি দেশে বাল্যবিবাহ নামে একটা অভিনব শব্দ প্রচলিত হইয়াছে বালকের দহিত বালিকার যে বিবাহ হয়, প্রচলিত অর্থে তাহাই বাল্যবিবাহ খন্দ- বিবাহকে বাল্যবিবাহ বলা যার কি নী, তাহা শব্দ- শাস্ত্রে এক খট-মট সমস্যা কারণ, খন্দবিবাহের বর গ্রায়ই নয় দশ বৎসরের শিশু, অথচ কন্যা পোনর ষোল বতনরের পূর্ণায়তদেহ। প্রফুল্পরূপা' যুবতী | এঁ রূপ নব- যুবতীর সহিত অমন একটি নবোাত শিশুর নামমাত্র বিবাহকে, বাল্যবিবাহ বলিয়৷ নির্দেশ করা উচিত হয় কি না, সুবিজ্ঞ পঞ্ডিতবর্গ তাহার বিচার করিতে পারেন | যদি দুই দিকের দমান বাল্যাবস্থাই বাল্যবিবাহ নামের ন্যায়সম্মত স্থল হয়, তাহা হইলে খন্দদিগের বিবাহবন্ধন, বাল্যযৌবক বিবাহ বলিয়াই অভিহিত হই- বার যোগ্য। পক্ষান্তরে, যে বিবাছের বর যুবা, কন্যা

১২৮ গমোদলহরী

বালিকা, তাহাও কাজে কাজেই বাল্যবিবাহ নামের বিষয়ীভূত না৷ হইয়া, বাল্যযৌবক অথবা যৌব-বাল্যক নামেরই উপযোগী হহুইয়৷ পড়ে কেন না, ইহা শব্দবিশা* রদদিগেরও শ্বীক্ৃত কথা যে, বিবাহ পৃথিবীর কল দেশেই যুগল-ভাবাতবক অনুষ্ঠান; উহা। কোথাও শুধু এক জনের কর্ম নহে।

পূর্বেই বলিয়াছি, খন্দবিবাহের প্রাথম অনুষ্ঠান আমু- রিক বর শিশু | সেকেমন করিয়া কন্যানির্দাচন করিবে ? সুতরাং কন্যা নির্বাচন করে বরের পিতা আঁত্মীয়বর্গ। এবং তাহারা রীতিমত পণ দিতে বাধ্য। কিন্ত তাহাঁদিগের মধ্যে পণের প্রথা প্রচলিত থাকিলেও, কন্যাকে বিবাঁহের আগে তুলিয়! লইয়া! যাইবার প্রথা নাই। বিবাহের দিন বরের পিতা! কন্যার গৃহে বিবিধ ভোজ্য সাঁমপ্রী পাঠাইয়1 দেয়, এবং দন্ধ্যাকালে বর লইয়া লেখানে যাইয়। বিবাহকার্ধ্য সম্পাদন করাইয়া লয়

বিবাহের পদ্ধতিটা এই ।-কন্যাপক্ষের পুরোহিত, কন্যা কন্যার পিত। মাতাকে সম্মুখে রাখিয়া, হাতে এক পিয়াল। মিরা লইয়া, গম্ভীর ভাবে দণ্ডায়মান রহেঃ এবং যখন বর বরযাত্রীরা উপস্থিত হয়, তখন দে বর কন্যাকে তাহার বম্মুখে টানিয়৷ আনিয়া, সেই

বিবাহ কত প্রকার। ১২৯

মদ্যটুকু তাহাদিগকে বারংবার দেখাইয়া নিজের মুখে ঢালিয়া দেন+ আর, এক গ্রাছি হরিদ্রীক্ত সুতা লইয়া! বর কন্যাকে গলায় গলায় বন্ধন করেন। বর এখানে বতনভাবাপন্ন কারণ, সে বয়সে নিতান্ত ছোট | বরের গলা কন্যার গলা হইতে প্রায় এক বিঘত নীচে থাকে পুরোহিত তথাপি কৌশল-নহকারে, দুটি গলাই একত্র করিয়া, নুত্রবন্ধনরূপ মুখ্য কার্ধ্যটা সম্পন্ন করিয়া ফেলেন। রাত্রিতে শুধুই আমোদ প্রমোদ রাত্রি প্রভাতে কন্ঠ হরণের যাত্রাভিনয় সকলে গাইতেছে, বাঁজাইতেছে এবং নানারপ আমোদ প্রমোদে সময় কাটাইতেছে ; বরের কোন পিতৃব্য কিংবা একটি পিতৃবন্ধু, ইহারই মধ্যে, দশ- জনের অনবধানতার সুযোগেঃ কন্যাকে কাধে তুলিয়া, চোরের মত, এক দিকে বরিয়া যাইতেছে যেই কথাট! প্রকাশ পায়,অমনি কন্যা পক্ষীয়ের! ধর্‌ ধর্‌ বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠে, এবং বরপক্ষীয়েরা, মার. মার বামাল সামাল বলিয়া সারি বাদ্ধিয়। সম্মুখে অগ্রনর হয় উভয় পক্ষে ক্ষণকাল এইরূপ একটুকু নাট্যযুদ্ধ হইয়া গেলে, বরযাত্রীর। বর কন্যা ছুই জনকে লইয়াই বাড়ি চলিয়া যায়।

বিবাহের পরদিবন বাহুযুদ্ধের এরূপ একটুকু বিচিত্র

৯৭

৯৩০. প্রমোদলহরী 1

খেলা হয় বলিয়াই, ইহার উপনংহারকে রাক্ষম বলিয়া নির্দেশ করিয়াছি। কিন্তু, পাঁঠক অবশ্যই বুঝিয়াছেন যে, খন্দবিবাহের গরধান অনুষ্ঠান শুধুই সুত্রবন্ধন | সুতরাং ইহা! সৌত্রিক ভিন্ন অন্য কোন নাম পাইতে পারে না। যদি কোন তর্করত্ব কিংবা তর্কপথ্ানন স্থলে এই রূপ আপত্তি করেন যে, বিবাহের পুরোহিত যখন মদিরার পিয়াল। হাতে লইয়া কার্য সম্পাদন করিয়াছেন, তখন ইহাকে মদিরিক বলিয়৷ নির্দেশ করি না কেন? তাহ! হইলে, তীহার কথার এই উত্তর দিয়াই উপপন্তি করিব যে, পুরোহিতের কর-্ধত পিয়ালার একটা ফোটাও যখন বর কিংবা কন্যার ঠেঁঁটে পড়ে নাই, তখন বিবাহটা কোন ক্রমেই মদিরিক নংজ্ঞায় নিবিষ্ট হইতে পারে না। বিবাহ কি বর-কন্যার”_ন| পুরোহিতের ? পুরোহিত যখন পিয়ালার সমস্ত সামগ্রীটুকুই স্বয়ং উদরস্থ করেন, এবং বর কন্যাকে প্রনাদের ভাগ দিতেও বিস্বাত ইন; তখন বিবাহের নাম মদিরিক হইবে কোন্‌ ব্যবস্থায়?

খন্দবিবাহের নবোঢ়া বধু প্রথম পাচ ছয় বত্বর প্রকৃতই পতিগৃহের দানী। যেখানে পতি অমন শিশু, সেখানে কে তাহার আদর করিবে? কে তাহার দুঃখ বুঝিবে? কিন্তু নেই শিশু পতি যখন নবযৌবন লাত

বিবাহ কত প্রকার! ১৩১০

করে, তখন বধূদানীই আবার সকলের উপর রাজমহিষী হইয়া উঠে। তখন অন্যের কথা দূরে থাকুক, বধ শ্বশুর বৃদ্ধা শাশুদ়ীও তাঁহার ভয়ে থরথর কম্পিত রহে। একে স্ত্রী, তাহীতে বয়নে বড়। ঘরের নও জঙ্গ ”& কাজেই তাহার কাঁছে ঘতত আজ্ঞাধীন অঞ্চলবদ্ধ ; এবং “নও জঙ্গ” যাহার কাছে ননীর পুতুল কিংবা নাটুয়া বাছুরের স্তায় নিয়ত মুখ-প্রেক্ষী, বাড়ির আর সকলে বাধ্য হইয়াই তাহার নিকট অবনত |

বেদ্দা নামে এক পুরাতন জাতি আছে, তাহাদিগের বিবাহ শুধুই সৌত্রিক। তাহারা বরের হাতে সুতার কাধ দেওয়া ভিন্ন বিবাহের আর কোন অনুষ্ঠানই অবগত নহে। কিন্তু বেদ্দাদিগের বিবাহের সুতা কোনরূপ স্থখ- স্পর্শ সুক্ষ তন্ত নহে। তাহা এক গাছি সুদৃঢ় দীর্ঘস্থায়ী দরড়ী, এবং দে দড়ী হাতে লইয়া গ্রস্থিবন্ধনের কার্ধ্য 'সম্পাদন করে স্বয়ং কন্যা।

কন্যার পিতা! বরকে বাড়িতে আমন্ত্রণ করিয়া লইয়া আইসে। বর দেখানে সমাগত পাচ জনের মধ্যে বরের আনে উপবিষ্ট হইলেই, কন্যা হাতে একগাছি নূতন

* খনের] ঘরের বড় ছেলেরে “নও জঙ্গ” অর্থাৎ নুতন বীর বলে।

১১৩২ গ্রমোদলহরী |

দড়ী লইয়া, জননী কিংবা অন্য কোন পুর-কামিনীর নঙ্গে সভাস্থলে উপস্থিত হয় এবং জনক জননীর উপদেশ- ক্রমে দড়ী গাছি বলের দক্ষিণ হস্তে ভাল করিয়া কাধিয় দেয়। কন্যা যত কাল জীবিত থাকিবে, দড়ীর বাধও আহারে বিহারে, শয়নে জাগরণে, তত কালই বরের অঙ্গে আতরণের ন্যায় শোভ1 পাইবে

বাহারা যোগী কিংবা! বিরাগী, উল্লিখিত দড়ী তাহা- দিগের চক্ষে মায়ারজ্জু। জীব উহাতে বদ্ধ হইয়া, রজ্জু- বদ্ধ পশুর ন্যায়, আকুষ্ট হইতেছে; এবং ভোগ্র-লালসার করালগ্রানে বলিম্বরূপ গড়াইয়া পড়িতেছে। বীহারা ভক্ত ভাবুক, রজ্জুবন্ধন তাহাদিগের কাছে হৃদয়ের সহিত হৃদয়ের নিঃশব্দ অন্তাষণ। যেন জগন্ময়ী প্রক্কৃতি জগতের প্রাণ-স্থপ্ূপ অচিন্ত্য পুরুষকে হৃদয়ে গাথিয়া রা খিবার জন্য এপ গ্রন্থিব্ধন করিতেছে, এবং প্রেম্‌- ভক্তির পবিত্র সোহাগে, নয়ন কাকাইয়া, মৃদু সু বলি- তেছে,_

হাতে দিলাম ডুরি, খাট্বে না চাতুরি,

পায়ে ঠেলে, যাও বা! ফেলে, তাই বেধেছি দড়ী |

বেদ রমণী বুঝুক আর নাই বুঝুক, এবং জানুক আর

বিবাহ কত প্রকার ১৩৩

নাই জানুক, বুঝি তাহার হৃদয়ের অন্তস্তলে এমনই কোন কথা, প্রকৃতির অধরে, অন্ফুট উচ্চারিত হয়।

৯ম। সুখাখ্রিক বিবাহ ।--এ পদ্ধতি বড়ই নহজ- সাধ্য এবং শীতপ্রধান দেশে নিতান্তই সুখ-মেব্য | বর যদি কন্যার রূপ দেখিয়া মোহিত হয়, তাহ! হইলে তাহাকে মে আদর করিয়া, হাতে ধরিয়া, বাঁড়িতে লইয়া যায়, এবং বেখানে ছুই জনে ঘরের মধ্যে একত্র বসির আগুন পোয়ায়।

যুবক যুবতী এইরূপ আগুন পোয়াইতে বরিলেই পরিবারস্থ পাঁচ জনে তাহা আড়ালে থাকিয়। প্রীতির সহিত দর্শন করে) এবং বরের পিতা৷ মাতা জীবিত থাকিলে, তাহার! ক্ষণপরেই সেখানে আসিয়া সমাগত যুবতীকে, পুভ্রবধু জ্ঞানে সম্ভাষণ করিয়া 'থাকে ইহারই নাম সুখাঘ্রিক বিবাহ।

বিবাহের অনুষ্ঠানে আগুনের এই ব্ূপ আঁদর পাঠ কের নিকট কৌন অংশেও অদ্ভুত বলিয়া প্রতীয়মান হয় কি? জগতের জড়বস্তনিচয়ের মধ্যেঃ মানুষের কাছে, অগ্রি আর জল এই ছুইয়েরই অত্যন্ত মহিমা | মানুষ, আগুন না হইলে, প্রাণে বাঁচে না৷ এবং জল বিন! জীবন- ধার করিতে পারে না| এই নিমিত্বই আগুনের নাম

১৩৪ গরুমোদলহরী।

অগ্থি, অর্থাৎ সর্বাত্র গ্রমনশীল, সর্বজ্ঞ শক্তি; এবং এই নিমিত্ই জলের নাঁম জল, অর্থাৎ জীবনের আচ্ছাদক। প্রাচীন আর্ধ্যেরা' বুঝিয়া শুনিয়া বিবাহ প্রভৃতি সকল কার্যেই আগুনের পুজা করিয়াছেন; এবং পূর্বোলিখিত অনার্্যেরা, না বুঝিয়াও, শুধু সুখের অন্বেষণে” আগুনের উত্তাপ বুকে লইয়া বিবাহের মত গুরুতর অনুষ্ঠানে আগুনকে সাক্ষিরপে সম্মান করিয়/ছে।

তবে যাহারা গৌণদম্বন্ধে আর্য আর অনা্ধ্য উভ- য়ের মধ্যবর্তা,_অক্ষয়কীর্তি কৃত্বিবান প্রাচীন তত্বের অন্বেষণে পুরাতন গ্রন্থপত্রে-পরিশ্রম না৷ করিয়াও, লঙ্কারমরের অবদান নময়কেই যাহাদিগের উৎপত্তির সময় বলিয়া নিরূপণ করিয়াছেন,_যাঁহারা তাহার বিবেচনায় জ্রীরামচন্দ্রের দক্ষিণাপথবানী দৃপ্ত দৈনিকবর্গ, এবং লঙ্বেশ্বরের পুর-বাসিনীদিগের সহিত সমান নম্পৃজু.. তাহাদিগের মধ্যে কিবা বিবাহে কিবা জীবনের অন্যান্য উত্নবে, স্থলন্ত বহি অপেক্ষা দ্রবীভূত বন্িরই অধিকতর আদর পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু তাহাতে অগ্নির অমল মহত্ব কোন অংশেও স্পৃষ্ট কিংবা বিনষ্ট হয় না।

ভারতীয় আধ্যললনার বিবাহের সময় যজ্ঞীয় অগ্নির ধুম গ্রহণ করিয়া কি রূপ সুন্দর মূর্তিধারণ করিতেন,

বিষাহ কত প্রকার ১৩৫$

কাব্যে তাহার চিত্র আছে | সে চিত্রে, কবির তুলিকায়, গুদ্ধিও দৌন্দ্য্য এবং প্রীতি পবিত্রতা বড়ই সুন্দর মিশিয়াছে বলিয়া, এখানে তাহার 'কিয়দংশ প্রদর্শনের বন্য রঘুবংশের দুইটি শ্লোক তুলিয়। দিলাম

হবিঃ অমীপল্লবলাজগন্ধী

পুণ্য কশানোরুদিয়ায় ধূম$। কপোলসংসর্পিশিখঃ তদ্যাই মুহূর্তকর্ণোৎপলতাং প্রপেদে

তদঞ্জন ক্ল্দসমাকুলাক্ষমূ ্রশ্নানবীজাঙ্কুরকর্ণপূরমূ। বধূমুখং পাটলগণ্ডলেখং আগার-ধুম-গ্রহণাঁদ্‌ বভুব। অর্থাৎ, উঠিল পবিত্র ধুম যজ্ঞের অনলে,, স্বত"লাজ-সমী-পত্র গন্ধে স্ুরভিত + ক্ষণেক দে শ্যাম-শিখা বধূর কপোলে কর্ণের উৎপল বম হইল শোভিত

১৩৬ গ্রমোদলহরী।

ছল ছল আঁখি যেন পরিল অঞ্জন,

আরক্ত আচার ধুমে ছুটি গণ্ডস্থল,

কর্ণে ছিল্ল ষবাঙ্ুর কর্ণ-আভরণ

ধুমের শিখায় তাহা হইল শ্যামল

১ম অলিলিক বিবাহ 1 ইহা দিদ্ধ হয় বর কন্যার

শরীরে সলিলমেকে। সুখায়িক বিবাহে যে গৌরব অগ্নির, রলিলিক বিবাহে দে গৌরব দলিলের | সলিল ঘেখ!নে বিবাহবন্ধনের সাক্ষী, বর-কন্যার দিদ্ধিগুরু এবং অনেক বিষয়েই সুখ-মম্পদের কল্পতরু তবে অশ্থির বেলায় সুখাগ্রিক বলিয়া, সলিলের সম্পর্কে সুখ-নলিলিক বলিলাম না কেন? কথার প্রকৃত উত্তর এই ।-_পৃথি- বীর যে মকল স্থলে সলিলিক বিবাহের বিশেষ প্রতিপত্তি, নেঅকল স্থলে গৌধুলি লগ্নেই প্রায়শঃ বিবাহ হইয়া থাকে। তার উপর আবার শীতকালটাই, সাংসারিক সুখ-সুবিধা প্রভৃতি নানা কারণে, বিবাহের জন্য প্রশস্ত কাল। যদি বর বধূ. শরীরের তন্ত নংস্থানে, এবং তৃষা চিত" বৃত্তির ক্ফুরণে, কতকটা মরাল-জাতীয় 'না হয়, তাহা হইলে, মাঘের শীতে, নন্ধ্যারময়ে, হর-জটারূপিণী পূর্ণ- কলমীর কল কল ধারার তলে ফাড়াইয়া, সলিল-লীলার তত্বজ্ঞান সঞ্চয় করা নকলের পক্ষে সুখ-জনক নহে।

বিবাহ কত প্রকার। ১৩৭

অনেকে অনুমান করেন যে, সুখাগ্রিক বিবাহের উৎপত্তি স্থান শীতপ্রধান দেশ অনুমান যদি ত্য হয়, তাহা৷ হইলে গ্রীষ্মপ্রধান দেশগ্লিচয়কেই বলিলিক বিবাহের উৎপতি স্থান বলিয় কল্পনা করা যাইতেপারে। পরিব্রাজকদিগের কাছে যাহ! জানিতে পাওয়া যায়, তাহাতে বোধ হয় যে, কথাটা প্রকতপ্রস্তাবেও তাহাই বটে। শুনিয়াছি, দক্ষিণভারতের কোন কোন জাতির মধ্যে বর কন্যাকে একই পিড়ীর উপর যুগলমূর্তিতে ঈাড় করাইয়া, এক পূর্ণিমা হইতে আর এক পূর্ণিমা পর্য্যন্ত তাহাঁদিগের মাথার উপর, প্রতিদিন বন্ধ্যাকালে, সাতটি পূর্ণকৃস্ত ঢালিয়া থাকে, এবং এই রূপে চান্দ্রগণনার একটা সম্পূর্ণ মাস প্রাত্যহিক অভিষেক হইলে, তাহা পূর্ণাভিষেক বলিয়া পরিগণিত এবং আরন্ধ বিবাহ পরি- সমাপ্ত হয়। বিবাহ আরম্ভ হইবে এক পুর্ণিসায়, সমাপ্ত হইবে আর এক পূর্ণিমায় এবং প্রতিদিনই এইরূপ সাতটা! কলপীর সমান ধারা ! বড় কঠিন পরীক্ষা

বেন্দকর প্রভৃতি জাতির বিবাহও শুধুই সলিলিক। বর তাহার বাম বাহুতে কন্যার দক্ষিণ বাহ জড়াইয়া পিড়ীর উপর দণ্ডায়মান হয়, এবং পাড়ার মেয়েরা তাহা-

দিগের মাথার উপর ভরা কলমী ঢালিয়া দেয়। বিবাহে ৬৮

১৩৮ গ্রমোদলহরী।

যাহা কিছু চাই, তাহা, ইহ1তেই বংসাধিত হইয়া যাঁয়। তেমন দুঃনাধ্য ব্যাপার নহে কারণ, ইহ একদিনের ব্যাপার | যদি বিধাহের সময়টা ঘৌভাগ্য বশতঃ নিদা- ঘের দিনে গড়াইয়া' পড়ে_যে সময়ে কবির ফণী মধ রের ছায়াতলে আশ্রয় লইয়! প্রাণ ধারণ করে, যদি তেমনই দিনে বিবাহ হয়, তাহা হইলে অলিল-ধারার তথাবিধ ব্যবস্থায় বিশেষ আপত্তির কারণ থাকে না। কিন্ত শীতের সময় রীতিশুদ্ধ লিলিক বিবাহ কোন জাতির জন্যই স্থাস্থ্াজনক অথবা আতিবর্ধক বলিয়া স্বীকৃত হইতে পাঁরে না

১১শ॥ সৈনদরিক বিবাহ ।-_ইহার একমাত্র সামগ্রী বিন্দুর বর যদি তাহার বাম হস্তের কনিষ্াঙ্কুলিতে এক- টুকু সিন্দুর লইয়া, কন্যার ললাটে তাহা লাগাইয়া দেয়, তাহা হইলেই বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। বিবাহের ময়ে কন্যার ললাটে দিন্দুরের ফৌটা দেওয়া, ভারতবর্ষে প্রায় সর্ধপ্রকার বিবাহ পদ্ধতিরই অপরিহার্ধ্য অঙ্গ হইয়া দীড়া- ইয়াছে,এবং “করের ক্কণ” “কপালে দিন্দুরের টিপ”” শুধু এই দুইটি বস্তই, দেশে সধবার চিহ্নু বলিয়া, সর্কাত্র পরিচিত হইয়াছে। দিন্দুরের ফৌটা দেশের কবিতা সঙ্গীতেও সুখ-সোহাগ্ের আপন পাইয়াছে। যথা,"

বিবাহ কত প্রকার ১৩৯ $

অয়ি মুখময়ী উষ্ে, কে তোমারে নিরমিল, বালার্ক সিদূর ফোটা কে তোমার ভালে দিল 2” কিন্তু যদিও সির, অগ্নি সলিলের ন্যায়, ভারত-

বানী নকল বন্প্রদায়ের মধ্যেই এইক্ষণ বিশিষ্টরূপে সম্মা- নিত হইয়াছে, তথাপি দৈন্দরিক বিবাহ, সুখাগ্রিক সলিলিক বিবাহের ন্যায়, একটা স্বতন্ত্র পদ্ধতি। কেন না, অনেক জাতির মধ্যে কন্যার ললাটে বিন্দুর দান ভিন্ন বিবাহে আর কোন কার্য্যেরই অনুষ্ঠান হয় না, এবং দিন্দ্র দিতে উলুলু কোলাহল ভিন্ন আর কোন মন্ত লাগেনা।

কেহ কেহ অনুমান করেন যে, ভারতের প্রান্তরেখা- বর্তী কোন কোন পুরাঁতন অনার্ধ্য জাতির মধ্যে, বিবা- হের বময়ে,বরের এক ফোটা রক্ত কন্যার গাঁয়ে কন্যার একু ফোটা রক্ত বরের গায়ে লাগাইয়া] দিত; এবং যেকার্ধ্য এক সময়ে রক্তবিন্দু্ধারা নির্বাহ পাইত, কালক্রমে তাহাই নি'দুরের নুচারু বিন্দুতে রম্পাদিত হইত। শ্র অনুমান উচ্ছ্থল কর্পনামাত্র। ইহা আমার নিকট নুসঙ্গত জ্ঞান হয় না। কোথায় সেই অশিক্ষিত অনার্ধ্য, আর কোথায় এই উচ্চশিক্ষাভিমাঁনী আর্ধ্যজাতি। যদি অনার্ধযদিগের যেই প্রাচীন প্রথাই আধ্যনমীজে আবিয়। সি'দূর-বিদ্দুতে

১৪০ গরমোদলহরী।

পরিণত হইয়া থাকে, তবে এখন আর লোকে বরের ললাটেও পিঁদুরের ফোটা দিয়া, তাহাকে “পক্থিরাজের”” বিচিত্র বেশে সাঁজাইয়া আনে না কেন? ফল কথা সিতুরের উৎপত্তি শোভার তৃষ্ণায়, এবং সধবাই সে অনন্যসাধারণ শোভার অধিকারিণী বলিয়া বিবাহে নিদৃ- রের এত বেশী আদর, দৈন্দরিক বিবাহের পৃথক. প্রচলন যে সকল জাতির মধ্যে শুধু সিন্দুর-সংযোগেই বর কন্য। বিবাহবদ্ধ দম্পতি বলিয়া সমাদৃত হয়, আমি তাহাদিগ্ের কথা প্রনক্গতঃ পরে বলিব।

১২শ | সপ্তাবর্ত অথবা দাগুপদিক বিবাহ 1 ইহা দক্ষিণ ভারতের অন্তর্থত মুয়াসি প্রভৃতি বিবিধ নিশ্নশ্রেণীস্থ হিন্দুজাঁতির মধ্যে গরচলিত | এই পদ্ধ- তির বিবাহ তাঞুলিক বলিয়াও নির্দিষ্ট হইতেপারে | কারণ, ইহার আরস্তে, মধ্যে এবং উপনংহারে, তঙুল লইয়া নানারূপ আমোদজনক খেল! কিংবা অনুষ্ঠান আছে। কিন্তু বিবাহের প্রকৃত পরিসমাপ্তি হয় ভনো- য়ার নামক একটা বিশিষ্ট বশদণ্ডের চতুষ্পার্থে বর-কন্তার সাত বার আবর্তন অর্থাৎ সাত পাক পরিভ্রমণে, এবং সঙ্গে সঙ্গে সাতটি সুরম্য পদাঘাতে। দাত আবর্তের বিচিত্রতার প্রতি দৃষ্টি করিয়াই বিবাহের প্রকারটাকে

বিবাহ কত প্রকার। ১৪১

সপ্তাবর্ত কিংবা সাগুপদিক নামে পৃথক্‌ উল্লেখ করিলাম। লক্ষণে কোন দোষ ঘটিল কি না, তাহা পাঠক সমস্ত বিবরণ আলোচনা করিয়! দিদ্ধান্ত কর্পিবেন। বিবাহের বময়ে কদলীরক্ষ কিংব। পূর্ণকুন্তের চারিদিকে বর কন্ঠার নাত পাক ঘুরিয়া আইঘা অনেক জাতির মধ্যেই দৃষ্ট হইয়া থাকে। কিন্তু মুয়ানি প্রভৃতি জাতির মধ্যে মাত পাকই বিবাহের সার সর্ধন্ব।

বিবাহের প্ররুত কর্তী বর-কন্যার পিতা মাতা কন্া যুবতী হইলেই তদীয় পিতা স্বজাতির মধ্যে বরের অন্বে- ষণ করে এবং বরের পিতা কন্ঠ দেখিয়া যায়। যদিবর কন্যা এই দুইয়ের মনঃপুত হয়, তাহা হইলে কন্যার পিতা কোন এক নির্দিষ্ট দিবসে পাড়ার কতকটি মেয়ে ামাজিকদিগকে ভোজ দেয়) এবং বরের একটি বিশ্বস্ত বন্ধু দেই ভোজে, চারি মণ তগুল নহ "উপস্থিত হইয়া, তাহা দকলের দমক্ষে ওজন করিয়া! বুঝাইয় দিয়া যায়। ' যখন তগুলের রূপ ওজন বুঝ হইতে থাকে, তখন কন্যার সমানবয়স্ক৷ সখীরা, কতকগুলি গৃহপালিত ঘুখুর ন্যায়, তগুল-রাশির চারিপাশে ঘুরিয়া ঘুরিয়া, তাহা হইতে অলক্ষিতভাবে, দুই এক মুষ্টি অপহরণের চেষ্টা করে; এবং বরের বন্ধুও তখন ঘুঘুর অত্যাচার

১৪২ গ্রমোদলহরী |

নিবারণের জন্য বাঁজের মূর্তি ধারণ করিয়া চারি দিকে চক্ষু রাখে। কারণ, যদি নির্দি্ পরিমাণের একটি ত৫ু- লও কম হয়, তাহা হইলে তাহাকেই তাহা পুরাইয়া দিতে হইবে। £

কন্যার পিতৃভবনে ষেই তগুলরাশি লইয়া কিছু কাল এই রূপ রন-লীল! হইয়া গেলে, তার পর রীতিমত বুঝ হয়, এবং তগুলের বুঝ হইলেই, দেশের গ্রথানুনারে বাক্যবিনিময়ের বাধ্যবাধকতা হইয়৷ যায়। তাওুলিক বিবাহে তগুলের আদানঞ্দানেই বিবাহের চরম সমাধান; সপ্তাবর্ত বিবাহে তুল খেলা বাগানের অনুকল্প অথব। উত্দবের উপক্রমণিকা মাত্র। বোধ হয়, এই রূপ মনে করিতে হইবে যে, কন্যা এদিন হইতে বর-দত্ত তগুল ভিন্ন আর কাহারও অন্্ মুখে দিবে না।

তুল খেলার ঠিক আট দিন পরেই বিবাহ বিবা- হের দিবস বরযাত্রীরা, সন্ধ্যার একটুকু পুর্বে বংশনির্শিত হাতী ঘোড়ার উপর নওয়ার হইয়া, দে সকল বাহন বিবিধ কৌশলে চালাইয়া, চলিয়া আইসে, এবং বর তাহার পূর্বোক্ত বন্ধুর ক্কন্বে আমীন হইয়া, নকলের মধ্যে থাকিয়া ধীরে চলে। বন্ধুই নে দিন তাহার সুখের বাহন কিংবা সম্মানের ঘোটক। বেচারা বন্ধ

বিবাহ কত প্রকার। ১৪৩

তগুলখেলার দিন দখীদিগের মহিত দেই প্রমোদ ক্রীড়া কৌতুকে মুখের ওজনে যাহা কিছু পাইয়াছে, আজি- কার এই বর-বাহন-্ছুঃখে তাহারই যেন তগুলের ওজনে পরিশোধ হইয়া যাইতেছে কবি এই জন্যই বলিয়া- ছেন,-“ন হি সুখৎ দুঃখৈর্বিনা লভ্যতে 1৮

বর বরধাত্রীরা যখন বাড়ির খুব সান্নিধ্যে আনিয়া বাজনা বাজাইতে আরম্ভ করে, কন্যার সেই তওুল- হারিণী তরল-নয়ন| ঘুঘু সইরা আবার আিয়া যেখানে উপস্থিত হয়, এবং কন্যার মাতাও মাথায় একটি মঙ্গল ঘটের উপর প্রদীপ বহিয়া তাহাদিগের সঙ্গে সঙ্গে আইনে

স্ুদুরা এবারও বড় উৎপাত করে। তাহার যদি তগুল খেলার দিন এক মুষ্টি তগুল অপহরণ করিয়া থাকে, আজি তাহারা বরপক্ষীয় বংশারূঢ বীর যুবাঁদিগের উপর, প্রত্যেকেই পক্ক তঙুলের দশ বিশটি পি, লোস্টের মত, নিক্ষেপ করিয়া নকলকেই জ্বালাতন করিয়া তুলে। যুবারা আগিয়া তাহাদিগকে জঙ্গির সহিত ধমক দেখায় বটে / কিন্ত আজি আর তাহারা ধমকে কিংবা চমকে পুষ্ঠভক্ষ দিতে প্রস্তুত হয় না। তাহারা নকলেই হাঁতে সেই তগুলপিশুরূপী অব্যর্থ অস্ত্র লইয়া”_আচলের

১৪৪ গ্রমোদলহরী

পতাকা উড়াইয়া, অস্তঃপুরের দ্বারদেশে, দলবদ্ধ দপ্ডায়- মান রহে এবং যতক্ষণ না তাহারা উপযুক্ত পাঁরিতো- ধিক লাভে পরিভু হয়, বর ততক্ষণ পর্যন্ত কন্যার মুখ- দর্শন সুখে বঞ্চিত হইয়া বাহিরে পড়িয়া থাকে

কন্যার অন্তঃপুরে বরের জন্য শালগাছের ডাল! পালায় একটি কুপ্ত প্রস্তত হইয়া রহিয়াছে তাহার মধ্যস্থলে এক বংশদণ্ড, তাঁহার নাম ভনওয়ার | ভন- ওয়ারের গোড়ায় পল্পবাচ্ছাদিত ভরাকুস্ত)__কুন্তের উপর জ্বলন্ত দীপ, পুরোভাগ্গে পেষণী শীলা,__এবং শীলার উপর সুনজ্জিত লাতটি হরিদ্রাক্ত তগুল-পিগু।

বর যখন কন্যার বন্তাঞ্চলে বদ্ধ হইয়| কুগ্জের দুয়ারে উপবিষ্ট হয়, তখন সকলের আগে, শাশুড়ী তাহার কাছে যাইয়া তাহাকে আদর করে। শাশুড়ী বরের মুখে ক্রমে পাচ মুষ্টি পকৃতগুল তুলিয়। দেয় তার পর তার মুখখানি ধোয়াইয়া, আচলে তাহা মুছিয়া দিয়া, এক দিকে অরিয়া পড়ে। নাটকে শাশুড়ীর কাজ এই পর্যাস্ত |

বর কন্যার পিতা এতক্ষণ পৃষ্ঠভূমিতে থাকে যেই শাশুড়ী চলিয়। যায়, অমনই তাহার ছুই জন দুই দিক হইতে, দুই ঘড়া জল লইয়া, অগ্রনর হয় এবং দুই

বিবাহ কত প্রকার। ১৪৫,

জনেই, মাটিতে বিয়া, বর কন্যার দুর্লভ “পাদপদ্ম” ভক্তির ভাবে ধোয়াইয়া দেয় বোধ হয়, বর-কন্যার এই বূপ অভ্যর্থনা, ইহাদিগের মধ্যে, মেন্কার গৃহে শঙ্কর শঙ্করীর অর্চনার মত, চিত্তে প্রীতিকর অনুভূত হইয়া থাকে।

রদ্ধেরা যখন রূপ পাদ-প্রক্ষালনে ব্যাপ্ত রহে, ঘুঘু নই্রা, পুনরায় ঘেখানে, সম্ভবতঃ পায়ের ঘুঙ্ঘর বাজাইয়া, দর্শন দান করে, এবং বরকে ক্ষণকাল প্রক্ষিপ্ত- তগুল-পিণ্ডের স্পর্শনুখ অনুভব করাইয়া লয়।

ইহার পর বিবাহের প্রকৃত অনুষ্ঠান। এঁ যে ভনওয়ার- বংশ,ভরা কুস্ত রম্মুখে লইয়া,নিরক্ষর ধন-কুবের 'অথবা নিঃ- নক্গ তাঁপনের মত, নীরব নিষস্পন্দ দণ্ডায়মান রহিয়াছে, উহাই এবিবাহের মন্ত্রগুরু অথবা মুখ্য দেবতা বর কন্যা ভনওয়ারের চতুঃপার্থে ক্রমে,সাত পাক ঘুরিয়া আইসে, এবং প্রত্যেক বারের ঘূর্ণনের পর, কন্যা বরের ইঙ্গিতক্রমে, ভনওয়ারের পাদ-মূল-স্থিত সাতটি তঙুল- পিশডের এক একটিকে ম্বছুল-পদাঘাতে দূরে নিক্ষেপ করে। এই সপ্তাবর্ত অথবা দাত বারের পদাঘাতেই "বিবাহের বন্ধন চিরজীবনের জন্য সিদ্ধ হয়, এবং বর কন্যাকে আপনার বিবাহিতা পত্রীজ্ঞানে শ্রীতিদহকারে বাড়ি লইয়! যায়।

১৯

১৪৩ প্রমোদলহরী।

কন্যার শেষ পদাঘাত প্রত্যক্ষ হইলেই প্রাচীনেরা জয়ধ্বনি করিতে আরম্ভ করে, এবং “হইয়াছে হইয়াছে” বলিয়। কোলাহল করিতে থাকে লোকে বলে, বর যদি নিতান্ত হতমূর্থ নটবর হইয়াও, ব্বথাভিমানের বিষ-স্ধালায়, মণ্ডকের মত মুখ ভার করিয়া,_গলা গাল ফুলাইয়া, ভঙ্গী করিয়া ববিয় থাকে, এবং পরিবারস্থ পাচ, জনের সুখশান্তির কারণ না হইয়া, সকলকেই নানারূপ উৎ- পীড়নে অস্থির রাখে, তাহা হইলে বিবাহের কন্যা, কোন কোন দেশে, তঙুল-পিগুশোভি শিলাখগ্ডের উপর পদা- ঘাত না করিয়া, কালিদানের বিদ্যোন্মাদতরঙ্গিনীর ন্যায়, বরের কপোলপ্রদেশে পদাঘাত করিতেই বেশী ভাল- বানে। কিন্তু পাঠককে ইহা স্পই্ই জান।ইতে হইতেছে যে, বিবাহের পরে, কে কাহারে, দাম্পত্যধর্দের কি ব্যবহারে, 'পদাঘাতে পরিতর্পণ করে, সকল কথার সহিত অগ্তাবর্ত প্রণালী কিংবা ভনওয়ারী পদাঘাত- পদ্ধতির কিছু মাত্র বম্বন্ধ নাই।

১৩শ। তারবিক বিবাহ | ইহার মুখ্য অনুষ্ঠান সিন্দুরদান। দে অর্থে ইহা সৈন্দূরিক দংজ্ঞারই অন্ত- নিবিষ্ট | কিন্তু পদ্ধতিতে বর কন্যার আগে বিবাহ হয়ঃ পৃথক্‌ পৃথক্‌ রূপে, দুইটি তরুর নহিত। তার পর

বিবাহ কত প্রকার ১৪%

বিবাহ হয় মনুষ্যোচিত প্রণালীতে পরস্পরের সুখ-শ্মি- লনে। এই জন্যই ইহা! তারবিক নামে পৃথক্‌ বিরৃত হইল। মানভূমের পশ্চিম ভাগে, কুরমী প্রভৃতি বিবিধ জাতির মধ্যে, তারবিক বিবাহই দেশের পুরাতন প্রথা।

বিবাহে গুথম একটুকু নাট্যাভিনয় হয়, তাহার নাম দুয়ারখণ্ড। কিন্তু নে অভিনয়টা যার পর নাই নীরদ হইলেও, অনন্যনাধারণ বলিয়! উল্লেখযোগ্য বর কন্যার অভিভাবকেরাই বিবাহের অধ্যক্ষ যখন তাহাঁদিগের মধ্যে সমস্ত কথ দুনিশ্চয়তার ঘহিত অব- ধারিত হয়, তখন বরের বমানবয়স্ক কএকটি সুহ্ৃত, কন্তাঁর পিতৃনিবামে, সহমা অতিথিবেশে উপস্থিত হইয়া, কন্ঠার রূপ দেখ! লইয়া, সেই কেমন এক পরিজ্ঞাত প্রচ্ছন্ন ভাবে, ক্ষণকাল আমোদ এপ্রমোদ করেঃ এবং কন্যার ভাতৃক্ুস্থানীয় বাক্তিরাও, রূপ অতিথির বাজে, বরের গৃহে যাইয়া, বরের রূপ দেখিয়া আইনে

* অতিথিরা, চিরপরিচিত হইলেও, উল্লিখিত রূপ- দেখার অথবা দুয়ারখণ্ডের অভিনয়ের দিন অপরিচিত *যেন তাহারা পথহারা পথিক৮_যেন তাহারা এক দেশে যাইতে পথ তুলিয়া, কিংবা কোনরূপ বিপদে পড়িয়া, .আর এক দেশে আনিয়া উপস্থিত হইয়াছে, এবং হাতে

৯৪৮ গ্রমোদলহরী।

কোন গুরুতর কাজ না থাকা হেতু, গৃহস্বামীর বিবাহ- যোগ্য কন্যা কিংব! পুত্রের অত খবর লইতেছে।

এরপ প্রচ্ছন্ন পর্থ্যবেক্ষণের দিন কতক পরেই বিবা- হের প্রাকৃত উতৎনব। বিবাহের দিন প্রাতঃকালে বর, বাড়ির ছোট খাট একটি আম গাছকে বিবাহ করিয়া, তাহার সহিত সুত্রবদ্ধ হয়, তাহার গায়ে সিন্দূর দেয়, এবং তাহাকে ভার্ধ্যাজ্ঞানে গ্রাঢ আলিঙ্গন করিয়া, শেষে তাহার কাছে বিদায় লয়। কন্যাও তাহার পিতৃভবনেঃ সেদিন সেই ঘময়ে, ছোট খাট একটি মহুয়া গাছের অহিত, বিবাহিত হইয়া, বরের জন্য প্রস্তুত রহে।

কবিতার সুললিত ভাষায় আম গাঁছের নাম সহকার তরু, এবং মহুয়। গৃছিটা বোধ হয় মাধবীলতার অনুকল্প যদি সমালোচিত কুরমীদিগের কাব্যজ্ঞান থাকিত, তাহা হইলে তাহারা অবশ্যই বরের বিবাহ দিত মাধবী লতার সহিত, এবং কন্যার বিবাহ দিত সহকারের মঙ্গে | কিন্ত কাব্যের সে মধুর ভাব তাহাদিগের মধ্যে বুদ্ধির অভাবে বিপরীত ভাবে পরিণত হইয়াছে

সহকার-সখা বর, সন্ধার একটুকু পূর্বে, কন্তার গৃহা- ভিমুখে জাহাজে চড়িয়। যাত্রা করে ; মহুয়ার সুখ-মঙ্গিনী জবা মাধবীর রক্গগ্রার্থনী কল্তাও। তখন বরের পতী,

বিবাহ কত প্রকার ১৪৯

ক্ষায়, বাড়ির মধ্যে একটি বিলাস-কুর্জে উপবিষ্ট রহে। বরের মে জাহাজ খানি কোন্‌ কোম্পানীর, পাঠক কি তাহা এখনও বুঝিতে পান নাই? যাহারা সৌত্রিক বিবাহের বরযাত্রীদিগকে ভাঙা ডাল পালা, অথবা বাশের চেলার হাতী ঘোড়া যোগাইয়! থাকে, তারবিক বিবাহের জাহাজ খানিও তাহাদেরই গর্ডা | জাহাজের উপাদান সামান্য ছুই এক খানি তক্তা আর লত! পাতা | বর মেই জীহাঁজে চড়িয়া, কন্যার গৃহে উপস্থিত হইলেই,পাঁচ জনে তাহাকে কন্ার কুপ্ত-নিবাসে লইয়! যায়,এবং পে, বহুকঠ- নিহত হরিধ্বনির মধ্যে, কন্যার ললাঁটে সিতুরের ফোটা দিয়! সুখানীন হয়। তারবিক বিবাহে গুরুপুরোহিতের গন্ধ নাই। অথচ উহার মন্ত্রআছে। সে মন্ত্র ভক্তির অমিয়মধুমাথা হরি বোস, সঙ্গল-চিহ্ন নিদুরের ফোটা, এবং মুখ্য লক্ষণ আগে ছুইটি তরুর বহিত-বিবাহের ভাণ।

১৪শ | তাঁগবিক বিবাহ ।--তাগুব অর্থ, উদ্দাম নৃত্য | প্রাচীন গ্রন্থকারের! পুরুষের নৃত্যকে তাগুব এবং স্ত্রী লোকের নৃত্যকে লান্য নামে নির্দেশ করিয়াছেন কেহ কেহ আবার উদ্ধত নৃত্যমাত্রকেই তাগুব সংজ্ঞা দিয়া- ছেন। লান্য নৃত্য, মধুর বসন্তের মৃদু-সমীর-সঞ্চালিত লহ- রীর সায়, অঙ্গবিক্ষেপের স্ব মধুর বিলাস-লীলা,_-মোহন

৫৮ _ প্রমোদলহরী | .

অঙ্গদোলন | আমি এখানে যে নৃত্যের কথা কহিতে' বাইতেছি, তাহা একটুকু উদ্দাম, একটুকু উদ্ধত, এবং মৃদু লহরীর উপমেয় না হইয়া, তটাভিঘাতিনী তরক্গমালারই উপমাস্থল। সুতরাং পুরুষের তাগুৰ এবং অবলার লাগ্য উভয়ই এখানে তাঁগুব নামে বর্ণিত; এবং তাগুবেরই বিশেষ সম্পর্কহেতু, বিবাহ পদ্ধতিটাও তাঁগুবিক নামে অভিহিত হইল | বড় ঘটার উত্নব এবং ইহার আগা- গোড়া দমস্তই উল্লাবের কোলাহলময়।

মায়ুরিক বিবাহে শুধুই বর যাইয়া, কন্যার মনো" রঞ্জনের নিমিত্ত, কিছুক্ষণ নাচিয়া থাকে তাগুবিক বিবা- হের উত্তালতরঙ্ষময় নৃত্যের উত্বব, কোন কোন স্থলে, মাসাবধি কাল প্রতি রাত্রিতেই সমান চলে, এবং উহাতে বর নাঁচে, কন্যা .নাঁচে, বরের সমানবয়স্ক যুবকরন্দ'_ কন্যার সমাঁনবয়স্কা শত শত যুবতী-আর যার শরীরে আনন্দের ঢেউ খেলিয়া থাকে, সেই নাচিয়া নাচিয়া উল্লানে ভাষে।

ভারতবর্ষের অনেক স্থানেই তাগুবিক বিবাহের বিশেষ মহিম। আছে উড়িষ্যার অন্তর্গত ভুঁইয়া! উরাও প্রভৃতি জাতির মধ্যে তাগুবিক বিবাহেরই অত্য- ধিক আধিপত্য ইহারা স্বভাবতঃ বৃত্যপ্রিয়| , শৈশক

বিবাহ কত প্রকার। . ১৫১

হইতেই ইহারা নাচিতে শিখে, এবং যৌবনের বদস্ত- মমাগমে নৃত্যকেই ইহার1 জীবনের প্রধান সুখ মনে করে। ইহারা স্ত্রী পুরুষে এক সঙ্গে নাচিতে ভালবাগে সুতরাং ইহাঁদিগের বিবাহের অনুষ্ঠানে, ম্বন্ধের প্রথম সুচনা হইতে পরিসমাপ্তি পর্যন্ত, নৃত্যরঙ্ষের বিবিধ ঘটাই যে প্রধানতম অঙ্ক বলিয়! প্রীতির নহিত সমাদৃত হইবে, তাহা কোন অংশেও বিস্ময়াবহ নহে।

এই খানে শুধু ভূইয়াদিগের বিবাহপ্রসঙ্গেই তাগুবিক বিবাহের পরিচয় দিব। ফুটন্ত অন্নের একটি লইয়া পরীক্ষা করিলেই বমস্তগুলির পরীক্ষা হয়। ভূঁইয়ার জাতিতে হিন্দু। ইহারা “বোৌরাঁম? “ধরম দেবতা ' প্রভৃতি বিবিধ নামে চন্দ্র, সুরধ্য এবং আরও অনেক দেব দেবীর উপাসনা করে| বিবাঁহ ইহাঁদিগের মধ্যে ছুই তিন গ্রামব্যাপি গড্ডরিক গান্ধর্ন। কেন নাঁ, প্রাচীন প্রথার গান্ধর্ববিধানে সাধারণতঃ বিবাহ হয় এক যোড়ায়। ইহাদিগের মধ্যে খন বিবাহের মৌনুম উপস্থিত হয়, তখন বিবাহ হয় এক সঙ্গে ছুই তিন গ্রামের দশ বিশ কিংবা পঞ্চাশ যোড়ায়।

ইহাদিগের ভাষায় যুবার নাম ধাঙ্গর, যুবতীর নাম: ধাক্গরিণী। ইহাতে দৃষ্ই হইতেছে যে, ভূইয়া যুবতীরা,'

১৫২ গ্রামোদলহরী।

অশিক্ষিত অনভ্য হইলেও, পুরাতন আর্ষ্যের ভাষাগত পবিত্রতার সংস্পর্শে স্ত্রীপ্রত্যয়ে অনুরাগিণী নহিলে তাহারা, নিশ্যয়ই এত দিনে নীলমণি মুখোপাধ্যায় নৃত্যকালী বনুর স্ায়, ধনমণি ধাঙ্গর গুণমণি হুমা হইয়া যাইত।

গ্রামের মধ্যে কিংবা! প্রান্তে একটা খোলা স্থান থাকে, তাহার নাম দরবার | যখন চন্দ্রতারাময়ী যামিনী, জ্যোতস্নার স্সিপ্ধ আলোকে পুলকিত হইয়া, এবং জগ্রৎ- মংবারকে জ্যোৎ্মার আবেশময় আননে আধ উন্মাদিত করিয়া, মায়াবিনী দেবতার ন্যায়, বিরাজমানা হয়, যখন নৈশ-নমীর, নে জ্যোৎস্ায় যেন ঈষৎ আর্জ যেন কেমন এক অপূর্ব গন্ধে সুরভি হইয়া, ঝুরু ঝুরু বহিতে থাকে, তখন গ্রামের ধাঙ্গর ধাঙ্ষরিণীরা উল্লিখিত দর- বারের মাঠে যাইয়া, আত্মহারার ন্যায় আনন্দে নৃত্য করে। দরবারের চারিদিকে অসংখ্য ছায়াতরুঃ এখানে ওখানে তরুর ছায়ায় এবং চক্দ্রের জ্যোত্ম্নায় অপরূপ মিশ্রণ; উর্দে আকাশের অমল চন্দ্রাতপ +₹_এ হেন মনোহারি দরবারে, ইহারা দলে দলে মিলিয়া মিশিয়া, হাতে হাতে গাঁথা হইয়া, নবযৌবনের নিরঙ্কুশ উল্লাসে নৃত্য করিতে রহে। যুবক যুবতীর এই রূপ নৈশ-নৃত্য

বিবাহ কত প্রকার ১৫৩.

গুরুজনদিগের জানা শুনা কথা, গুরুগঞ্জনার যম্পর্শূন্ত, এবং নাট্যশিক্ষার মত গ্রামের সাধারণ উত্সব এক্ষণ বিবাহের উপযোগী অসাধারণ নৃত্যেঠখসবের দই একটি কথা কহিব।

ভূইয়াদিগের বমস্ত গ্রামেই দরবার-মাঠের অনতি- দুরে ধাঙ্গরবানা অথবা ধাঙ্গরিণীবাস। নামে বড় বড দোচালা ঘর থাকে গ্রামের বিবাহযোগ্য যুবকের! ধাক্গরবানায় এবং তাদ্বশ ফুটন্ত যুবতীরা ধাঙ্গরিণী বাদায় রাত্রিকালে অবস্থান করে। যখন এক গ্রামের ধাঙ্গরের। রাত্রিকালে অপর এক গ্রামের দরবারে যাইয়া; বন্নিহিত ধাঙ্গরিণীদিগের নিদ্রাভন্গের জন্য, ঝাঝর প্রভৃতি বিবিধ বাদ্যযন্ত্র বাঙ্জাইতে আরম্ভ করে, অথবা রূপ নিদ্রাশুন্য ধাঙ্গরিণীরা দলবদ্ধ অভিবারিকার বেশে, গ্রামান্তরের দরবারে উপস্থিত হইয়া, হানির হিলোলে 'কিংবা প্রাণয়- গতির কল-কলে নিকটবর্তী ধাঙ্গরদিগকে আপনাদিগের সুখ-সমাগম-সংবাদ দেয়, তখন দুই দলে যাদৃশ নৃত্য হইতে থাকে, তাহাই অদাধারণ উত্নব | তাহা, অন্ততঃ 'তাহাদিখের জন্ত, প্রকৃতই আবেগময়, উন্মাদজনক এবং আনন্দের একট। প্রবল বন্যাআোতের মত।

যুবজনেরা, মাথায় খোঁপা বাঁধিয়া, বাহুতে অনন্তের

৮৬

১৫৪. প্রমোদলহরী |

মত একটা পিতলের বলয় পরিয়া, প্রণয়-উপহারের জন্য আয়না, চিরুণী, রাঙা ফিতা, রাঙা মতা পিত- লের নানাবিধ চকৃডুকে চাঁরুগহন| সঙ্গে লইয়া, দরবারে গ্রাতীক্ষু রহে, এবং যুবতীরাও বন-ফুলে নানারপ বন্য আভরণে ভূষিত হইয়! দরবারে যাইয়া, উপহারের দে সকল নামগ্রী গ্রফুল্লচিত্তে গ্রহণ করে যুবতীর! তাহার পর বহু প্রকারের উপাদেয় বন্ত স্বহস্তে পাক করিয়া, যুবকদিগকে যত্বের সহিত খাওয়ায় ইহাতে তাহাদিগের ঘৌজন্যের পরিচয় এবং কর্্দনৈপুণ্যেরও বিশেষ পরীক্ষা এই রূপ পরীতি-ভোজের কিছু ক্ষণ পরেই দরবারে নৃত্যের উচ্ছৃত্বল তরঙ্গ এবং শীত- বাদ্যের আতিমধূর নিনাঁদ উঠে। কেহ মদিরা পান না করিয়া থাকিলেও, সকলেই মদোন্ত্ব, এবং তালে তালে হেলিয়া ছুলিয়া হৃদয়ের কথা গীতে গাইয়া, নৃত্যের নয়নানন্দ ভঙ্গী সঙ্গীতের হদয়হারি আকর্ষণে, প্রিয়জনের চিত্ত-প্রীণনের জন্য, উত্ঘাহে প্রমত্ত ।' এই নৃত্যই বিবাহের উপক্রমণিকা গ্রামের বৃদ্ধ এবং রৃদ্ধারা ইহ জানিয়। শুনিয়া অনুমোদন করে এবং নৃত্যের পরিণামফল জানিবার জন্য, দূর হইতে গোপনে খবর লইয়! থাকে।

বিবাহ কত প্রকার ১৫৫.

যুবক যুবতীদিগের মধ্যে কেহ কেহ এক রাত্রির: নৃত্যেই আপনার প্রার্থিত জনকে চিনিয়া লইতে পারে যাহার পিপানুপ্রাণ অত নহজে প্ররিতৃপ্তি লাভ না করে, তাহাকে হয়ত আরও ছুই চারি কিংবা দশ বার রাত্রি নিদ্রাত্যাগ করিয়া নৃত্যগীতের আমোদে ডুবিয়! রহিতে হয়। যখন নিশা শেষ হইয়া আসে,নৈশ-নৃত্যের অবি- রাম-শ্রমে সকলেরই শরীর একটুকু অবসন্ন এবং অধরের তাশ্বলরাগ ঈষৎ বিবর্ণ বিস্বাদ বোধ হয়, তখন যুবারা নিতান্ত কাতরকগে কাতরনয়নে, নিজ নিজ গ্রামে যাইবাঁর জন্য বিদায় চাঁয়। যুবতীরা লতার অনুরুূতি। তাহারা তখনও তাহাদিগকে, যেন লতার ভাবে, হাতে পায়ে জড়াইয়া, কিছু ক্ষণের জন্য আবদ্ধ করিয়া রাখে, এবং এই সুযোগে, বাগান্য কিছু অন্ন বাঞ্জন প্রান্তৃত করিয়া, ুক্টব্িগকে গ্রাতভেজের উপহার দানে গররিতৃপ্ত করে

ছাড়াছাড়িটা ইহার পরেও সহজে হইতে পারে না। যুবারা, যাইবার ময় পুনরায় তাহাদিগের ঝাঝর, জ্গবষ্প বাঁশরী প্রভৃতি হন্ত্র বাজাইয়া, তালে তালে পদক্ষেপ করিয়া; আর পিছনের দিকে পুনঃ পুনঃ সতৃষ্ঞ নয়নে তাকাইয়া। দূরতর গ্রামে, স্ব স্ব গৃহাভিমুখে, ধীরে. ধীরে যাইতে, থাকে এরৎ যুবতীরাও নৃত্যাবনাদে

১৫৬ প্রমোদলহরী।

নয়নাবেশি নিদ্রার প্রসাদে, অযত্রশিক্ষিত ম্ৃদ্ু-মন্থর- গমনে, বুঝি প্রাণের ম্বাভাবিক টানে, বহুদূর পর্যযস্ত ঘুমন্ত ভাবে নাঁচিয়া নাঁচিয়া তাহাদিগের অনুসরণ করে। গ্রামের প্রান্তনীমা৷ সাধারণতঃ পার্ধত্য জোত- শ্বিনীর জল-রেখা। যুবারা উহার অপর পাড়ে পৌছ- ছিয়া, মাটিতে বনিয়া, বিষাদের ভাঙা গলায় দুঃখের গীত গায়। যুবতীরাও পাড়ে থাকিয়া তাদৃশ বিষাদের গীতে নিজ নিজ বিষ-জঙ্জরিত হৃদয়ের দুখরাশি ঢালিয়। দেয় | এরূপ গীতালাপের পরি- সমাপ্তি হইলে, যুবতীর! ভূমিতে জানুপাত করিয়া যুবা- দিগকে বারংবার করযোড়ে অভিবাদন করে; যুবা- রাও পর পাড় হইতে, প্রীতি প্রণতির মহিত, যুক্ত- করে প্রত্যভিবাদন করিয়া, শেষে দীর্ঘশ্বান ফেলিতে ফেলিতে “চলিয়া যায়।

বিবাহের যেটা! প্রধান অঙ্গ অর্থাৎ পরম্পরের অনুরাগ- লাভ, তাহ! দরবারের তরল তাগুবেই প্রাণে প্রাণে কানে কানে প্রচ্ছন্ন আলাপে সুসম্পন্ন হয়। বাকি থাকে একট প্রকাশ্য অনুষ্ঠান, তাহা কএক দিন পরে, উভয় পক্ষের পিতা মাতা প্রতিবেশিদিখের গোচরে, কোন শাখার মধ্যে মাল। বদলে, এবং কোন শাখায়

বিবাহ কত প্রকার। ১৫৭

শুধু এক দিদ্দুরের ফৌটায় সুপম্পাদিত হয়। তখন বর কন্যা আবার নাচে, এবং বাড্ডির সকলেই, সুযোগ পাইয়া নাচিতে থাকে।

তাগুবিক বিবাঁহে বর কন্যার প্রথম মিলন যেমন নৃত্যের দেশব্যাপী উল্লাষে, পরিণয়ের শেষ পরিবমাপ্তিও সেই রূপ নৃত্যের দেশব্যাপী উচ্ছ্বাবে। কেন না,যখন ইহা- দিগের মধ্যে বিবাহের ঘময় উপস্থিত হয়, তখন ঘরে ঘরে এবং যোড়ায় যোড়ায় এক নঙ্গে শত শত বিবাহ | যে এক ঘরে বিবাহের মেয়ে, দেআর এক ঘরে মেয়ের সখী অথবা আইয়। যে সকল যুবা গ্রামান্তর হইতে বিবাহের জন্য বর দাঁজিয়া চলিয়া আইনে, তাহারাঁও প্রত্যেকেই আত্মরম্পর্কে বর এবং পরম্পরের অম্পর্কে বরযাত্রী অথবা বরের খা বাহার! দেখিয়াছেন, তাহাদের বোধ হই- য়াছে যেন দেশে বিবাহের একটা নমুদ্র উথলিয়াছে।

১৫ শ। চক্তবাকিক বিবাহ ।-ইহা| সম্তাল প্রভৃতি পার্ধত্য জাতি বমূহের বহুশাখায় পুরুষপরম্পরায় গচ- লিত এবং বহুকাল হইতে মম্মানিত। ইহাঁও তাঁওব বিবা- হেরই আর এক মূর্তি। অথচ নে মৃদ্তিটি প্রকার-বৈলক্ষণ্যে নিতান্ত বিচিত্র, এবং আর এক শ্রেণিস্থ যুবক যুবতীর একটুকু বেশী মনোহারিণী।

১৫৮ গুমৌদলহরী |

তাগুবিক বিবাহের ভু'ইয়ারা যেমন জন্মাবধি নৃত্য- প্রিয়, চক্রবাকিক বিবাহের পার্ধত্যেরাও নেই রূপ জাতিধর্থে নৃত্যরত | উহাদিগেরও গ্রামের মধ্যে যুবক যুবতীর নৃত্যশিক্ষা এবং নৃত্যচ্ছলে প্রণয়ভিক্ষা অথবা হৃদয়পরীক্ষার নির্দিষ্ট দরবার আছে; দরবারের চারি- পাশে বড় বড় ছায়াতরুর ছায়ামণ্ডপ আছে ছায়ামণড- পের স্থানে স্থানে যুবক যুবতীর নৈশ-বাদের উপযোগী বাাঘর আছে; জ্যোত্ম্নামধুর শারদ-নিশায় কিংবা নিদাঘের মধুর যাঁগিনীতে নৈশ-নৃত্যের আমোদ আনন্দ, হান্য পরিহাস, এবং উদ্দাম উত্সাহ আছে তথাপি ভূইহদিছেক ভাঙব বিবাহ হইতে উহাদিগের বিবাহ- উত্সব ঘন্পূর্ণরূপে পৃথক্‌ | উহাদিগের মধ্যে বিবাহের আগে বিরহের. একটুকু সুন্দর ভাণ আছে। এটিই বড় নূতন বর তখন চক্রবাকের অবস্থায় +_এবং কন্তা চক্র- .বাকীর ন্যায় বিরহবিধুরা বিলপমানা। বাড়ির পাচ জনে বর কন্যার দে বিরহের দশা দেখিয়। আড়ে 'থাকিয়া মুচকে হানে বিদ্রপ করে আমিও দেই বিরহবিলাপের কথা মনে করিয়াই বিবাহকে চক্র- বাকিক নামে নির্দেশ করিলাম।

বিবাহেরও বরনির্বাচন কিঞ্িৎ পরিমাণে গার্ধর্ব-

বিবাহ কত প্রকার ১৫৯

প্রথার অনুকারি। কিন্তু বে গান্ধর্ব, তাগুবিক তু ইয়া- দিগের গড্ডরিক গান্ধর্ব নহে) তাহা নর্কথাই গৌণ- গান্ধর্ব নামে অভিহিত হইবার যোগ্য ।” কন্যা মুখ ফুটিয়া কিছু না কহিলেও, পিতা মাতা তাহার মনের কথা টানিয়া লয় এবং কন্যা যখন যুবতী হয়, পিতা মাতা তখন নর্কদাই তাহার চক্ষের গতি পর্যবেক্ষণ করে। সে কাহার সহিত দরবারে বেশী নাঁচিয়াছে”_কাহাকে দেখিয়! লজ্জায় জড় সড় হয়, এবং লজ্জায় জড়ীভূত রহি- যাও কাহাকে দেখিবার জন্য সর্ধদ] উৎসুক রহে, পিতা মাতা৷ ভাবভঙ্গিতেই তাহা বুঝিয়৷ থাকে।

এই রূপ আঁবার বরের ঘরে। পুক্র যখন হষ্ট, পুষ্ট, বলিষ্ঠ হইয়। যৌবনপ্রীতে অলঙ্কৃত হয়, তখন পিতা মাতা তাহাকেও এক গ্রাকার চোঁখে চোখে রাখে, এবং তাহার চিত্ত পরীক্ষার জন্য,নর্কদাই অলক্ষিতরূপে তাহার পিছনে থাকে। সুতরাং গ্রামের বুবক যুবতীদিগের মধ্যে কে কার জন্য লালায়িত শীন্বই তাহা ধরা পড়ে

কিছু দিন পরে, দুই দিকের অভিভাবকেরা মিলিয়া মিয়া দিন নিরূপণ করে, এবং বিবাহের যতটি দিন বাকি আছে, দুগাছি মাজা ঘবা মোটা স্ৃতাঁয় তাহার ততটি গ্রন্থি দিয়! তাহা বরের বন্পান্তে কন]ার আচলে

১৬০ প্রমোদলছরী |

বাধিয়া দেয়। ইহারই নাম বিবাহের আগে বিরহ | বর কন্যা তখন বিরহে ব্যাকুল হইয়া নেই গ্রন্থি দৃষ্টে দিন গণিতে রহে, এবং এক একটি করিয়া দিন যায়, আর তাহার! দীর্ঘ নিশ্বানের সহিত এক একটি করিয়া গ্রন্থি মোচন করে।

নেই দৈনন্দিন গ্রশ্থিমোচনের সময় দশ জনে নানা প্রকারে আনন্দ করে। কিন্তু বর কন্যা বিরহের অভিনয়ে, বিরলে বলিয়া, দিন গণে এবং বিষাদে ডুবিয়া রহে। হায় ! দিন তযায় না, দিন ফুরায় ন। | পিতা মাতা উভয়েই কি নিষ্ঠুর ! তাহারা এক গাছি ক্ষুদ্র সুত্রে কতগুলি গ্রন্থি দিয়াছে! কিন্ত দিনেরও গুমান আছে বুধুক আর না বুঝুক, দিনও ক্রোধ অভিমান করিতে জানে | দিন শেষে সত্য সত্যই এক দিন ফুরাইয়া যায়, এবং বর যখন বুঝিল যে, তাহাদিগের বিরহের দিন ফুরাইয়াছে, তখন সে, তাহার গুরু লঘু বন্ধু বান্ধব সক- লকে যুটাইয়া, বিরহকাতর! বিনোদিনীর ছুঃখমোচনের জন্য বিনোঁদ-বেশে যাত্রা করে

এদিকে কন্যাঁপক্ষও, বরের অভ্যর্থনার জন্য, গৃহে সর্বপ্রকার নুখ-সামগ্রীর আয়োজন করিয়া, প্রত্যুদ্টীমনের উদ্দেশ্যে, পথে বাহির হয়, এবং যখন এক দিকের নে

বিবাহ কত প্রকার ৯৬৯

গঙ্গার আোত আর এক দিকের দে যমুনার ধারা প্রেমের প্রয়াগঘাটে যাইয়া পরম্পর মিলিত প্রতিহত হয়, তখন উত্নবের অশ্রুতপুর্ঘ ক্চলাহলে নমস্ত গ্রাম প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠে। তখন সকলেই নাচে, মনকলেই গায়, এবং কিব। বৃদ্ধ, কিবা! বৃদ্ধা, কিবা যুবাঁ, কিবা যুবতী, নকলেই মদ্িরার আনন্দে, অথবা আনন্দের মদিরাঁয় বিহ্বল হইয়া, যাঁহাকে বন্মুখে পায়, তাহার গায়ে ঢলিয়া পড়ে। এঁ রূপ ডলাঁডলিতে উপনাঁদী বরই একটু বেশী অগ্র- গণ্য। কারণ, মে অন্তরে বাহিরে নমান ঢল ঢল।

কন্যা তখন কোথায়? সে বেচারী তখনও তাহার বিষাদময় বিরহনিবাদে। কুটীরের মধ্যে একটুকু ক্ষুদ্র স্থান দিন তাহার কুঠুরী বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে। সে দেই পুষ্প-পল্পব-দমাচ্ছাদিত কুঠুরীর মধ্যে_-“ ক্ষণেক শয্যায়, ক্ষণেক ধরায় ”__বিষধবদনা, অ-ু-থ-বা নিদ্রা- ভিতুতা ! বিবাহের সমস্ত উত্সব এইক্ষণ ঘরের মধ্যে সেই বিরহকুট্রীর ছারদেশে | বর-পক্ষ কন্ঠাপক্ষ বক- লেই সেই কুঠুরীর দুয়ারে দাড়াইয়া, বিবিধ ছুঃশ্রব ধন্ত্র বাজাইয়া, যেন কন্যার ঘুম ভান্গিবার জন্য, নাচি- তেছে গাইতেছে, এবং এক এক জন এক এক বার

ঘরের বাহিরে যাইয়া আকাশের পাঁনে তাকাইতেছে। ২১

১৬২ প্রমোদলহরী।

আকাশের পানে পুনঃ পুনঃ তাকাইবাঁর এই অর্থ যে, রাত্রি তখন কত? কারণ, উল্লিখিতরূপ চক্রবাঁকিক বিবা- হের এই এক কঞ্জের নিয়ম যে, রাত্রি তৃতীয় প্রহর অতীত না হইতে বরের সহিত কন্যার শুভ সম্মিলন. নংঘটিত হইতে পারে না। এতদ্রিন ফুরায় নাই দিন, এখন ফুরায় না পোড়া রাত্রি। অফুরন্ত অপূর্ব উৎ- রবের কিছুই যেন ফুরাইতে জানে না। পরিশেষে রাত্রিও 'যখন ফুরাইয়া আইপেযখন পে নিয়ম-নি্দিষ্ট তৃতীয় প্রহর অতীত হইয়। বায়, আর আকাশের চন্দ্র তার! ধীরে ধীরে পাঙুবর্ণ হইতে থাকে, তখন ঘে গভীরা যামি- _নীর শেষ যামাদ্ধে, কএকটি পুরন্বী কন্যাকে একখানি ফুলের সাজির উপর ফুলের সাজে নাজাইয়া, ধরাধরি করিয়া তুলিয়া, কুঠুরীর মধ্য হইতে বরধাত্রিদিগের নম্মুখে .আনিয়। রাঁখে, এবং বর তখন? গুরুজনের উপদেশমত্তে 'অগ্রৰর হইয়া, চারিদ্রিকের হরিধ্বনির মধ্যে, কন্যার (ললাটদেশকে নিন্দর-বিন্ডুতে অলঙ্কত করে এই বিন্দ্র- দ্রানেই শুভ বিবাহের মুনমাপ্ডি। যে মুহূর্তে বর, আপ- নার বাম করের কনিষ্ঠাুলিতে, বিন্দুর লইয়া তাহ। কন্যার ললাটে অক্িত করে, নেই: মুহূর্তেই বিবাহের মঙ্গল্য অনুষ্ঠান পরিমাণ্ত হইয়া! .থাকে। ইহার প্র

বিবাহ কত প্রকার ১৬৩

বাকি থাকে বর কন্যার অর্থাৎ চক্রবাক চক্রবাঁকীর এক পাত্র হইতে একত্র ভোজন। কিন্ত, তাহা হয় নিজ্জনে। মেয়েরা তাহা আড়ালে থাকিয়া দেখে। পাঠক বুঝিয়াছেন যে, পিন্দুরের টিপটি দৈন্দ্‌রিক বিবাহের এবং এই একত্র ভোজনটুকু পৈষ্টিকেরই প্রীতি- কর অনুকরণ

১৬ শ্‌। কপোতিক বিবাহ ।-ইহাঁও পার্ধত্াযদিগের মধ্যেই প্রচলিত চক্রবাকিক বিবাহে বর-কন্যার মধ্যে অভিনয় হয় বিরহের, কপোতিক বিবাহে অভিনয় হয় কপোত কপোতীর কমনীয় পূর্ধরাগের। বর কন্যা আপনারাই আপনাদিগকে ন্বপমাজের মধ্য হইতে বাছিয়া লয়; এবং ঘত দিন না বিবাহ হয়, কন্যা তত দিন তাহার দেই আদরের ধন ত্য সত্যই এক প্রকার অণচলে বীধিয়। রাখে বর কন্যা, পূর্করাগের জানা শুনা নোহাগের নময়ে, একখানে বনিয়া খায়, একখাঁনে বনিয়া খেলায়, একে অন্যকে বওলা অথবা নওলী বলিয়া ডাকে, এবং ঘরে বাহিরে, হাটে বাজারে, বনে উপবনে, ছুই জনে সর্বদাই কপোত কপোতীর মত এক সঙ্গে বেড়িয়৷ বেড়ায় ইহা বর-কন্যার পিতা মাতা! অথবা গ্রামের আর কাহারও চক্ষে ঠেকে না। কারণ,

১৬৪ গ্রমোদলহরী |

জানাই আছে যে, ইহার নাম প্রণয়ের অভিনয়। বর যদি বিশেষ কোঁন প্রয়োজনের অনুরোধেও, ক্ষণকালের তরে, বাড়ির বাহিরে কিধরা একটুকু দূরে যাইতে বাধ্য হয়, কন্যা তাহা হইলে, যেন অমাবদ্যার দ্রবীভূত অগ্ধকার মুখে মাখিয়া ঘরের সকলকে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাসের ভ্বালায় কিছুকাল অস্থির রাখিয়া, শেষে বংনহারা গাভীর ন্যায় তাহার জন্য দৌড়িয়া যায়। বর কন্যার গুরুজনেরা, পরষ্পরের এই অতিস্ফুট অনুরাগ দেখিয়া, বিরক্ত হওয়৷ দ্বরে থাকুক, হৃদয়ে যার পর নাই প্রীত হয়। কেন না, নামে না হইলেও কার্যে, কপোত কপোতীর এই রূপ অনুকরণই, তাহাদিগের পুরুষানুক্রমিক প্রথানুসারে, বিবাহের পূর্লক্ষণ। মনুর ব্যবস্থায় শুধুই এক প্রকার গান্র্ধের নাম আছে। একটা বিশেষ. নাম দিতে হইলে উহাকে গগুগান্ধর্ক বলা যাইতে পারে কারণ, বরের নিতান্ত বিশ্বানভাজন নুহৃৎ এবং কন্যার প্রাণ-নখীরা ভিন্ন অন্যে তাহার কিছুই জানিতে পায় নাঁ। শকুস্তভল। যখন স্ৃছুবাহিনী মালিনীর তটে, কথের শান্তরবাম্পদ স্বর্গপ্রতিম তপোবনে, ছুম্ম- স্তের রূপ দেখিয়া, বাঁণ*বিদ্ধ বিহঙ্গীর ন্যায়, গোপনে বিদ্ধ- ছদয়ে ছট্‌ ফট করিতেছিলেন, তখন অনুনুয়া এবং প্রিয়ং"

বিবাহ কত প্রকার। ১৬৬

বদার কাছেও তিনি তাহার প্রাণের কথা অশেষ-বিশেষে গোপন করিবার জন্য প্রথমতঃ প্রয়ানপর রহিয়াছেন। দুম্মন্ত তাহার প্রিয়সখা মাঁধব্যকেও সীল কথ! প্রাণ খুলিয়া বলিতে মাহন পান নাই। যেন প্রীতির সে প্রথম উন্মে- ষের পবিত্র আভা মনুষ্যের ভাষায় বর্ণিত এবং মনুষ্যের শ্রুতিবিষয়ীভূত হইলেই তাহাতে পৃথিবীর ছায়া পড়িবে তাহ! বিনষ্ট হইবে সুভদ্রার উদ্বেল অনুরাগও পুরুযোত্ম কলষ্চের রথে পার্থের সারথ্য গ্রহণের পূর্বে সকলের কাছেই গুণ ছিল। ইহাই খধিকল্পনার গুগ্ুগান্বর্ব। আমি বন্যজীবনের ব্যবহার দুষ্টে গুপ্তগাঙ্ধর্কের সঙ্গে গড্ডরিক গাঞ্ধর্ব গৌণগাদ্ধর্ব নামে আরও ছুই প্রকার গান্ধ- কের পরিচয় দিয়াছি। কপোতিক বিবাহও চতুর্থ এক প্রকারের গান্বর্ধ, এবং শাস্ত্রীয় সংজ্ঞার" বিশুদ্ধি রক্ষার জন্য ইহাকে গুঞ্জর-গান্ধর্ধ বলিয়। বর্ণনা করাই নর্জাতো- ভাবে হুসঙ্গত। কেন না, কপোতও কপোতীর শ্রাতিরঞ্জন অব্যক্তগুঞ্জরণই কপৌতিক বিবাহের বিশেষ লক্ষণ। ইহার বর কন্যা গুপ্ত কিংবা গৌণগান্ধর্কের প্রথানু- সারে হদয়ের কোন কথাই গোপন না করিয়া, অথচ গড্ডরিক গান্ধর্কের প্লাবনী আোতেও ভামিয়া ন! যাইয়া». ঘরের বন্ত ঘরে থাকে, এবং গৃহপালিত কপোত শু.

১৬৬ প্রমোদলহরী |

কপোতীর ন্যায় অবিরাম গুঞ্জরণে আত্মবিন্মৃত রহে।: বিবাহের পরিমমাপ্তিও তরল প্রমোদময় তাগুবে, এবং মালাদানের পরিবর্ডে"দিন্দ্‌রদানে অঙ্গুলির নহিত অস্গ- লির নুখ-গ্রন্থনে

১৭শ | বীনা-বিবাহ।_পাঠক হয় বীনার নাম শুনিয়াই বিবিধ রাগরাগ্নিণীর বিলম্পত এবং শ্রুতিমুচ্ছ- নার বঙ্কার-চিন্তায় চিত্তহার1 হইবেন কিন্তু বিবাহে যদি বিলম্পত বাঁজে, সে আর এক প্রকার ; এবং ইহাঁর শ্রাতিমৃচ্ছনার ভৈরব বঙ্কারে অনেকেরই প্রকৃত মৃদ্ছিত হওয়া মস্তব স্বাভাবিক কথাটা তাই ভাল করিয়া বুঝাইয়া বলিব!

বীনা-বিবাহের উপাধিভূত বীনা স্ুর-বীণ কিংবা বারন্বতী বীণা নহে। উহা দিংহলের প্রচলিত একটি অঞ্রতপূর্ অত্যদূত শিকল 1৯ বীনা! এই শবটাও গ্রক্কত- প্রস্তাবে সিংহলীয়। সিংহলের নম্বদ্ধদিগ্ের মধ যে কয়

বীনা এই নামটি চক্রবাকিক কপোতিক প্রভৃতি নামের স্থায় আমার কল্পিত নহে। নামটি পুরাতন প্রপিদ্ধ।__ নে 99081) 10071909 (019:108109 9 60107 2ি00 08109 ) 006 20০0. 0০95 60179 1) 118 ৮1093 90117, 08091]7 08)10 00: 109 100806 10 250] 59171090707. .8৫/”8 415106/0109119,

বিবাহ কত প্রকরি। ১৬৭

প্রকার বিবাহ প্রচলিত আছে, তাহারই একটির নাম বীনা-বিবাহ। বড় ঘরের বড় আদরের বয়ঃ্থা মেয়েরাই বীনা-বিবাহে অধিকারিণী। দিংহলের ভাগ্যবতী মেয়েরা,_-ভাগ্যবান্‌. লোকের স্বেহ- লালিত কুমারীরা, বন্ততঃই বরের পাশে বধুবেশে দীড়ায় না। ইহ! তাহাঁদিগের চক্ষে বড় লজ্জাজনক তাহার! এই হেতু, বরকে বিবাহ করিয়া উলুলুর মত আনন্দশয় কলধ্বনির সহিত ঘরে লইয়! যাঁয়, এবং বর সেখানে” ব্যবহারের অপরিহার্ধ্যশারনে, এক প্রকার বধূ সাজিয়া, গৃহস্থালীর বিবিধ কার্ধ্যনির্ধাছে নিযুক্ত রহে | দে দেশের সুন্দরীরা বরের ললাটে পিন্দ,র দেয় কি না, এবং বরকে কখনও মুখে ঘোমটা দিয়া রহিতে বাধ্য করে কি না, গ্রন্থপত্রে ইহার উল্লেখ নাই। কিন্তু ইহা প্রকৃতই গ্রদিদ্ধ কথা যে, বর তাহাদিগের কাছে, আজ্ঞা- বহ ভৃত্যের ন্যায়, অহোরাত্র দণ্ডায়মান রহিয়া, আড় নয়নে ভয়ে ভয়ে, তাহাদিগের মুখশ্রী নিরীক্ষণ করে, এবং কখন কি আদেশ হয়, ইহা জানিবার জন্য কান পাতিয়া রহে। কক্ষে। জাতির রাজকুমারীরাও বীনা-বিবাহের রমণী মনোহর 'পদ্ধতিতেই পতিগ্রহণ করিয়া থাকেন। পতি

১৬৮: প্রমোদলহরী

যদি তাহাদিগের প্রিয়কার্ধযবাধনে অবহেল। করে, তাহার। তাহাকে অনায়ানে পদচ্যুত করিতে পারেন। কোন কোন রাজকুমারী পতির শিরশ্ছেদের ্*ঈ আজ্ঞা দিয়! নারীনমাজে একটু নিষ্ঠুর বলিয়া পরিচিত হইয়াছেন। কিন্তু সাধারণতঃ নকলেই এই রূপ নিষ্ঠুর নহেন। বীহার। কোমলম্বভাবা দয়াশীলা, তাহারা পতির কোমল অঙ্গে কদাচিৎ ক্রোধাবেশে বেত্রাঘাত করিলেঃ শেষে তাহা লইয়। পরিতাঁপ কিংবা পরিহান করেন ; কখনও শির- শ্ছেদের কথা মুখে আনেন না।

পুরুষ”_অথবা পুরুষ নামের বম্পূর্ণ অযোগ্য অতি নীচ কাপুরুষ,_-পৃথিবীর অনেক স্থলেই, অসুর পিশাচের মুদ্তি ধারণ করিয়া, অবলার নিগ্রহ করিয়া থাকে বীনা- বিবাহের সকল অবস্থা কি প্রকৃতির পরিশোধ- মিরমে তাহারই প্রায়শ্চত্ব্যবস্থা ?__-অথবা একের পাপে অন্যের দণ্ডবিধান £ যে রকল নতী লল্ষ্্ীর পবিত্র প্রাণ,

* কথাটা আপাততঃ নিতাত্ত অদ্ভুত অমূলক বোধ হইতে খারে। কিন্ত কথাটা প্রামাণিক ইতিহাসে আছে।-_

“নু 90089 1580165 ০01 006 11000 708] 110৮. , 1100 0 000089 1086 2800 119) 110, 17961997 0019 ০৮৪ 019)8180 ) 00 0065 1)956 81)301069 10: 0৮8: 11100 2300 116 00 0620, 109 00900510920, 48016% 8069 02602 19067065

বিবাহ কত প্রকাঁর। . ১৬৯

সীত। সাবিত্রীর পবিত্র প্রতিক্লুতিতে একবারে আচ্ছা দিত রহিয়াছে, বীনা-বিবাহের নমস্ত বিবরণই তীহাদি- গের হৃদয়ে বিষ-ন্বালার ন্যায় কষ্টকর বোধ হইবে। কিন্ত যাহার! প্রকৃতির বিড়ম্বনায় অবল! হইয়াও অসুর- ত্বভাবা কিংবা অশ্বলোলা ডাকিনী, বোধ হয় অংদারের স্থানে স্থানে অদ্যাপি তাহারা বীনার বিবিধ অনুষ্ঠানেই অনুরাগিণী। নহিলে সামাজিক ইতির্ত্বের নকল অদ্ভুত কাহিনীর উপরেও আবার নাটকীয় কল্পনার “তাজ্জব ব্যাপার কেন?

মান্দ্রাজের নাইয়র জাতির বিবাহও বীনা-বিবাঁহেরই আর এক নংক্ষিপ্ত সংস্করণ | নাইয়রীর। পায়ে নুপুর পরিয়া আনন্দ করিয়া! বেড়ান; এবং গৃহপোষ্য পতি, গৃহে থাকিয়! তাহাদিগের গৃহকার্য্ের বোঝা বহে বীনা- বিবাহ দিংহল, কাকক্গো এবং অধুনাতন ঈদ্র দেশেই সীমাবদ্ধ নহে। ইহা পৃথিবীর আরও বুস্থানে বহুবিধ মুর্তিতে বিরাজমান বীনা-বিবাহের বর এই এক অংশে বিশেষ ভাগ্যবান যে, তাহাকে বধুরূপিণী অধিম্বামিনীর "পদপল্পব-বেবন ভিন্ন জীবনের কোন মুস্ুর্ভেই পরাধীনতার আর কোন যন্ত্রণা ভোগ করিতে হয় না| বৈনিক বরের! অবশ্যই হৃদয়ে এই বিদ্ধান্ত নার করিয়া বসে যে, বে

২২

চা গ্রমোদলহরী

পদ-পল্পব যদ্দি প্রেমের ক্ফুর্তিতে পরিসেব্য হইতে পারে, তাহা হইলে প্রয়োজনের বেলায়ই বাকি জন্য পরিত্যজ্য হইবে? *"

১৮ শ। বর-বিড়ম্ব বিবাহ | __বীনা-বিবাহের নামটি মধুর। কিন্তু পরিণামটা-_অন্ততঃ বরের পক্ষে_যার পর নাই বিরঘ। বর-বিডম্ব বিবাহের নামটা একটু বিরস হইলেও, পরিণামটা উভয়ের পক্ষেই মধুমাখা মধুচাখা গোছের |

পৃথিবীর অনেক প্রকার বিবাহই বরের কোন ন। কোন রূপ বিড়ম্বনায়, অল্প কিংবা অধিক পরিমাণে, পরিচিহ্নিত | নুনভ্য বটনদিগের সুশিক্ষিত সুমজ্জিত বর, যখন' ভজনাগৃহে কিংবা অন্য কোন স্থানে, কন্যার আঙ্গুলে বিবাহের আংটি পরাইরা, তাহাকে পর্ীজ্ঞানে হাতে ধরিয়। লইয়া 'যটইবার জন্য প্রস্তুত হন, তখন তাহার মাথায়, পুষ্প-ৃষ্টির পরিবর্তে» পাদুকা -ৃষ্টি হইয়া থাকে | বস্ততঃ, ইংলণ্ড ধীহারা রাঁজরাঁজেশ্বরের পদবীরূঢ়, তীহা- রাও দকলেই মন্তকে এক দিন মন্ণম্পর্শ পাছুকাপুণ্পের অবিরল বৃষ্টিতে কৃতার্থ হইয়াছেন | বদি কোটি কামাঁন-: পরিরক্ষিত বীরেন্দ্রকল্প বটনেরই বিবাহের সময়ে দশা, তবে কোন্‌ জাতির মধ্যে বিবাহের পর-পাড়ার মেয়ে রা,

বিবাহ কত প্রকার ১৭.

বামরঘরের বেহায়া খাতায় নিজ নিজ নাম লিখাইয়া, লজ্জার মাথা খাইয়া, বরের কান মলিয়! দেয়, অথবা- আরও পাঁচ প্রকারে বরের বিডক্ষদ' করে, যেই অকল- কথার আর বৃগ্না অনুসন্ধানে যাই কেন?

বরের উল্লিখিত রূপ বিবিধ বিড়ন্বনী গ্রায়শঃই বিবা- হের পরে। যে গলায় রভ্ুহার পরিয়াছে, দে তাহার বাহুতে পৃষ্ঠে কাদর কাদরীদিগের আঁচড়, কামড়: এবং কিল থাবর প্রভৃতি অনেক প্রকাঁর অত্যাচারই সহিয়া লইতে পারে। কিন্তু যে শ্রেণির বিবাহ শান্্রা- নুঘারে বর-বিড়ম্ব নামের উপযুক্ত, বিড়ম্বনার ভাগটা তাহাতে বিবাহের প্রথম অনুষ্ঠানে যেমন চক্রবাকিক বিবাহে আগ্নে বিরহ, শেষে বিবাহের আনন্দ, বর-বিডম্ব বিবাহেও নেই রূপ আগে মাঁন-ভগ্গন। তার পর প্রেম | . উত্তর আফ্রিকার কোন কোন জাতির "মধ্যে কন্যা, উটের পীঠে চড়িয়া বরের দুয়ার পর্যন্ত আইসে ;. বর'তাহার কাছে কর-যোড়ে দীড়াইয়া নানারূপ স্ততি মিনতি করিতে থাঁকে | বর যত ক্ষণ পর্য্যন্ত না তাহার, 'মন ভিজাইতে নমর্থ হয়, কন্যা ততক্ষণ পর্যন্ত নেই উটের পীঠেই, মানিনীর ন্যায়, মাথা হেট করিয়া, ঘাড় বাকাইয়া, মৌন অবস্থায় মুখ ভার করিয়া রহে।

১৭২ প্রমোঁদলহরী | -

বিনাই আরবদিগ্রের মধ্যে কন্যা, বরের অনুরাগে হৃদয়ে উন্মীদিনী হইলেও, দশ জনের কাছে আগে তাহাকে চুলে ধরিয়া" লাখি মারে, তাহার হাতে কামড় দেয়, এবং সামনে ঝাঁট! পাইলে তাহা দিয়াই তাহাকে দু' ঘ! লাগাঁইয়। দেয়।

মুঝে৷ জাতির মধ্যে বর, কন্যার গৃহে শুভাগত হইয়া, ক্রমে তিন দিন কন্যার মান-ভঙ্চনে নিযুক্ত রহে। ইহা দিগের মধ্যে তথাপি এই একটুকু ভাল যে, মান-ভগ্ুনের একটা নির্দিষ্ট মিয়াদ আছে মান-ভঞ্জনের অভিনয় তিন দিনের বেশী স্থায়ী হয় না| তিন দিন তিন রাত্রি পার হইয়া গেলেই মানিনী মানের অভিনয় পরিত্যাগ করিয়া প্রেমের অভিনয় করিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তিন দিন বরের বড় কঠোর পরীক্ষা, এবং বিবাহ-বিড়ম্বনারও পরা- কাষ্ঠা বর হাসিয়া হাসিয়া, কাছে ঘেনিয়া, মিঠা মুখের ছু'টি কথা শুনিবার জন্যঃ নানাবিধ মধুর কথার প্রনঙ্গ তুলে; মানিনী অমনই জরামন্ধের সভাস্থিত মল-বীরদিগের ন্যায়, ভাহার মুখের উপর বদ্ধমুষ্টির শিলার্ষ্টি করিতে আরম্ভ করে। মুষ্টির উপর হষ্টি এবং সঙ্গে সঙ্গে লোষ্ক্ষেপ মুহুর্মুহুঃ পদাঘাত অবশ্যই মান-ভঞ্জনের অপরিহার্ধ্য অঙ্গ | কিন্তু বিড়ম্বনা

বিধাহ কত একার। ১৭৩

গুধুই তিন দিন। উহা বীনা-বিবাহের ত্রিকালব্যাপি তুষ-দাহ-যস্ত্রণা নহে। বর যদি কোন "প্রকারে তিনটি দিন অক্ষত দেহে রক্ষা পায়, ক্রক্রিষ্টচিত্তে কাটাইয়। উঠিতে পারে, তাহা! হইলে কন্যা চিরজীবনই তাহার প্রেমের দাদী এরূপ মধুরেণ মমাপনং” মোটের উপর নিতান্তই মন্দ কি? মনুবংহিতার প্রাচীন তালিকায় আট গ্রকার বিবাহের বর্ণনা আছে। আমি প্রকৃতির অনংহত তালিকা হইতে পাঠককে আর আঠার প্রকারের বিবরণী উপহার দিলাম। কিন্ত যেমন সমুদ্রের মধ্যে বারিবিন্দুং বাহারার মরুভূমের মধ্যে বালুকণা, উল্লিখিত আট আঠার প্রাকার বিবা- হের অতি ক্ষুদ্র কাহিনীও পৃথিবীর অনন্ত প্রাকার বিবা- হের ইতিহানে সেই রূপ একটি অতি,ক্ষুদ্র কথা কে নেই অনন্ত সমুদ্রের ঢেউ গণিয়া শেষ করিবে? কে সেই দিগস্তবিস্তৃত বালুরাশির মধ্যে বনিয়া, একটি একটি করিয়া বালু গণিবে? আমি তথাপি এখানে আরও পাঁচ প্রকার অদ্ভুত বিবাহের নাম মাত্র উল্লেখ করিয়া প্রাবন্ধের উপ- 'সংহার করিব। এই পীচ প্রকার বিবাহই এক দিকে অমানব, 'আর এক দিকে অগ্রারকৃত | কেন না, মনু ইহার একটিরও কল্পনা করিয়া! যান নাই, এবং প্রকৃতির তালি"

২৭৪ প্রমোদলহরী

কায়ও ইহাঁদিগের কোন রূপ পরিচয় নাই। সুতরাং ইহাদ্িগের তালিকার পরিচয় দিতে হইলে বলিতে হইবে, ইহারা বিকৃতির তালিকাভুক্ত প্রথম বণিগ্ৃহ বিবাঁহ।--বণিধহ শবেের সাধারণ অর্থ উষ্ঃ এখানকার অর্থ মরুভূমিতে উষ্টরের ন্যায়, মানব- সমাজে বণিকের সর্বার্থবাহি পর-মন্্-দীহি বিবাহ- বাণিজ্য কিন্তু দে বণিক্‌কে? যে নিতীন্ত উচ্চবংশে জন্ম লাভ করিয়াও প্রকৃতির নীচতায় একং কর্মদোষে পর-শোষক, নেই এখানে বণিক্‌ শব্দের লক্ষ্য। বণিগ্হ বিবাহকে দেশের প্রচলিত ভাষার বেখেতী বিবাহ বল] যাইতে পারে ইহা প্র/চীন স্মতির আস্থুরিক বিবাহের আর এক পীঠ অথবা আর এক দিক্‌; এবং ইহাঁর অত্যা- চার লইয়াই দেশে ইদানীং গ্রামে গ্রামে-পাঁড়ায় পাড়ায়“ বিবাহ-বিভ্রাট | আনুরিক বিবাহে আঁশ পুরাইয়। অর্থ গ্রহণ করে কন্যার পিতা মাতা, বণিগ্থহ অর্থাৎ বেণেতী বিবাহে আকাজ্ষীরূপ অতল কুপকে আক পুরিয়া অর্থ শুষিয়া লয় বরের অভিভাবকবর্গ। ইহাতে বিবাহযোগ্য বরের কুষ্চিত কেশ, পরিরর ললাট, পটোলচের! চক্ষু, পুষ্পিত দন্তপংক্তি, নিখুঁত নাঁসিকা, নির্ধল বর্ণ, নিরবদ্য হস্ত-পদ,

বিবাহ কত প্রকার .১৭৫

দেহের ঠাম, কথার ঠাট, এবং বিদ্যাবুদ্ধির ঠ্যাকাঁর, সম- স্তেরই পৃথক্‌ পৃথক্‌ মূল্য আছে। বিবাহের পূর্বে মাথার চুল অবধি পায়ের নখ পর্যন্ত লশ্স্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গেরই পৃথক পৃথক্‌ মূল্য বর-পক্ষের প্রাপ্য অঙ্কের ফর্দে দফা- ওয়ারী পরিগণিত হয়| বর দৈব-দোঁষে, দেশের কোন পাঠশালায়, কিছু দিন কএকটি হত-ভাগ্য পাঠ্যপুস্তক গুণেতার মুগ চর্বণ করিয়াছিল, অতএব দে পাঠশালার কিছু প্রাপ্য আছে। ইহার নাম পড়ার খরচ বর যখন তাহার সুকুমার শৈশবে, পরের গাছে পক নিচু দেখিয়া, তাহা না কহিয়! পাড়িয়া আনিবার জন্য চীৎকার করিত, তখন বাড়ির এক জন বৃদ্ধ ভূত্য তাহাকে বাঁধিয়া ছাদিয়া ধরিয়া রাখিত। সুতরাং তাহার কিছু এাপ্য আছে এবং নে প্রাপ্যের নাম পরিরক্ষণ খরচ অপি, 'বরের ধাত্রী তাঁহাকে এত কাল প্রতিপালন করিয়া বাঁড়াইয়াছেন, এবং যিনি বরের গর্ভধারিণী মাতা, তিনি দশ মান দশ দিন কাল,“্দীর্ঘ ছুঃখভোগের পর, বরকে প্রনব করিয়া, ' তাহার চন্দ্রমুখ দর্শনে দকল দুঃখ ভুলিয়াছেন। তীহা- দিগেরও অবশ্য পৃথক. পৃথক, রূপে বিশেষ প্রাপ্যের অঙ্ক আছে। তাহার, নাম প্রতিপালন. খরচ এব খরচ

৯৭ গ্রমোদলহরী।

বাহারা, মেয়েবেচার মাথায় স্বণাী ধিকারের ছাই ঢালিয়া৷ দিতে ব্যবস্থা দিয়াছেন, ভাহারা কি বেগেতী বিবাহের বরবেচারু মাথায় স্তুতির পুষ্পাঞ্জলি দিতে অনুমতি করিবেন ? বিক্রয়ের নাম সোজা কথায় বিক্রয় . হইলে, ছুই দিকেই কি উহা। মান নহে ? অপিচ, বর- বিক্রয়ের বীভত্ন পদ্ধতি ঘি কুল-গৌরবের দোহাই দিয়া তরিয়া যাইতে পারে, তাহা হইলে বীনা-বিবাহের বিলান-লীলাও কুলক্রমাগত প্রাচীন প্রথার দোহাই দিয়া তরিয়। যায় না কেন?

দ্বিতীয় বৈতনিক বিবাহ ।--এ বিবাহের বর, রূপ গুণের বড়াই করিয়। দাবির পরিমাণ বাড়ায় না, এবং কন্ঠ। রূপনী না রাক্ষনী, তাহারও কোন খবর লয় না! পৃথিবীর আর পাঁচ শত প্রকারের মনুষ্য যেমন বেতন পাইলেই আপনার ব্যবসায়-নির্দিষ্ট বাধা কর্ম দিধা পথে সাঁধন করিয়া বিনা বাক্যে চলিয়া! যায়ঃ বৈতনিক বিবা- হের বরও দেশের প্রচলিত প্রথানির্দি্ট বেতনের “অঙ্ক বুবিয়া৷ পাইলেই, বর-বেশে বিবাহের উৎ্সব-নিবাসে উপস্থিত হইয়া, আপনার নিয়মিত কার্ধ্য নির্বাহ করিয়া এক দিকে প্রস্থান করে।

বৈতনিক বিবাছের বরকে বৈবাহিক পুরোহিত্ত

বিবাহ কত প্রকার। ১৭এ

বলিয়া নির্দেশ করিলে, সে কথাও ঠেলিয়া ফেলা নিতান্ত অহজ হয় না কারণ, যেমন দেশের স্থানে স্থানে, বিশেষ বিশেষ কার্য্যের জন্য, বৈদিক, তান্িক, অগ্রদানী মহা- শরাদ্ধী প্রভৃতি বহুশ্রেণির পুরোহিত আছে, বৈতনিক বরও, দেশবিশেষে বিবাহের অনুষ্ঠানে, চতুর্থ এক প্রকার পুরোহিতের মত নমাগত হইয়া, গুধু পুরোহিতের প্রাপ্য লাভেই হৃদয়ে পরিতৃপ্ত রহে। কন্যা হৃদয়হারিণী শর- দিন্দু-রেখা, না কুষটগ্রস্ত পিঙ্গল।, কথার সহিত বৈদিক পুরোহিতের কোন নশ্বন্ধ নাই, বৈবাহিক পুরোহিতেরও কোন সম্পর্ক থাকিতে পারে না উভয়েই যজমানের মান হিতৈষী। বিবাহের অনুষ্ঠানে, আপনার উপযুক্ত সংস্থান এবং যজমাঁনের জাতি মান, ইহাই উভয়ের একমাত্র

চিন্তার কথা বহুবাজী বৈদিক পুরোহিত যেমুন* ধজমানবর্গের নাম, ধাম, গোত্র পরিচয় এবং ক্রিয়াকর্ম্ের বিবিধ বিবর্ণ খাতায় লিখিয়া রাখিয়া সর্দত্র তদৃষ্টে মর মত উপস্থিত হন ; বহুবিরাজী বৈবাহিক পুরোহিতও, ঠিক্‌ ' নেই দৃষ্টান্তেরই অনুনরণে, আপনার বিবাহিতা! ভার্য্যা- দিকে খাতক জ্ঞানে, খাতাবহিতে তাহাদিগের নাম, ধাম পিতৃপরিচয় লিপিবদ্ধ করিয়া, কেবল বার্ষিক ৰৃত্বি-

হত

১৭৮ গ্রমোদলহরী |

রূপ বেতন-প্রীপ্ডির সময়েই তাহাদিগের সংবাদ লয়। ইহাতে কখনও কখনও নিতান্ত মনস্তাপজনক বিপৎ- পাতেরও সম্ভাবনা হইয়া উঠে কারণ, মনুষ্য যত কেন কর্মকুশল হউক না, সময়ে সময়ে তাহার স্থতিভ্রংশ হওয়া অস্বাভাবিক নহে। সুতরাং পুরোহিত যদ্দি বুদ্ধির বিপাকে খাতার লিখিত নাম ধাম একে আর পড়িয়া, অথবা বয়মের দোষে তাহ! বিস্মৃত হইয়া, আপনাঁর জনের উদ্দেশ্যে পরের গৃহে যাঁইয়া উপস্থিত হয়, তাহা হইলে লোকনমাজে তাহার বড়ই বিপত্তি ঘটে এই রূপ ভ্রম-প্রমাদগ্রস্ত বৈদিক পুরোহিত মহজেই পারিয়া যাইতে পারে, কিন্ত ভ্রমমুগ্ধ বৈবাহিক পুরোহিতের পক্ষে নিক্ষুতি- লাভ সর্কত্র নিতান্ত সহজ কথা নহে।

তৃতীয় বৈতরণিক বিবাহ ।_ ইহাতে আনন্দ নাই, আমোদ নাই, উলুলুর শ্রুতিমধুর ধ্বনি এবং এয়োদিগের নূপুর-নিকণ কিংবা কঙ্কণ-ঝনৎকার প্রভৃতি কোন রূপ মঙ্গল্য শব্দ নাই? আছে শুধুই ছুই একটি পরিজনের অস্ফুট বিলাপ এবং কন্যার হাড়পাজর-ভান্কা অন্তু দীর্ঘশ্বান | বর-যমদ্বারে মহাঘোরে বিবাহের রাত্রি পার হইবে কি না, তাহারও বিশ্বাম নাই। তাহার €কোটরন্থ চক্ষু, চারিদিকের ছ্ুলিত চর্ম্মে একবারে ঢাকা

বিবাহ কত প্রকার।

পড়িয়া, পাতাঢাকা আইদের মত কখনও একটুকু মিটি মিটি ভ্বলিতেছে; গাল ছু'খানি দন্তের আশ্রয়বিরহে পরস্পর নংলগ্ন হইয়া! লারিন্দ! অথব।'নারঙ্গীর মধ্যতাঁগের উপমাস্থল হইয়াছে; মাথাটি স্কন্ধের উপর আর তিষ্টিতে না পারিয়া, একটা গুক্ষ অলাবুর ন্যায়, দুইটি হাটুর মধ্যস্থলে আগিয়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে ; ললাটের দুইটি নিকটস্থ নিবু নিবু আলোতে অলাবুর উপর আধ' মোছা! চুনের রেখার ন্যার প্রতীয়মান হইতেছে $ এবং সে শবশান-প্রতিম শোকাবহ স্থানে তিন চারিটি লোক দোনার পুতুলের মত সুদৃশ্য একটি বালিকাকে পত্টাস্বরে ঢাকিয়া,_তাহার পাশে চিতার আগুনের মত একটা আগুন হ্থালিয়া, যেন লজ্জা দুঃখে মাথা নোয়াইয়া, মন্ত্র- পাঠের অনুকরণে বিড় বিড় করিয়া কিছু একটা আৰৃতি করিতেছে যদি এই রূপ স্থলেও প্ররুত্তই তাহারা মন্ত্র পাঠ করে, তবে দে মন্ত্র, বিবাহের,_না বৈতরণীর ? আর, কতকগুলি প্রাণশূন্য পিশাচের এই রূপ নংঘটনও যদি বিবাহ নামের বিষয় হয়ঃ তবে বৈতরণী আবার "কি? বর মনে করিতেছেন ইহাই ভীহার বিবাহ। বন্ধুবান্ধব অথবা বিজ্ঞপ্রাতিবেশীরা মনে করিতেছে ইহা বরের বৈতরণী। অভিধান, উভয়েরই হৃদয়ের দিকে

১১৮০ গ্রমোদল্হরী।

দৃষ্টি করিয়া বিরুতির বিকট-ভাষায় শব্দ রচনা! করি- তেছে_-বৈতরণিক বিবাহ

চতুর্থ রূষোত্বর্ণ বিবাহ ।-_্ষোঁৎনর্গ শব্দটি শ্রাদ্ধের বিশেষণরূপেই আঁধারণতঃ ব্যবহৃত হইয়া থাকে কিন্তু . ইদানীং ইহ দেশবিশেষে বিবাহের বিশেষণরূপেও ভাষায় স্থান প্রাপ্ত হইয়াছে রৃষোঁতসর্থ বিবাহ ছুই প্রকার রৃষের ন্যায় বিপদাবহ অথচ বিষাণশুন্য একটি পশুর কাছে এক সঙ্গে বত্বতরীকল্পা চারিটি কন্যার উত্নর্গ, অথবা একটা বৃষস্যান্তী প্রগন্তা যুবতীর পাদ-পীঠে রূষকল্প রদ্ধ- মূর্খের প্রাণোত্র্গ | প্রাণিজগতে কিংবা মনুষ্যের গ্রারুত ইতির্ত্তে এই রূপ বিবাহের নাম গন্ধও নাই বলিয়া সামা জিক বিকৃতির বিডম্বিত কাহিনী হইতে ইহার বিশেষ বিবরণ দেওয়া আবশ্যক মনে করিলাম না।

পঞ্চম | 'দানগাগর বিবাহ ।_দানসাগর এই শব্দ টিও ৰষোত্বর্গ শব্দের ম্যায় এত দিন শ্রাদ্ধেরই বিশেষণ ছিল। কিন্তু ইদানীং পিতা মাত! উভয়েরই প্রতি শ্রদ্ধার ভাব মনুষ্যের চিত্ত হইতে অপসারিত হইন্তেছে, এবং শ্রদ্ধায় প্রবল ভাট! লাগ্রিতেছে বলিয়া, শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানও সঙ্গে বঙ্গে বিলুপ্ত হইতেছে বিশেষ্য না থাকিলে বিশে- ষণ থাকিবে কি লইয়া? দাঁনদাগর এই বিশেষণ শব্দও,

বিবাহ কত গ্রকার | ১৮১

এই হেতুই, বাধ্য হইয়া শ্রাদ্ধের সঙ্গ ত্যাগ করিয়াছে) এবং দেশে বিবাঁহরূপ বিশেষ্যেরই বিশেষ ঘট! দেখিয়া তাহার ক্কন্ধে যাইয়! আরূঢ় হইয়াছে কিন্তুন্উহা'র গায়ে শ্রাদ্ধের যে গন্ধ ছিল, তাহা! আতর গুলাবের সুগন্ধেও দূরীভূত হয় নাই উহার নব্য অর্থে এখনও যেই পুরাতন শ্রাদ্ধীয় অর্থই ফুটিয়! বাহির হইতেছে।

শান্ত্রে আছে ফে শ্রাদ্ধাদি কালে ভূমি, আন, জল, বস্ত্র প্রদীপ প্রভৃতি যোলটি বস্তর দানের নাম ষোড়শ দান। যে শ্রাদ্ধে এক মক্ষে এই রূপ ষোলটি ষোড়শের দান হইত, গ্রাটীনেরা তাহাকেই দানপাগর শ্রাদ্ধ বলিয়! বর্ণনা করিতেন | বিবাহে যোঁড়শী-দানই শ্রাদ্ধীর ষোড়শ দানের অনুকল্প | সুতরাং যেখানে বিবাহের একই উৎ- সবে) একই আসরে, একই বরের হাতে, এক সঙ্গে যোলটি ষোড়শীর শুভ-দান-কার্ধ্য নুসম্পরন্ন ই, মনুষ্যের ভাষা তাহাকে যে দাঁননাগর বিবাহ বলিয়া বর্ণন। করিবে ইহাঁতে বিল্ময়ের কথা কি? যেখানে এক ঘরের চারি পাঁচ ভ্রাভার অবিবাহিত কন্যারা, একই সুত্রে গ্রথিত হইয়া, একত্র এক জনের কাছে উৎস্থষ্ট হয়, লোকে বেখানেই দানমাগরের অনন্যপাধারণ অপূর্ব শোভা দেখিতে পাইয়া থাকে। কিন্তু পুর্বে যেমন দানদাগর

৮২ গ্রমোঁদলহরী।

শ্রান্ধও সমাঁজে নিত্য ঘটিত না, দানসাগর বিবাহও সেই রূপ এইক্ষণ নিত্য দৃষ্ট হয় না।

গুনিয়াছিআর এক প্রকার বিবাহ আছে, তাঁহার নাম প্রেমসাগর, এবং কাব্যে, দর্শনে, পুরাণে, বিজ্ঞানে” যোগে, ভোঁগে ভক্তিশান্ত্রে তাহারই বিশেষ আদর গুনিয়াছি, মে বিবাহে পুরুষের জ্বলন্ত প্রতিভা অবলা- প্রকৃতির অমিয়রাঁশিতে স্নাত হইয়া, জ্যোত্ম্নার ন্যায় সুখ-শীতিল হয়, এবং অবলার ম্বীভাবিক কোমলতা, পাদ- পাশ্রয়িণী লতার ন্যায়, পুরুষের পবিত্র আশ্রয়ে কুতার্থ হইয়া, কল নময়েই কুসুম-সৌরভে নুরভিত রহে। গুনিয়াছি, সে বিবাহে মহত্ব, মাধুরীর জন্য ভৃষাতুর হইয়া, অবলাতেই তাহার উপারনা করে, এবং মাধুরী পুরুষের স্বভাব-অঞ্জাত লমুজ্বল মহত্বেই তিষ্টিয়া৷ থাকিবার স্থান পাইয়া, আর এক মুদ্তিতে বিলাঁদিত হইয়া উঠে। শুনি- য়াছি, দে বিবাহে দু'টি প্রাণ, ছুইটি পক্ষীর ন্যায়, পৃথক পৃথক্‌ গিঞ্রস্বরূপ দুইটি গৃথগ্ভূত দেহে অবস্থিত রহিয়াও, অনুরাগের কেমন এক অলৌকিক আকর্ষণে একই নাম-, গ্রানে_এক হইয়া যাঁয়। অথবা ছুইটি শিশির-বিন্দু ্রাভাত- পদ্মের বক্ষঃন্থলে মিলিয়া মিশিয়া এক হইয়া গেলে, তাহার উপর যেমন অনন্তবিস্তারিত সুনীল আকাশের

বিবাহ কত প্রকার। সত

প্রতিবিশ্ব পড়ে, দল্পতির নেই একীভূত যুগলগ্রাণেও জগ- নয় অনন্তপ্রাণের অপরূপ এক'খানি আলেখ্য অহোরাত্র সেইরূপ শোভা পায়। গুনিয়াছি,*ন বিবাহে হৃদয় , মনের সমস্ত বৃঘি, প্রীতির লিল-সেকে সংবদ্ধিত হইয়া, প্রতিদিনই নৃতন শোভা নৃতন শক্তিতে বাড়িতে থাকে; এবং প্রেম ভক্তি, পরষ্গরের স্পর্শে স্বর্গীয় কান্তি লাভ করিয়া, মনুষ্যকে পৃথিবীতেই স্বর্গের পূর্বন্বাদ ভোগ করিতে অধিকার দেয় ইহাই নাকি ঞ্রেমরাগর বিবাহ, এবং পুরাতন হিন্দুর হর-গৌরী চিত্রেই নাকি ইহার পূর্ণ আলেখ্য। ইচ্ছা হয়, পৃথিবীর সর্কত্রই ইহার আনন্দময় উত্ব দেখিয়া প্রাণ জুড়াই। কিন্তু হায় ! ইহাঁও চক্ষে দেখিব না, বিবাহেও আমার প্রন্রত্তি জন্মিবে না। যাহারা “বীনার' বঙ্কার অথবা বৈতরণীর মন্ত্র শুনিতে ভালবানে, ভাহারাই যাইয়া বিবাহ করুকু $ জমি জ্ঞানা- মন্দ, যেমন আছি তেমনই একা রহিয়া, আমার এই শান্ত- হৃদয়ে অনন্তের অনন্ত দৌনর্ধ্য নিরীক্ষণে পরিতৃপ্ত রহিব।

বিজ্ঞাপন।

আপস

জীযক্ত বাবু কালীপ্রসন্ন ঘোষ প্রণীত নিম্নলিখিত পুস্তক বক

নিযলিখিত স্থানে প্রাপ্তব্য। প্রভাঁত-চিন্তা, নূতন সংস্করণ ( পরিবন্তিত রিবর্ধিত ) ১২ নিভূত- চিন্তা 2 ১৭ ভ্রান্তিবিনোদ ॥% ১২ মঙ্গীত-মঞ্জরী (ভ্তি-রনাত্মক গীতাবলী ) 1৭. (শিশুপাঠ্য পুস্তক) কৌমল কবিতা! হত না ৭১৪

আদর্শ (দেখিয়া লিথিবার বিবিধ পাঠ বড় অক্ষরে মুদ্রিত ) &*

বর্ণপাঠ (শিশুদিগের প্রথম শিক্ষার উপযোগী অতি সহজ-

বোধ্য সুখ-পাঠ্য পুস্তক) ** রা /১০ পুস্তক পাইবার ঠিকানা। "

কলিকাতা --২* নং কর্ণওয়ালিশ দ্রীট সংস্কত প্রেসডিপ্দিটরী। ২*১নং বেজল মেডিকেল লাইব্রেরী ৫৫ নং কলেজ গ্রীট, ক্যানিং লাইব্রেরী।

চাকা আরমাণিটোলা বাদ্ধব-কুটারে, প্রকাশকের নিকট এবং সমস্ত পরিচিত পুস্তকালয়ে। ] প্রকাশক-ঞ্ীহরকুমীর বন্গু।